Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব - ৪৫)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব - ৪৫)

সোনা ধানের সিঁড়ি

৭৯
উত্তরের বাতাস গায়ে এসে লাগলেই মনে পড়ে যায় বসন্তদার চায়ের দোকান। সবেমাত্র সন্ধে হয়েছে। বড়দোকানের মোড়ে চায়ের দোকান। একটামাত্র বাল্ব জ্বলছে। গ্রামের মানুষজনরা মাঠ থেকে বাড়ি ফিরে হাত পা ধুয়ে সোজা মোড়ে বসন্তদার চায়ের দোকান। দোকানের ভেতর গোটা তিনেক বেঞ্চ। আমরা কয়েকজন বন্ধু একেবারে পিছনে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর চা আসছে আর সেই সঙ্গে বিড়ি। কবিতা নিয়ে আলোচনা চলছে। আমি অবশ্য কবিতায় নিজেকে সবটুকু ডুবিয়ে না দিয়ে গ্রামের মানুষগুলোর কথায় কান পেতে আছি। ওরা ওদের মতো করে একে অপরের সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছে। কারও কোনো তাড়া নেই। সারাদিন হাড় ভাঙা পরিশ্রমের পর এটা যেন ওদের কাছে একটা মুক্তির স্বাদ। কত সরল সহজ সাদাসিধে ভাবে বেঁচে থাকা। ওদের দেখে কতদিন মনে মনে ইচ্ছা জেগেছে চাষী হব।
৮০
সন্ধে নেমে আসা দেখতে কি ভালো যে লাগে! কিন্তু কখনই নিজের বাড়ির চারপাশে নয়। অন্য কোথাও, নিজের এলাকা পেরিয়ে কিছুটা দূরে হলেও তা আমার কাছে একটা অন্যরকম স্বাদ নিয়ে আসে।
কোনো গ্রাম থেকে কবিসম্মেলনের ডাক এলে আমি একপায়ে খাড়া। অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলে আমি বাসস্টপে এসে কোনো চায়ের দোকান খুঁজি। কখনও কেউ সঙ্গে থাকে আবার কখনও একাই চায়ের দোকানে বসে চা খাই আর সন্ধে নেমে আসা দেখি। কোনো কোনো চায়ের দোকান থেকে পুরোনো দিনের হিন্দি গান বেজে ওঠে। এমন একটা পরিবেশ আমাকে আমার জীবনের অনেক কিছু ফিরিয়ে দেয় কিছুক্ষণের জন্যে।
কখনও কখনও নিজে থেকেও কোনো গ্রামে চলে যাই। লোকে শুনলে হাসবে। হ্যাঁ, শুধুমাত্র সন্ধে নামা দেখতে চায়ের দোকানে বসে চা খেতে খেতে। যখন স্টেশনে এসে বসি তখন সন্ধে নামার আগে স্টেশন ফেলে রেখে কিছুটা হেঁটে যাই। চায়ের দোকান দেখে দাঁড়াই। রাস্তার গায়ে দাঁড়িয়ে চা খাই আর গ্রামের মানুষের যাওয়া আসা দেখি। খুব লোভ হয় ওদের জীবন দেখে। বেশ এরকম হতে পারতাম।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register