Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে দেবদাস কুন্ডু (পর্ব - ১৬)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে দেবদাস কুন্ডু (পর্ব - ১৬)

লড়াইয়ের মিছিল 

পর্ব -  ১৬

হঠাৎ মনে হবে এক টুকরো অরন্য। সেই অরন্যের গভীরে বসে আছে সুর্দশন পাল। সে সবে পঁযতালিশ পার করেছে। দশ বারো ঘন্টা সে এই আরন্যক পরিবেশের মধ্যে থাকে। এটা তার অফিস ঘর। গাছ পছন্দ করে সে। তাই আর্ট ডিজাইনারকে বলেছিল, ‘অফিসের মধ্যে একটা ফরেস্ট এনভারমেন্ট ফেলেভার রাখবে। চারদেওয়ালে শুধু গাছ আর গাছ। আলো গুলো সেভাবে ফিট করা হয়েছে যাতে অফিস ঘরে ফরেষ্ট ফেলেভারটা নষ্ট না হয়। বাল্য কাল থেকে সে গাছ ভালো বাসে। কিন্তু অর্থের অডাবে গাছ কিনতে পারে নি। তখন এর তার বাগান থেকে গাছ তূলে নিয়ে আসতো।বাড়ির ছোটো বারান্দায় কতো গাছ তার হাতে বড় হয়েছে। দু একটা ছাড়া কেউ তেমন ফুল দেয় নি। কিন্তু সবুজের সমারোহে তার চোখ তৃপ্তি পেত। কিন্তু টাইম ফুল গাছ ঠিক টাইমে সকাল বিকেল ফুটতো। ছোটো ছোটো লাল ফুল গুলো দেখে সে মুগ্ধ হতো। টাইম ফুল গাছ থেকে সে শিখেছে সময়ের কাজ সময়ে করলে তার একটা তৃপ্তি আছে যেমন তেমন আছে একটা সৌন্দর্য। যা মানুষকে একই সংগে আনন্দ আর শিক্ষা দেয়। এই মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির ইষ্টান জোনের ডেফলফমেন্ট অফিসার । কারন সে সময়ের কাজ সময়ে করেছে। টাইম ফুল তাকে এই শিক্ষা দিয়েছে। তার এই সাফ্যল্যের পিছনে টাইম ফুলের বড অবদান আছে। টাইম ফুল তাকে সময় জ্ঞান সৌরভ সৌন্দর্য মুগ্ধতা সবই দিয়েছে। তাই কাজের ফাঁকে সময় পেলে চলে যায় অরন্যে। গাছেদের প্রতি নিবিড় ভালোবাসার টানে সে চলে যায় গভীর অরন্যে। কতো বার যে সে পথ হারিয়েছে তা বলতে পারবে না। একবার পথ হারিয়ে একরাত গভীর অরন্যে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়েছে। ভোরে এক আদিবাসী রমনী তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছে। সেই রমনী কি কপাল কুন্ডলা ছিল? সে কি বলেছিল, ‘পথিক তুমি পথ হারিয়েছো? কিন্তু জীবনের লড়াইয়ের রক্তাক্ত দিনগুলি তাকে পথ দেখিয়ে সাফ্যল্যের এই সিংহাসনে বসিয়েছে। আজ বড মনে পড়ছে রতনের কথা। দুমাস টিউশন ফি দেয় নি। বলেছিল বাড়িতে অসুবিধা আছে। সত্যি কোন সমস্যা ছিল না ওর বাড়িতে। ওর বাবা ঠিক সময়ে টিউশন ফি দিয়েছে। সেই টাকায় নর্থ স্টার জুতো কিনেছে পা তুলে তা দেখিয়ে ছিল। তার মাথার ভিতর হঠাৎ আগুন জ্বলে উঠে ছিল। চেয়ার ছেড়ে উঠে রতনের গালে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা চড় মেরেছিল। ওর বাবা মেরে ছিল আরও নির্মম আর ভয়ংকর। নার্সিংহোমে ভর্তি করাতে হয়ে ছিল। কতো ছাএ টিউশন ফি দেয় নি। তাদের বাড়িতে হানা দিতে হয়েছে কাবুলিয়ার মতো। মনে হয়েছিল পড়াশোনা শেখাটা একটা দায় যেন। পাশে দুটো নতুন কোচিং গজিয়ে উঠলো। তীব্র কমপিটিশন।কে কতো কম টাকায় পড়াতে পারে। সায়েন্সের ছাএ হয়ে তাকে পড়াতে হচ্ছে ইংরেজি বাংলা ভূগোল। এখানে নিম্নবিত্ত মানুষের বসবাস। আলাদা আলাদা সাবজেক্ট পড়ার জন্য পৃথক টিচার দিতে পারে না তারা। কতো টাকা দেবে? এক শিক্ষকের কাছে সব সাবজেক্ট পড়তে চায়। লড়াই করেই চলছিল কোচিং। সরকারী চাকরী পরীক্ষা দিয়েছে।সাফল্য লাভ হয়নি। হঠাৎ চালু হলো সার্ভিস ট্যাস্ক। তার কোচিংয়ের নামে চিঠি এলো। ভয়ে গুটিয়ে দিল কোচিং। নাট বল্টু কারখানায় ম্যানেজারের চাকরি নিলো কিন্তু বেশি দিন টিকলো না।