Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গদ্যানুশীলনে সুব্রত সরকার

maro news
গদ্যানুশীলনে সুব্রত সরকার

স্লেট

এক ডজন বর্ণ পরিচয়, এক ডজন স্লেট ও তিন বাক্স চক পেন্সিল কিনল ব্রতীন। বর্ণ পরিচয় বইটার ল্যামিনেশন করা মলাটে বিদ্যাসাগরের ছবিটা জ্বলজ্বল করছে। আদিবাসী মায়েদের সান্ধ্য ক্লাস শুরু হচ্ছে। মায়েরা পড়ালেখা শেখার জন্য নাম লিখিয়েছে ন'জন। স্কুলের দুই দিদিমণি পর্ণা ও অষ্টমী। পর্ণা বলছিল, "দাদা আরও দুজন পরে আসবে। তুলসী সরেন এর ভাইয়ের বউ মালতী মাড্ডি আর সুখিদির শ্বাশুড়ি লতা বাস্কি।" ব্রতীন বই, স্লেট, চক পেন্সিলগুলো দিদিমণিদের দিয়ে বলল, "স্লেটগুলো ক্লাসে দেবে। ওরা এখানে এসে লিখবে। তারপর স্কুলেই রেখে দিও। বাড়িতে নিলে নষ্ট করে ফেলতে পারে।" সপ্তাহে দুদিন ক্লাস। মায়েরা আসছে। অ আ,ক খ শিখছে। লিখছে। ক্লাস শেষ হলে স্লেট জমা দিয়ে চলে যাচ্ছে। এই মায়েদের আব্দার ছিল, "দাদা, আমাদেরও পড়ালিখা শিখা। নাম লিখা শিখব।" ওদের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা ব্রতীনের স্কুলে পড়ে। এটা ঠিক স্কুল নয়, সহায়তা কেন্দ্র। সাপোর্ট সিস্টেম। বাচ্চাদের সাথে সাথে এবার মায়েদেরও ইচ্ছে হয়েছে পড়বে। পড়ালেখা শিখবে। নিরক্ষর থাকতে বড় লজ্জা!.. ব্রতীন আজ কলকাতা থেকে দুশো কিলোমিটার দূরের এই রাঙামাটির গ্রামে চলে এসেছে। ক্লাস শুরু হবে একটু পর। পরিশ্রান্ত মায়েরা পড়তে আসছে। সারাদিন মাঠে- ঘাটে, বাগানে-লজে, ঘরে- উঠোনের সব কাজ সেরে ওরা পড়তে আসছে। একটু পড়ালিখা শেখার কি আগ্রহ! দুই দিদিমণি চলে এসেছে। রোলকল শুরু হল। পর্ণা জোরে জোরে বলছে," তুলসী সরেন।" "হ্যাঁ দিদি।" হাত তুলে উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। "দীপা টুডু।" "হ্যাঁ দিদি।" "সুখদি বাস্কি।" "হ্যাঁ দিদি।" ব্রতীন পর্যবেক্ষক এর এই আনন্দ ভীষণ ভাবে উপভোগ করছে। ছবি তুলল, বন্ধুদের পাঠাবে। ওর অনেক নতুন নতুন বন্ধু, প্রিয়জন তৈরি হয়েছে এই স্কুলকে কেন্দ্র করে। তাঁরা খুব খুশি হয় এই ছবিগুলো দেখে। ব্রতীনকে ধন্যবাদ ও উৎসাহ দিয়ে বলে, "এটা একটা দারুণ কাজ হচ্ছে। এগিয়ে চলুক অন্যভুবন। আমরা আছি। " ক্লাস চলছে। অষ্টমী জবা কিসকুর স্লেটে 'ন ও ণ' লেখা শেখাচ্ছে। পর্ণা ছবি হেমব্রমের স্লেটে 'আট' লেখা শেখাচ্ছে। ব্রতীন দেখছে। শুনছে। বেশ একটা ভালোলাগার মধ্যে থাকতে থাকতে হঠাৎ ওর চোখদুটো আটকে যায় সোনামণি টুডুর স্লেটটার দিকে। এই স্লেট সোনামণি কোথায় পেল? এই স্লেট তো ব্রতীন দেয় নি!.. ব্রতীন এগিয়ে গিয়ে পর্ণাকে বলে, "ও এই স্লেট কোথায় পেল?" পর্ণা হেসে বলল, "দাদা, ওরা বাড়িতে লেখা প্র্যাকটিস করবে বলে লক্ষ্মীবাজার থেকে কিনে এনেছে?" "তাই! ওরা মানে?" "সোনামণিদি আর চুড়কিদি।" সোনামণি, চুড়কি দুজনেই তখন এক অজানা ভয়, লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকে। ব্রতীন বলে," সত্যিই তোমরা বাড়িতে লেখা প্র্যাকটিস করতে চাও?" "হ্যাঁ দাদা, বাড়িতেও লিখা করব। তালে আরও জলদি জলদি পড়া শিখা হব্বে।" ব্রতীন শরমে মরে যায়! ছিঃ ছিঃ আমি ভেবেছিলাম, ওরা বাড়িতে স্লেট নিয়ে গেলে ভেঙে ফেলতে পারে! নষ্ট করে ফেলতে পারে!.. হায়!.. কাজ করার এটাই আনন্দ!..করতে করতে কত কিছু শেখা হয়ে যায়!.. স্কুলের দরজা দিয়ে হাসি হাসি মুখে মায়েরা ক্লাস শেষ করে চলে যাচ্ছে। আজ ওদের ব্যাগে বর্ণ পরিচয়, চক, স্লেট মোছার ন্যাকড়া ও আস্ত একটা স্লেট!.. ব্রতীন দুই দিদিমণিকে নিয়ে গেটের কাছে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ চোখে দেখতে লাগল এই সব আলোর পথযাত্রীদের!.. ***
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register