Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে দেবদাস কুণ্ডু (পর্ব – ১৫)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে দেবদাস কুণ্ডু (পর্ব – ১৫)

লড়াইয়ের মিছিল 

পর্ব -  ১৫

কোটি টাকার মালিক হয়েও তার মনে সুখ নেই। সুস্থ্য মেয়ে রীনা। বিয়ে করে আনলো। আজ মাথা খারাপ। এতো বছর পর। অবাক লাগে সুশীলের। কখনো খায়। কখনো খায না। কখনো সারা রাত আলো জ্বেলে বসে থাকে। কখনো বলে, 'তুমি আর একটা বিয়ে করেছো না? কখনো কোথায় চলে যায়, থানা পুলিশ করে খুঁজে আনতে হয়। মানসিক রুগীর ডাক্তার দেখিয়ে কিছু সুবিধা হচ্ছে না। কে যে ওর মাথায় ঢোকালো যে সে ভালোবাসে বন্ধু নির্মলের বউ উমাকে ।বাস্তবিক কোন সেই সম্পর্ক নেই উমার সংগে। উমা একটু গায়ে পড়া মেয়ে। ছোট্ট একটি মিথ্যে সন্দেহ অশথ গাছের মতো রীনার মনে শিকড় বাকড় ছড়িয়ে দিয়েছে।সে এতো বুঝিয়েছে, তুমি যা ভাবছো, তা সম্পূর্ণ মিথ্যে। 'বড় বড় সাইকিয়াটিকও এই মনের জটিল অসুখ দূর করতে পারছে না। তাদের ওষুধে সাময়িক সুস্থ থাকে রীনা। ঔষূধ বন্ধ করে দিলে যেকে সেই অস্বাভাবিক আচরন শুরু হয়ে যায়। অথচ বাইরের লোকের সামনে একেবারে সুস্থ আচরন করে। তারা বিশ্বাস করে না রীনা মানসিক অসুস্থ। জীবন কি অদ্ভুত! কারো কারো জীবন বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে কতো সুন্দর। কিন্তু ভিতরে রয়েছে বিষের থলি। কখন ছোবল মারবে কেউ জানে না। লড়াই করে ভিখিরি থেকে রাজা হতে পারো। কিন্তু নিজের মতো জীবনকে সাজাতে পারো না। এখানে মানুষ অসহায়। 'ও সুশীলদা মাল নামাও।' সুশীলের চিন্তা ছিন্ন হয়। সে ভ্যান থেকে ধীরে সুস্থ নামে। কিন্তু জীবন থেকে বিষ কিভাবে নামাবে? নাকি মৃত্যুর সংগে দোসর করে চলতে হবে?
ঘরে ঢুকে সুশীল দেখে মা রান্না করছে। সুশীল জিজ্ঞেস করে, 'রীনা কোথায়? ' সে চলে গেছে'। মা বলেন। ' ' কোথায়? 'বাপের বাড়ি। 'কখন? ' সকালে। হঠাৎ? 'তোর বউ তো এমনই করে। আজ বুঝি মাথাটা আবার খারাপ হয়েছে।' ছোট মেয়েটা বাবার কাছে এসে দাঁড়াল। 'কিছু বলবি মা?' 'মা কোথায় গেল বাবা?' 'মামা বাড়ি।' 'আমাকে নিলো না কেন? কত দিন আমি মামা বাড়ি যাইনি। ' 'একটা দরকারে গেছে তো কাল এসে পড়বে।' 'সুশীল মনে মনে বলে, কবে আসবে কে জানে? শ্বশুর বাড়ি ফোন করে। শ্যলিক বলে সেখানে আসে নি দিদি। 'আসে নি? ' না। আসে নি দিদি। হালিশহরে শ্যালিকাকে ফোন করলো। সে বলল, সেখানে যায় নি। তাহলে গেল কোথায়? আবার থানা পুলিশ। আবার চিরুনি তল্লাশি। সুশীল রেগে গিয়ে মাকে বলে,' তোমাদের বলেছি ওকে বাড়ি থেকে বের হতে দেবে না। ' সে চেষ্টাও করেছি। আমি কি বউমার সংগে পারি?' ' রিমা কি কলেজ গেছে? 'হ্যাঁ। ফিরতে দেরি হবে। ' কেন? প্রাকটিক্যাল ক্লাস আছে। সুশীল দোতলায় উঠে আসে। ঠাকুর ঘরে ঢোকে। তার সামনে বসে। মনে মনে বলে তোমার এই লীলা কতদিন চলবে? ভক্তকে বিপদে ফেলে তুমি কী আনন্দ পাও বলো? আনন্দ। সেই আনন্দ আমি না তুমি পাও। ' কি রকম ঠাকুর? রীনা তোমার কে হয়? 'স্ত্রী। স্ত্রী মানে সারা জীবনের সংগী। তাই তো? হ্যাঁ। ঠাকুর। সে যখন হারিয়ে যায় তোমার কষ্ট হয় তাই তো? হ্যাঁ। তাহলে তোমার এবার কি কাজ? 'তাকে খুঁজে ফিরিয়ে আনা। তাই তো করি ঠাকুর। শোন স্ত্রী শুধু শরীর নয়। তার সংগে জড়িয়ে আছে প্রেম ভালোবাসা। যৌনতা বিশ্বস্ততা। তুমি মানুষ হয়ে একজন মানুষকে খুঁজবে না? খোঁজ খোঁজ। ঠিক তাকে পাবে। এই খোঁজার নাম জীবন। এই খোঁজার নাম আনন্দ। তার আগে একবার ভাবো রীনা কেন তোমার জীবন থেকে বার বার পালিয়ে যাচ্ছে? তোমার কোথাও পদস্খলন হয় নি তো? সুশীল ঠাকুর ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে। চটি পায়ে গলিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। পদস্খলন! পদস্খলন! মানে কি? পা হড়কে যাওয়া। সত্যি কি তার পা হড়কে গিয়ে ছিল?
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register