Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সম্পাদকীয় ভজন দত্ত

maro news
সম্পাদকীয় ভজন দত্ত

রান্না রান্না খেলা

জায়গার জিনিষটি কি আর জায়গায় নেই! আরে হাতের ঐটাই তো আর হাতে নেই!ছোঁয়া-নাড়া ফোন টিপেটিপে আর স্ক্রোল করে পুরোনীলে ঢুকে যাচ্ছে দীর্ঘজীবী! স্মার্ট হয়ে, ম্যালা ফেঁচফেঁচ করে,কাঁদুনি গেয়ে মিডিয়ার কীর্তনাদি  শুনে নিচ্ছেন সব আম-আম পাব্লিক। শতকরা হিসেবে সকলেই স্ব! স্ব-সন্তোষ পান। আজাদির মাসে দিনকতক আমাদের দেশপ্রেম হুদকে ওঠে!তারপর আবার যেই কে সেই! দেওয়ালে দেওয়ালে লেখা হয় স্টে বিন্দাস ইয়ার দিস ইজ পাগলাতন্ত্র!ঘেঁটে ঘেঁটে খানে কা চিজ হ্যায়! হুঁ হুঁ বাব্বা!

খিল্লির বাজারে সিটির আওয়াজে ভরে উঠছে শূন্যের ঘর । এখন ফুললি বিশ্বপ্রেম চলছে।যে কোনো কোণায়  বসে বসেই অ্যাঞ্জোলিনা সঙ্গমস্বপ্ন পুরো ফ্রি! দুষ্টু ছেলেটি তাই দেওয়ালে লিখে রাখছে দিওয়ানাপন, " বি মাই পিএনবি আই উইল বি ইওর মোদি। "

ভারতছাড়ো-বিশ্বজোড়োর দ্বিতীয় পর্ব জমে ক্ষীর। মালিয়া বা কালিয়া, নীরভ বা সরভ সব নেতা বা পিতা পটিয়ে পগারপার হয়ে যাচ্ছেন। আর পাব্লিক সব হাততালি দিয়ে বিশ্বজোড়া নিঃস্ব হয়ে স্বচ্ছ হয়ে যাবেন! ম্যাজিক ইয়ার! যো জিতা (পড়ুন, লুটা) ওহি সিকন্দর!এরা তামাম ভারত খেয়ে হজম করে দিতে পারে সুলভে! ইয়ে গুলিস্তাঁ, ইয়ে বাগ, ক্যা জানে উনকা খোদা না রাম না রহিম! এক পার্সেন্টে চেটেপুটে নিচ্ছে তিয়াত্তর পারসেন্টের আমদানি!রপ্তানি হয়ে যাচ্ছে এত স্বচ্ছতায় যে মাছিও গন্দেগি ভুলে যাচ্ছে। আর আম আম আদমি সব কিছু জিবি ফিরির নেট পাওয়ার জন্য মিসকল মিসকল খেলছি। গুরু,একশ তিরিশ কোটির দেশ, মারো, মারো, দু- একজন। আর ওদের ভাগিয়ে দাও, আর মারো। মারানো  ছাড়া আম আদমির কোনো ইতিহাস নেই হে কত্তা।  তাপ্পর,বাঘা বাঘা অঙ্কের অর্থ দিয়ে লোক পুষে, হিসেব কষিয়ে দেখিয়ে দাও। তোমার আর কী, কেন এত ঘ্যানঘ্যান! কেন এত ফাটছে তোমার? প্রশ্নেই তেল নিয়ে, মুখে পাউডার,ঠোঁটে রঙ লাগিয়ে, টিভিতে ঘন্টা কতক শেখানো কাশি, ঝেড়ে কাশো টপ টু বটম। তোমার তো মারা গেল মোটে সাতশ পঁয়তাল্লিশ। তো ভোটের ভটভটি চেপে নাও। পিছনে লিপিস্টিক পরা বউ,সামনে টাইপরা বাচ্ছা। চালাও ভটভটি তেল ফিরি। এ্যাকাউন্টে মাল ঢুকলো বলে...

