Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || স্তুতি || শারদ 26য় গৌতম তালুকদার

maro news
T3 || স্তুতি || শারদ 26য় গৌতম তালুকদার

প্রতিদান

আমরা একটি কুকুর পুষি পমেডিয়ান।ওর নাম রেখেছি লিও। ওর যখন দেড় মাস বয়স তখন‌ থেকেই আমাদের কাছে,এখন নয় বছরের বেশী। বেবীফুড জলে গুলিয়ে ফিডিং বোতলে খাওয়াতাম। ছোটো বেলায় কাঁচা শাক সবজি খেতে বেশ পছন্দ করত। সকালে বাজার থেকে ফিরে ব্যাগ রাখতেই ছুটে এসে নিজেই ব্যাগের ভিতরে মুখ ঢুকিয়ে টেনে বার করতো সব। ওর পছন্দ গাজর,বিন,আলু বাঁধাকপি মটরশুঁটি এই জাতীয় কাঁচা সবজি আর দুধ । পাঁচ মাস বয়স থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়।ডাক্তারের কথা অনুযায়ী চিকেন আর চাল এক সাথে সেদ্ধ করে দুপুরে,রাতে দিতে শুরু করলাম। সেদিনের পর থেকে কাঁচা শাক সবজি খাওয়া ছেড়ে দেয়। বাইরে কোনো খাবার ওর কাছে যেন বিষ। সকাল বিকেল বাইরে থেকে ঘুরিয়ে আনতেই হবে এটাই আবদার। ঠিক ভোর পাঁচটা বাজতেই আমার ঘাটে লাফিয়ে উঠে আমাকে কু কু করে ডাকতে শুরু করবে। যদি সারা না দিয়ে চুপকরে থাকি তাহলে প্রথমে আমার পায়ে হাতে ওর পা দিয়ে ধাক্কা'বে তাও যদি সারা না দেই তাহলে আমার পিঠের উপর উঠে ঘারে আর কানের কাছে মুখ দিয়ে বা ওর সামনের পা দিয়ে আঁচড় দিয়ে টানবে।আবার কখনো বুকের উপর উঠে বসে শুয়ে পড়বে। তখন যদি বলি -এই বদমাস কি হয়েছেরে ? এতো তাড়াতাড়ি বাইরে যাব না,ঘোমা আরো পরে যাবো। অমনি রাগ দেখিয়ে আমার পায়ের কাছে বা খাটের কোনে মুখ গুজে চুপ করে থাকবে। চোখের কোনে জল দেখতে পাবো। অগত্যা আমাকেও উঠতে'ই হয়। নাম বলতেই খাট থেকে লাফিয়ে নেমে ছুটে যাবে দরজার কাছে। যেই বলি বেল্ট কোথায় নিয়ে আয়,তাহলে ল্যাজ নাড়তে নাড়তে ছুটে যাবে যেখানে বেল্ট রাখা হয় সেখানে কিন্তু,নিজে থেকে থেকে আনবে না। আমাকে এনে পড়িয়ে দিতে হবে।ওর জন্য আমার মনিংওয়াক হয় প্রতিদিন।বাইরে বেড়িয়ে পটি বাথরুম সেরে নেবে। কখনো ঘরে করবে না। প্রয়োজনে বাথরুমে বা দরজা খোলা পেলে বেড়িয়ে মেইন গেটের আশে পাশে করে চলে আসবে।কখনো কোনো জিনিস নষ্ট করে না। সকাল বিকেল ঘুরে এসে দুধ খাবে এর বাইরে কোনো কিছুই খাওয়ানো সম্ভব না। তবে ছানার সন্দেশ আইসক্রিম পেলে খুশি আনন্দে আত্মহারা হয়ে লেজ ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে নেচে দেখাবে।ভীষন মুডি ও। বাড়িতে আত্মীয় স্বজন এলে ওর জন্য ছানার সন্দেশ নিয়ে আসে। ও যাদের চেনে জানে তাঁরা কেউ যদি ভুল করে না আনে তাহলে তাঁকে পাগল করে ছাড়বে তাঁর ব্যাগ ঘেটে গায় উঠে এমন কি বকতে থাকবে,কেনো আনেনি। মন ‌খারাপ করে ঘরের কোনায় বসে মুখ গুজে থাকবে।ড্যব ড্যব করে তাকিয়ে থেকে বা রাগ করে খাটের নীচে অথবা টেবিলে নীচে গিয়ে লুকোবে। তখন ডাকাডাকি করেও ওকে বাইরে আনা যাবে না। সন্দেশ এনে দিলে তবেই বেড়িয়ে আসবে।এমন অনেক দিন হয়েছে ঘুরতে বেড়িয়ে মিষ্টির দোকানের সামনে দিয়ে যাবার সময় দাঁড়িয়ে পড়েছে। মিষ্টি না দিলে রাস্তার উপর বসে থাকবে কিছুতেই হাঁটবে না। তখন বাধ্য হয়ে ছানার সন্দেশ নিয়ে বাড়ি ফিরেছি বা সন্দেশ না নেবার কারণে ওকে কোলে তুলে নিয়ে আসতে হয়েছে। বাজারে প্রতিটি দোকানদার ওকে চেনে সে মাছ ওয়ালা থেকে দুধ সবজিওয়ালা সবাই।