শ্রমিক ইউনিয়নের চাপে কারখানা বন্ধ হয়ে গেল। একটা পুতুল কারখানা চাকরি নিলো। এমন মন্দ কপাল। সেই চাকরি থাকলো না। মালিক হঠাৎ মারা গেল। পাঠ্যপুস্তক প্রকাশনির ক্যানভাসার হলো। স্কুল গিয়ে শিখকদের বই দেখাতে হয়। শিখকরা আগেই বলে, ‘কি দেবেন? ফিরজ না মোটর ভমন প্যাকেজ? । শিখকদের এই লোভ অধপতন আর্দশ ঢূত হতে দেখে সে চাকরিটা ছেড়ে দিল। একজন শিখক বই য়ের কোয়ালিটি দেখবেন তিনি দেখছেন কোয়ানটিটি। নিজে দিল ধূপকাঠির কারখানা। তাতে লস খেল। তারপর একদিন কাগজে এই মালটিন্যশালান বীমা কোম্পানির এ্যড দেখে এপ্লাই করলো। ইন্টার ভিউ ভালো হয়েছিল। চাকরি হলো। কিন্তু এখানে ঘোড়ার চেয়ে দ্রুত ছুটতে হয়েছে তিন বছর। মার্কেট রিসাস করে প্ল্যান প্রোগ্রাম করে এগাতে হয়েছে। এজেন্ট নিয়োগ করা থেকে টেনিং দেওয়া। ফিল্ডে গিয়ে পার্টির সংগে মিট করা। মার্চের মধ্যে টার্গেট ফুলফিল করা – সে এক হমা যুদ্ধ। আজ সেই যুদ্ধ জয় তাকে ইস্টার্ন জোনের ডেভেলপমেন্ট অফিসার পদে বসিয়েছে। বেসরকারি বীমা কোম্পানি হিসেবে তার কোম্পানি সেকেন্ড পজিশনে আছে। আজ সে পেয়েছে মোটা স্যালারী গাড়ি দু হাজার স্কোয়ার ফুটের ফ্ল্যাট। এখন তার টার্গেট ইসটান জোনের রিজিওয়নাল অফিসার হওয়া। আজ সে একরকম প্রতিষ্ঠিত। মে আই কামিং স্যার? বিপাশা দাঁড়িয়ে। ‘কি ব্যাপার? ‘ইনটারকামে আপনাকে পাচ্ছি না। তাই ‘বল কি দরকার? ‘এক মহিলা আপনার সংগে দেখা করতে চাইছে। ‘কি নাম? ‘উনি নাম বলছেন না। ‘কেন? ‘বলছেন আপনাকে সারপ্রাইজ দেবেন। ‘সারপ্রাইজ! কে হতে পারে?, ‘আচ্ছা তুমি পাঠিয়ে দাও। বিপাশা চলে যাচ্ছিল। সুর্দশন বললে. ‘আচ্ছা বিপাশা তোমার ঘরে কে কে আছেন? ‘সবাই আছেন স্যার বাবা মা ভাই বোন। ‘তুমি মুখে সব সময় একটা হাসি ঝুলিয়ে রাখো। বাড়িতেও কি তাই? স্যার খুব কঠিন প্রশ্ন করলো তো। কি জবাব দেবে সে? আসলে স্যার জানতে চাইছে তার এই হাসিটা কতোটা প্রফেশন্যাল আর কতটা প্রানের? সে বলল, ‘স্যার বাড়িতে আমি খুব অশান্তির মধ্যে আছি। ‘কিসের অশান্তি? স্যার ভদ্র মহিলা অনেকখন দাঁড়িয়ে আছেন বাইরে। অন্যদিন আলোচনা করলে হয় না? ‘উনি অপেক্ষা করুক। আমি শুনবো। তোমার হাসি দেখে আমার অনেকদিন মনে হয়েছে এ ই হাসিটা মিথ্যে। এর পিছনে একটা যন্ত্রণা আছে। বলো কি যন্ত্রণা? ‘স্যার আমি একজনকে ভালোবাসতাম। তাকে খুন করা হয়েছে? , ‘মানে কি বলছো তুমি? ‘হ্যা স্যার। ছেলেটি ছিল স্কুল টিচার। ‘খুব ভালো তো। আই রেসপেকট দ্য প্রফেশন। তাকে খুন করা হবে কেন? আর কে খুন করলো? ‘আমার বাবা স্যার।, ‘ ‘হোয়াট? কি বলছো তুমি? ‘পুরো সংসারটা আমি চালাই। বাবার কোন কাজ ছিল না। আমি বিয়ে করলে কে দেখবে ওনার সংসার? ভাইতো ছোট। উনি বাধা দিয়েছেন। আমি বলেছিলাম বিয়ের পর সাহায্য করবো। তিনি বিশ্বাস করতে পারে নি আমাকে। নিজে হাতে সৌভিককে খুন করেছে বাবা। ‘তারপর? ‘এখন জেলে। আমি স্যার ওনাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি । আরন্যক পরিবেশে সুর্দশন পাল স্তব্ধ হয়ে বসে রইলেন। মানুষ এতো স্বার্থপর হতে পারে? হতে পারে এতো নিষ্ঠুর? ভাবা যায়! মহিলাটি ঘরে ঢুকলো। সুর্দশন টের পেলেন না। ‘হ্যালো’মহিলাটি বললেন। সুর্দশন নড়ে উঠলো। গলায় বিস্ময়, ‘চন্দ্রাবলি তুমি?
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register