তের নদী বারো খাল তো আর একদিনে হয় না! কুমির আসে কি পাগলাঘন্টি পরে? আসে না। আপনা স্বপ্ন একঘর,একটি ঘর। সে তো ঘর ঘর কি কাহানি। ব্যাঙ্কে গেলেই ঘর্ঘর আওয়াজে শত কাগজে সাইন হলে তব্বে আসে ঋণ।মিনিমাম ব্যালেন্সের খেলাতেই নাফা! আপনি ঋণী হবেন!  কত লক্ষ তার নিয়ম! ঘরের ঘটিবাটি কবেই হাওয়া তাই বন্দি হয়ে থাকে ওদের লকারে সব জীবনের বীমা। হুঁ হুঁ বাওয়া!  ঋণ দেওয়া কি মুখের কথা! পাব্লিকমানি বলে কতা!  কত মণ তেল পুড়লে পরে আম আদমির স্বপ্নে নাচে রাধা। আর গব্বর হাসতে হাসতে আদেশ করেন, নাচ বাসন্তী, নাচ। গব্বররাজ! ওদের জন্য কোনো কানুন নেই কালা।সব ফরসা,ফরসা, ননী খাওয়া চেহারা।  এক আর এগারোর ফারাক নেই। আজাদি কি শুধুই  বড়লোকদের জন্য সব তেল নিয়ে বসে থাকে! চাঁদিকা চপ্পলে মেলে না এমন কিছু চিজ নেই। কে যেন বলেছিলেন,"ইহা হর ইনসান বিক যাতা ভাইয়া,  সির্ফ ভাও অলগ অলগ হ্যায়।" ইমান সওদা হয়ে যাচ্ছে ভোগে আর লালসায়। কেউ বাদ আছেন? আছেন যাঁরা, তাঁরাই বা আর কদিন থাকবেন? যেখানে ধর্মাবতার স্বয়ং ঢিস্সুমে খাল্লাশ হয়ে যান, সেখানে আপনার-আমার কন্ঠে ন্যায় শব্দটি লুকানোর জায়গা তো খুঁজবেই। হে জিহ্বা, বিনীত অনুরোধ, জিহ্বাগ্রবর্তী হয়ো না। তবুও কে শোনে কার কথা?  বিদ্রোহ হয়।

দেওয়ালে দেওয়ালে যতই লিখে রাখা হোক না কেন "স্টে বিন্দাস"।বিন্দাস তো থাকা যায় না।দিলে ঢিপঢিপ তো হয়ই। হচ্ছে এদিকওদিক।পদযাত্রীদের পা রক্তাক্ত হচ্ছে,যুক্তিবাদী নারী-পুরুষেরা গুলিবিদ্ধ হচ্ছে, কাউকে আত্মহননে বাধ্য করা হচ্ছে, রোজ রোজ কৃষকদের আত্মহত্যার,ধর্ষণের খবর করে মিডিয়াও যখন ক্লান্ত তখন কতিপয় মানুষ হলেও পাশে এসে দাঁড়ান। তাঁদের জিহ্বাগ্রভাগ ক্রমশ খর হয়। সত্য প্রকাশিত হয়। ভারতমাতার পায়ে এত এত ফোস্কা,তা ফেটে রক্ত ঝরছে। আর জয়- জয় বলে মানুষ এই যে তার চোখের জল মুছিয়ে,পা দুখানি বক্ষে চেপে ধরছে, সে কি কিছু কম কথা! ভাইরাল হওয়া সে ছবি দেখে কি আপনার আঁখিপাতে কি জল আসেনি?লুকিয়ে মোছেন নি চোখের জল? বুকের ভেতরটা টনটন করে উঠেনি?

ভরন্ত রাজসভায়, মহাভারতের দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ দেখেছিলেন একদিন তামাম বীরপুরুষগণ। তারপর কতজল বয়ে গেছে, বস গঙ্গাধরের মাথা থেকে। তারা কেউ 'শান্তির ছেলে ' নন, তারা যুদ্ধ করেছে আর স্বর্গের পথে বয়ে গেছে মহাভারত।আবার তো বাতাসে যুদ্ধং শরণং-এর গল্প শোনা যাচ্ছে। আবার যুদ্ধং! বুদ্ধ হাসছেন কবে থেকে তাঁর সকল অসূয়া সরিয়ে রেখে। এসো দেশের নামে প্রেম থেকে রফলা খুলে যুদ্ধু যুদ্ধু খেলি। আর জয় জয় বলে দুহাত তুলে পুরো বুদ্ধু হয়ে আঁধারের ঘরে প্রবেশ করি।