একদিন ওকে আমার সাথে না দেখলেই সবাই জিজ্ঞাসা করবে আপনি আজ একা কেন ? তখন বলতে হয় যা বলার। এমনিতে ও চুপচাপ থাকে তবে বাড়ির মধ্যে কিছু একটা শব্দ হলে অপরিচিত লোক বাড়িতে ঢুকলেই এমন চিৎকার শুরু করে দেবে চোর বদমাস পালাতে বাধ্য। কাউকে কামড়ায় না সে যদি ওকে দেখে কোনো প্রকার বিরক্ত প্রকাশ করে,বকা বা আঘাত না করে।অবশ্য পমেডিয়ন এই জাতের কুকুর কামরায় না শুধু তেড়ে যাবে ভয় দেখাবে। ও থাকাতে যেমন অনেক সুবিধা তেমন মাঝে মাঝে বিরক্ত ও লাগে,একা রেখে এক পা কোথাও বেড়নো যায় না। কোথাও যাবো বলে পা বাড়াবো অমনি আমার পিছু নেবে।ওকে সাথে করে নিয়ে যেতেই হবে। অফিস যাবার সময়ে বা কোনো কাজে বেড়াচ্ছি সেটা ও ঠিক বুঝতে পারে,তখন কোনো কথা নেই।আসলে পোষাক দেখেই বুঝতে পারে। অফিসের কাজে কোলকাতার বাইরে থাকলে ভিডিও কল করলেই ও ঠিক বুঝতে পেরে ছুটে আসে।ফোন ওর কানের কাছে ধরলে,কান নেড়ে আমার কথার শুনছে সেটা বোঝায়। সমস্ত রকম অনুভুতি আছে সব বুঝতে পারে কথা শোনে। খুব মিষ্টি স্বভাবের কিছুটা চঞ্চল আবার ভীষন অভিমানী। আমার পরিবারের প্রতিটি সদস্যের সাথেই খুব ভাব। আমার মা মায়ের সাথে যেমন ভাব তেমনি হিংসা মা যে বালিশ মাথায় দেবে যে চাদর গায়ে দেবে ওর সেটাই লাগবে,মা শুয়ে থাকলে মায়ের কোলের মধ্যে গিয়ে শোবে। আবার মা বকা দিলে তেড়ে যাবে মায়ের সাথে ঝগড়া করতে এমন সব কান্ড চলে। এদের কথা বলে শেষ করা যাবে না,একমাত্র ডগ লাভার,নিজেরা পোষেন তাঁরা এদের মর্ম বোঝে। অনেকেই এদের পছন্দ করে না। একথা বলতেও শুনি মানুষ খেতে পায় না এরা কুকুর পুষে বড়লোকি ফুটানি দেখায় অথচ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায় না এতো টুকুও সহযোগিতা করে না।কুকুরের জন্য কতো দরদ যত সব আদী ক্ষ্যাতা।মানুষ হয়ে মানুষের পাশে থাকে না পাষণ্ড স্বার্থপর। এমন ধরনের অনেক কথা অনেকেই বলে থাকে,শোনা যায়। কিন্তু,তাঁরা কি কোনোদিন বুঝবে এরা কতো প্রিয় হয় হতে পারে। এসব তাঁরা জানেন না আর কোনো দিন বুঝবে না ওরা কতোটা বিশ্বাসী বিশ্বস্ত। একটি ঘটনার কথা বলি- আমার চেনাজানা একজন নিঃসন্তান ভদ্রলোক। ওনার একটি কুকুর আছে জার্মান শেফার। ভদ্রলোকের সাথে আমার দেখা হলেই নানান কথা হয় আমাদের। আমার লিও ওনার জার্মান শেফার নিয়ে। ভদ্রলোক ওনার প্রতিবেশী গরিব অসহায় একটি ছেলেকে নিজের ছেলের মতো মানুষ করেছেন। ছেলেটি এখন সরকারি চাকরি করে বিয়ে করে সংসার করছে। বেশ কিছুদিন ভদ্রলোকের সাথে দেখা না হবার কারণে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে দেখি ভদ্রলোক আর ওনার স্ত্রী বার্ধক্যজনিত কারণে বিছানায়। জানতে পারি ছেলেটি এবং ওর বাড়ির কেউ ওনাদের খোঁজ নেয় না। উপরন্তু ঝামেলা মনে করে। কুকুরটির এখন অনেক বয়স হয়ে গেছে তবু ওদের টেক কেয়ার করেই চলছে। দিন রাত ওনাদের বিছানার পাশে বসে থাকে।এক মুহুর্তের জন্যে চোখের আড়াল হয় না। এখন ওনাদের ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া হয় না। একজন কাজের মাসি কোনো রকমে রান্না করে দিয়ে চলে যায়।এভাবেই চলছে কয়েক মাস। হঠাৎ ভদ্রলোকের স্ত্রী মৃত্যু হয় হার্ট অ্যাটাকে। কুকুরটি ওর পালিত মায়ের শোক ভুলতে না পেরে খাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়ে বিছানা নিয়েছে। ঘরের দেয়ালে টানানো ভদ্র মহিলার ছবির দিকে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আর দু'চোখের জলে ভাসে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register