Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

প্রবন্ধে সুস্মিতা অধিকারী

maro news
প্রবন্ধে সুস্মিতা অধিকারী

জগদ্রামী রামায়ণ -এর চারকথা

পূন্যভূমি ভারত,ধর্ম ও সংস্কৃতির পীঠস্থান। ধর্ম ও সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে ভারতের সভ্যতা। আর এই ধর্ম-সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হলেন এই দেশের সিদ্ধ সাধকগন। আমাদের এই দেশে অনেক সাধকগন জন্মেছেন। এরকমই একজন সাধকের নামের সঙ্গে আমরা খুবই পরিচিত,  যিনি জন্মগ্রহন করেছিলেন এই বাংলার মাটিতে এক প্রত্যন্ত গ্রামে ধর্মনিষ্ঠ ব্রাহ্মণ পরিবারে। তিনি হলেন সাধক ও কবি জগদ্রাম রায়।
বর্তমান বাঁকুড়া জেলার অন্তর্গত মেজিয়া থানার ভুলুই গ্রামে তাঁর জন্ম ( পঞ্চকোটের রাজা রঘুনাথ নারায়ণ - এর অধিকারে তখন ছিল ভুলুই গ্রাম)। পিতা রঘুনাথ রায় ও মাতা শোভাবতী। তিনি নিজেই তাঁর পরিচয়ে বলেছেন -
'বিপ্রবংশে বন্দ্যঘটী        ভুলুই গ্রামেতে বাটি
              পরিপাটি করি সমাদারে।
ভাবি রাম জগদ্রাম     কাব্য করে অনুপান
                যমধাম গমন নিবারে।'
অষ্টাদশ শতাব্দীর রামায়ণ অনুবাদক হিসেবে জগদ্রাম রায় ( জগৎরাম)-এর নাম উল্লেখযোগ্য। জগদ্রামের বড় ভাই জিতরামের আদেশেই এই অনুবাদ কর্মে তিনি প্রবৃত্ত হয়েছিলেন- এ কথা তাঁর কাব্যেই পাওয়া যায়। কবি ও তাঁর জ্যৈষ্ঠ পুত্র রামপ্রসাদ রায় যৌথ প্রচেষ্টায় কাব্যটি রচনা করেছিলেন। এই কবিদ্বয়ের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হল অদ্ভুত ও অষ্টকাণ্ড বিশিষ্ট " শ্রী অদ্ভুত রামায়ণ" যা জগদ্রামী রামায়ণ নামে পরিচিত। কবি বাল্মীকির রামায়ণ অনুসরণ করেননি তিনি করেছিলেন অদ্ভুত ও অধ্যাত্ম রামায়ণের অনুসরণ।
কবি জগদ্রাম রায় আটকাণ্ডে তাঁর রামায়ণ কাব্য রচনা করেছিলেন। তাঁর কাব্যে কাণ্ড গুলির নাম দিয়েছিলেন - আাদিকাণ্ড, অযোধ্যাকাণ্ড,  অরণ্যকাণ্ড, কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড, সুন্দরকাণ্ড, লঙ্কাকাণ্ড, পুস্করকাণ্ড এবং উত্তরকাণ্ড। কিন্তু   অনেকের মতে কাব্যে 'রামরাস' অংশকে যুক্ত করেছেন তাই নয়টি কাণ্ড বলেও মনে করা হয়ে থাকে। রামায়ণের চিরাচরিত রূপের প্রতি রামায়ণ অনুরাগীরা চিরদিনই শ্রদ্ধাশীল কিন্তু কবি সেই রীতি ছেড়ে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে এই অপূর্ব আখ্যান কাব্যটির রচনা করেছিলেন।
এই কাব্যের প্রথম প্রকাশক কাশীবিলাস বন্দোপাধ্যায়। তিনি এই কাণ্ডটির নাম দিয়েছিলেন ' অদ্ভুত অষ্টকাণ্ডে সম্পূর্ণ রামপ্রসাদী জগদ্রামী রামায়ণ'। যদিও এই নাম গবেষক ডঃ পঙ্কজ কুমার বন্দোপাধ্যায় মেনে নেননি। যাইহোক সে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়ে আলোচ্য কাব্যটির কথায় আসি।
রামায়ণের মূল বিষয় রাবণ বধের নিমিত্ত রামচন্দ্রের যুদ্ধ বিগ্রহের প্রস্তুতি এবং যুদ্ধ   ঘোষণা। কিন্তু জগদ্রামী রামায়ণে বেশ কিছু ব্যতিক্রমী দিক আছে তা হোল পুস্করকাণ্ড। যা অন্য কোনও রামায়ণে নেই। জগদ্রাম রায় এই কাণ্ডে সহস্রস্কন্ধ রাবণ বধ ও সীতার মহাকালি রূপধারণ ও তার প্রলয়ঙ্করী নৃত্যের কথা বর্ণিত করেছেন। এই প্রসঙ্গে সভার মাঝে মাঝে সীতার হাসি, হনুমানকে রামের আত্মগীত কথন এসব নানা কাহিনী এসেছে। এরপর দেখি কাব্যটি বিভিন্ন অংশে আলোচিত করেছেন। যেমন--ভূষণ্ডীকাক উপাখ্যান, শ্রীমতী সংবাদে নারদ পর্বত উপাখ্যান,  অবিচার যজ্ঞ, সুলোচনা উপাখ্যান এছাড়া রামরাস অংশটিও। প্রতি জায়গাতেই তাঁর ভক্তি শ্রদ্ধা,  কবি কল্পনা ও প্রেম ভাবনা প্রকাশ করেছেন। তাই প্রতিটি পাঠককে ভাবে বিহ্বল হতে হয়।
রামায়ণের কাহিনী প্রতিটি মানুষের  (পাঠকের)কাছেই আকর্ষনীয় বিষয়। কিন্তু বর্তমান  সময়ে তা যেন একেবারে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে।এছাড়া একথা বলা যেতেই পারে মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে চর্যাপদ থেকে শুরু করে মনসামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, প্রভৃতি বিষয়গুলি যেভাবে স্থান পেয়েছে ' জগদ্রামী রামায়ণ' কিন্তু আজও উপেক্ষিত। তবে সাহিত্যে স্থান না পেলেও মনে স্থান পেলেই আরও বেশি সফল হয়। আর সেজন্যই মেজিয়াতে কবির নাম অনুসারে একটি মহাবিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে যার মধ্য দিয়েই তিনি অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন। মেজিয়ায় অনুষ্ঠিত বইমেলার মঞ্চ কবির স্মরনেই  করা হয়ে থাকে তা যেন আরও দীর্ঘজীবী হয়। আর এভাবেই যেন আরও বিস্তারিত হয় জগদ্রাম রায় ও তাঁর "জগদ্রামী রামায়ণ"।
পরিশেষে বলা যেতেই পারে এই সাহিত্য যেন কোনও দিন আড়ালে থেকে না যায় সে দায়িত্ব নিয়ে আমাদের ও আগামী প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। গবেষকবৃন্দ আরও নতুন নতুন তথ্য খুঁজে বের করুণ যাতে এ সাহিত্যকীর্তি মানুষের মনে আরও বেশি জায়গা করে নিতে পারে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register