টিভির প্রাইম স্লট দেখুন। সিরিয়ালের চ্যানেল নয়,নিউজ চ্যানেলে চ্যানেলে চলছে পি এন পি সি। সোশ্যাল মিডিয়াতেও তাই। সে ফেবু কি হোয়াটসঅ্যাপ সব সমান। ওরাই পানসি চালাচ্ছেন, কোটি কোটি টাকা ওদের হাওয়ায় এসে যায়। তো, সে পানসি কি রাত- বিরেতের হিসাব রাখেে সেক্স,স্ক্যান্ডাল ও স্ক্যাম এগুলোই তো পাবলিকে খায় বেশি। মিডিয়া হাউসগুলো সব তাই ঘন্টা ঘন্টা আলোচনা করে সব ঘেঁটে ট করে পাব্লিককে খাইয়ে ভুলিয়ে দেওয়া হল দ্বিতীয় ভারতছাড়ো-বিশ্বজোড়ো সিরিয়াল। ললিত লবঙ্গ লতিকাতে বিজয়,নীরভ,কাঠুয়া বা উন্নাও আর সব ভুলে গেলাম। মধ্যবিত্তকে ভুলিয়ে দেওয়া তো সবথেকে সহজ।ওদের শুধু পি এন পি সি চাই।ওরা জানেন ব্যাঙ্কে তালাচাবি পড়লে  ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার। কিন্তু, কার টাকায় ক্ষতিপূরণ?  সে কি আপনার আমার টাকা নয়?  চোর চুরি করে যে টাকা নিয়ে গেল সে আপনার টাকা,যে টাকা ক্ষতিপূরণ পেলেন সে টাকাও আপনার। এদিকেও ঘ্যাঁচ ওদিকেও ঘ্যাঁচ। সামনেও, পিছনেও, লে ঠ্যালা! ঠ্যালার নাম এখন অনেক। যে যেমন পারে রাখছে তার নাম, নিজের মতন, আপন করে। তবে এ বিশ্বে ঠ্যালার কোনো বিকল্প নেই। নিজের ভার ওঠাবার জন্য ঠ্যালা চলছে। তার কত রকম ব্যবহার, মূল্য,  তা নিয়ে ধামাকা চলুক। একবিংশ শতকেও পয়সা দিয়ে  মানুষকে দিয়ে জানোয়ারের মত টানানোর মানসিকতা নিয়ে যতই বিতর্ক থাক, তার উপযোগিতার সূত্রে যতই গিট পাকাক, সে গিট ছাড়াতে গিয়ে কিছুটা সময় তো কাটবে, সেই বা কি কম!চা, তেলেভাজা থেকে আরম্ভ করে সব রকম শিল্পেই তো হয়ে গেছে ! আর সে সব শিল্পে বিনিয়োগের মউ সম্ভবনা কি আছে? বেকার ভাইপো-ভাইঝিদের তো বাঁচতে হবে,না কি?  তবে তারা টেনেটুনে হলেও বাঁচুক।অন্য কিছু টানার থেকে তো, তা হাজার গুণ ভালো। বাঁচতে দিন ওদের। আপনার কি, ওরা সব সৎপথে কর্ম করে খাক। বাঁচুক। বাঁচুক অনলাইন, বাঁচুক প্রিন্ট।সবরকমই বাঁচুক।কিন্ত প্রশ্ন করবেন না। যা ভাববেন, তা বলবেন না, যা দেখবেন  তা কাউকে বলবেন না। আমরা তো আর জানোয়ার নই, মানুষ।আর মানুষই তো সেই বিরল প্রজাতির প্রাণি,যারা মুখে এক আর মনে আরেক। মু মে রাম নাম বগল মে ছুরি - কথাটা তো আম আদমির কথা। কেনো বুদ্ধিজীবী কথাটি বললে, ঘুরিয়েই বলতেন। এই থাক, সে কথা বাদ দিন। সেসব নিয়ে ভেবে আমাদের কি কম্ম বলুন? তারচে বরং চলুন আপনি-আমি 'আতঙ্ক' সিনেমার সেই  "মাস্টারমশাই" হওয়ার চেষ্টা করি। না হলে, যন্ত্রণার পথ ধরে হেঁটে চলুন।হাঁটলে পায়ে রক্ত তো ঝরবেই। সম্পূর্ণ দীন হয়ে যাওয়ার আগে সে রক্তে যদি মানুষের স্বচ্ছ-সুদিন বা সকলশ্রী আসে তবে আসুক। আসুন,তিয়াত্তরতম স্বাধীনতা দিবসের পার্টিতে আমরা সকলে নিজেদের কাটি, রান্না করি, একটু নুন বা ঝাল কমবেশি হলে নিজেরা কাটাকাটি করি।

 মা! মা, শুনছো আমরা এখন রান্না রান্না  খেলছি...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register