Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব - ৪৮)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব - ৪৮)

সোনা ধানের সিঁড়ি

৮৩
মাঝে মাঝেই আমি একটা অন্ধকার ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ি। কেন ঢুকে পড়ি আমি অবশ্য ঠিক জানি না। একটা কারণ হতে পারে, অন্ধকারকে আমার কখনও কোনোদিন অন্ধকার বলে মনে হয় নি। অন্ধকার মানেই একটা আতঙ্ক, একটা হাড় হিম করা পরিস্থিতি ------- কখনও আমার মনে হয় নি। বরং অন্ধকার কখনও কখনও আমার কাছে একটা আলাদা স্বস্তি এনে দিত। আমি যেন লুকিয়ে পড়তে পারতাম। না, কোনো পালিয়ে যাওয়া ব্যাপার নয়। খুব দুঃখ হলে, মনে কেউ কখনও আঘাত দিলে প্রিয় বন্ধুর কাছে একছুটে গিয়ে যেমন সবকিছু বলে ফেলে একবুক কান্না উগড়ে দেওয়া যায় ; অন্ধকারের কাছে যাওয়া আমার ঠিক সেইরকম। 
অন্ধকারে পৌঁছে গোটা জায়গাটা নিজের মতো করে চষে ফেলি। পাক দেওয়ার সময় মনে হয় আমি যেন একটা নতুন কিছু করতে চলেছি। তারপর হঠাৎ করে থেমে গিয়ে খুব একচোট হেসে নি। এখানে তো আমার নতুন কিছু করার নেই। অন্ধকারই তো সব সাজিয়ে ঠিক করে রেখে দিয়েছে। সেই কবে থেকে তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব। আমি তো নিজেকে তার থেকে পৃথক কিছু ভাবি নি। সমগ্র অন্ধকার সে তো আমারই এক অংশের যোগফল।
একবার মাত্র তাকে দেখে কিছুটা থমকে গিয়েছিলাম। কিছুটা হলেও সেখানে ভয় মিশে গিয়েছিল। আসলে এই অন্ধকারে গা দিলেই কেমন যেন মনে হয়, পিছনের দিকে অনেকটা পর্যন্ত নজরে চলে আসে। তখন অন্ধকার আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে যায় একছুটে বেনেপুকুরের পারে। কত কত গাছ। একসময় প্রতিটা গাছ আমাকে তাদের নাম বলেছিল। আজ আর কারও নামই আলাদা করে মনে নেই। আসলে গাছের কথা ভাবলেই একসঙ্গে সবাই দলবেঁধে পরপর এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি। কিছুতেই ওদের বোঝাতে পারি না, পৃথিবীর কোনো কিছুই আমার কাছে কোনো বিভাগ নিয়ে আসে না। ঠিক এইসময়েই অামার হাতে আবার টান পড়ে। অন্ধকার আমাকে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয় আমাদেরই উঠোনে। দুয়ারে বসে দেখি গোটা উঠোন অন্ধকারে ঢুবে। একটু আগেই ওরা সবাই মেজো জ্যাঠার শরীর তুলে নিয়ে চলে গেছে। আজ তাই তুলসীতলায় মায়ের দেওয়া প্রদীপ জ্বলে নি। মাটির দুয়ারে বসে আমি কিছু দেখতে পাই না। সারাদিন যে আমি নিজেকে আগলে আগলে রেখেছি, এখন আমার সেই বাঁধ ভেঙে যায়। বুঝতে পারি একটু হলেও আমাদের বাড়ি থেকে আলো যেন অন্য পথে ঘুরে গেছে। আর সেই জায়গাটাই অন্ধকার যেন গিলে ফেলেছে। এই প্রথম অন্ধকারকে আমার ভয় লেগেছিল। আমি খুব কেঁদেছিলাম।
অন্ধকার কোনোদিন আমার বুকের কাছে উঠে আসবে আর আমি স্বাভাবিকভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারব না, এ আমি কোনোদিন কল্পনাতেও আনতাম না। একদিন নদীর ধারে বসে আছি। সন্ধে নামছে। দেখি কখন অন্ধকার আমাকে ছেয়ে ফেলেছে। আমার কেমন যেন মনে হলো, কেন অন্ধকার আলোর বিপরীতে বসবে ? কেন অন্ধকারেরও একটা নিজস্ব আলো থাকবে না ? আলো ছাড়া কিসের পরিচয়। আলোর দুয়ার খুলেই তো পরিচয় আসে। যে আলোকে অন্ধকার এসে গ্রাস করে তা কেন হবে আতঙ্কের ? আলোতে যে পরিচয়ের শুরু অন্ধকারের মধ্যে সেই পরিচয় যেন আরও পরিণতির দিকে এগিয়ে যেতে পারে। একটা নতুন সংজ্ঞায় যেন সংজ্ঞায়িত হতে পারে। অন্ধকার পর্ব হোক আরও কঠিন কিন্তু একটা ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register