Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে আরণ্যক বসু (পর্ব – ৩)

maro news
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে আরণ্যক বসু (পর্ব – ৩)

রূপকথা পৃথিবীর - ৩

নেভেনি,নেভেনা মাটির প্রদীপ পথহারাদের ডাকে; দূর কোনো গাঁয়ে হাঁসুলি বাঁকের ছোট্ট সে খেয়াঘাটে। আজও চিঠি এসে প্রণাম জানায় ঘর আগলানো মাকে, ছ'টা রাজহাঁস বাড়ি না ফিরলে সূয‍্যি নামেনা পাটে....

সারাটা লেমন টাইম কমলদা আর আমার দিকে ফিরেও তাকাল না। আমার ভয় হচ্ছে ,যদি আমাকে তুলে নিয়ে ওই ব্যাটা গুটগুটে বেঁটে শ‍্যামলকে,যে বয়স ভাঁড়িয়ে ভাঁড়িয়ে খেলে যাচ্ছে ,তাকে নামিয়ে দেয় ? তাহলে তো আমি মুখ দেখাতে পারব না আর পাড়ায় ফিরে গিয়ে । যাই হোক , শ্যামল মিত্তিরের গানটা দেওয়ার আর সময় পেল না !আমার তো পুরোটাই মুখস্থ হয়ে গেল শুনতে শুনতে ।এবারে সেকেন্ড হাফ । মাইক বন্ধ। চারিদিকে তুমুল উত্তেজনা। ডানপিটে আসর এক গোলে হারছে। আর আমি আমার পিঠের উপর কমলদার বেতের বাড়ির কথা ভাবছি। ভাবতে ভাবতেই গো ও ও ও ল। আমাদের ছোট কানু কর্ণার থেকে প্রায় শূন্য ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে অদ্ভুতভাবে সুইং করালো বলটা। গোলকিপার পুরো ভ্যাবাচ্যাকা। যাক , সমতা ফিরল এইবার। এবার খেলা শুরুর দশ মিনিটের মধ্যে আমি দুটো গোল করলাম ঠিকই ,কিন্তু বড়লোকের বাউন্ডুলে ছেলের মত মিস করলাম চারটে ওপেন নেট । খেলা শেষে ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যেই ছাতা খুলে কমলদার সেকি নাচ মাইরি ! সাদা প্যান্টটা মুহূর্তেই কাদা লেগে একাকার কান্ড ! দর্শকরা মাঠে নেমে এসে আমাদের কোলে তুলে নিয়েছে । আমি শালা ক্লাস ফাইভের দামাল ! আমার কি কারোর কোলে চড়তে ভালো লাগে ? কোনোমতে নেমে ছটফট করতে করতে , দৌড়ে গেলাম মাইক্রোফোন যেখান থেকে বাজানো হচ্ছে সেইখানে। নিজের হাতে তুলে দেখলাম , এটা শ্যামল মিত্রের এবারের পুজোর রেকর্ড ।খবরটা তো মাকে দিতে হবে। জেতার খবরে মা যতটা আনন্দ পাবে, তার চেয়ে বেশি আনন্দ পাবে, আজকে সন্ধ্যায় পুজোর জামা কাপড় দিতে আসা আমার ন'মামা, মানে মনি মামাকে এই নতুন গানটা শোনাতে পারলে।আমি সেই ভেবেই আনন্দে আত্মহারা। পাগলের আনন্দ আর কাকে বলে ! খেলার শেষে পাঁঠার মাংসের ঘুগনি আর উনুনে সেঁকা পাউরুটি । ওমা, আজকে দেখি গেলাস ভর্তি দুধও হাজির ! আমাদের মধ্যে হেব্যি স্মার্ট স্টপার বংশী ককিয়ে উঠলো -- ও কমলদা, একগ্লাস দুধ খেলে আমার শরীর খারাপ হয়ে যাবে । আপনি অর্ধেকটা নিজে খেয়ে বাকি অর্ধেকটায় দু'কাপ চা মিশিয়ে দিন। আমরা হ্যা হ্যা করে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়লাম । আর গড়িয়ে পড়তেই আমি আর মুখ তুলছি না । কারণ , এক আশ্চর্য ঘাসের গন্ধ আমাকে মনে করিয়ে দিলো এটা আশ্বিন মাস, পুজো আসছে । মনি মামা আসছে বাড়িতে। মা আর মনিমামা-- এক অদ্ভুত যুগলবন্দী! দুই ভাই-বোনের আঙুলে আজ সারা সন্ধে হারমোনিয়াম বাজবে । কত রকম গান ! বাবা ফিরবে অফিস থেকে , আমি আর দিদি পাশের ঘরে পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে সেই সব গান শুনে কত রকম ফুটকড়াই কাটবো , আর হিহি করে হাসবো । আপাতত আমি ঘাসের গন্ধের মধ্যে ডুবে ভাবছি ,কমলদা আমাকে সাইকেলে করে বাড়ির সামনে পর্যন্ত পৌঁছে দেবে তো ? আমার স্কুলের ব্যাগটা ঠিকঠাক আছে তো ? আমি লক্ষ্মীপুজোর আগে বাড়িতে পৌঁছে মা'র চোখ পাকিয়ে বকুনি খাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে পারবো তো ?

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register