Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ছোটদের গল্পে সুব্রত সরকার

maro news
ছোটদের গল্পে সুব্রত সরকার

অপুর জন্য ভূতের গল্প

অপুর বায়না, “দাদু, তুমি একটা ভূতের গল্প লেখো না!” দাদু হেসে বলে, “আমি ভূতের গল্প লিখতে পারি না। আমি হাসির গল্প লিখতে পারি। ডাকাতের গল্প লিখতে পারি। জঙ্গলের গল্প লিখতে পারি। পাহাড়ের গল্প লিখতে পারি। কিন্তু ভূতের গল্প লিখতে পারি না!” অপু কিছুতেই শুনতে চাইছে না। মানতে রাজি নয় দাদুর একথা। ওর এক কথা, “দাদু, তুমি শুধু আমার জন্য একটা ভূতের গল্প লেখো। লিখতেই হবে তোমাকে!” মা-বাবা কত বলছে, “অপু অমন বায়না করতে নেই। তোমার যত বোকা বোকা আবদার। দাদু তো বলছে, দাদু ভূতের গল্প লিখতে পারে না। কেন শুনছো না সে কথা?” কিন্তু মাসিমণি বলে, “অপু দাদুকে ছাড়বি না। বল, ভূতের গল্প আমার চাইই চাই!” অপু দাদুকে বুদ্ধি দেয়, “দাদু তুমি লেখো না ভূতের গল্প। ঠিক পারবে।” দাদু বলে, “কিন্তু লেখাটা যদি ভালো না হয়, তোমার পছন্দ না হয়, তখন…” “কি আর হবে! তুমি ব্যাকস্পেস টিপে ডিলিট করে দেবে।” “হা হা হা…” দাদু হাসতে হাসতে বলল, “তুমি তো ভীষণ মজার কথা বললে। কিন্তু আমি তো ল্যাপটপে লিখি না। কি করে ডিলিট করব!” অপু আবার বায়না জুড়ে দেয়, “দাদু, লেখো না একটা ভূতের গল্প।” “ভূতের গল্প লিখতে আমার যে খুব ভয় করে!” “কিসের ভয় দাদু? ভূত কি মানুষ, না পুলিশ!” “হা হা হা… এতো আরও মজার কথা বললে। সত্যিই তো ভূত মানুষ, পুলিশ কিছুই নয়!” “দাদু, তুমি ভূতের গল্পটা খুব ছোট্ট করে লিখবে। ঠিক দু’পাতা।” “কেন বলছো একথা?” “বড় গল্প পড়ার অত সময় নেই। আমার স্কুলের অনেক বই। অনলাইন ক্লাস করতে হয়।” “তাই! তাহলে তো ছোট্ট গল্পই লিখতে হবে। আচ্ছা, তুমি কেমন ভূত পছন্দ করো?” “ভালো ভূত। মিষ্টি ভূত!” “ভূত আবার ভালো, মিষ্টি হয় নাকি!” “হয় তো! ভূতগুলো তো দুষ্টুই হয়। আমার মিষ্টি, ভালো ভূত চাই।” “কেমন দুষ্টু হয় ভূতগুলো? বলো তো শুনি।” “দুষ্টু ভূতগুলো খুব ভয় দেখায়। রেগে যায়। হি হি করে হাসে।” “আর মিষ্টি ভূত কি করে?” “মিষ্টি ভূতগুলো খুব ভালো। ওরা রাগ করে না। ভয় দেখায় না। খেলা করে। গল্প করে। বন্ধু হয়ে যায়। দাদু তুমি লিখবে, ‘মিষ্টি ভূত অপুর বন্ধু’।” “তাই! তাহলে মিষ্টি ভূতটার একটা নাম বলো?” অপু একটু ভেবে বলল, “রসগোল্লা।” “হা হা হা… দারুণ তো। ভূতের নাম ‘রসগোল্লা’! ও কোথায় থাকে লিখব?” অপু আবার ভেবে বলল, “দাদু তুমি লিখে দাও, রসগোল্লা থাকে পিরামিডের দেশে।” “সে তো অনেক দূর! তোমার সাথে কি করে খেলতে আসবে?” “ভূতেরা তো উড়তে পারে। ভাসতে পারে। ও ভেসে ভেসে চলে আসবে।” “রসগোল্লার পাসপোর্ট, ভিসা লাগবে না?” “ভূত কি মানুষ যে ওর পাসপোর্ট, ভিসা লাগবে?” “ভূত তবে কি?” “ভূত তো একটা ছায়া! ওদের খালি চোখে দেখা যায় না।” “এবার সেই ছায়া ভূতটা কি করবে?” “দাদু, তুমি লিখবে ভূত অপুর সাথে খেলছে। অপুর সাইকেলে করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অপুর সাথে ছাদে হাঁটছে। গাছে জল দিচ্ছে। গল্পের বই পড়ছে। ভূত অপুর বন্ধু হয়ে গেছে। ও তো ছায়া। তাই কেউ দেখতে পায় না!” “বাহ তুমি তো দারুণ সুন্দর বললে!” দাদুর হাসিতে অপু খুশি হয়ে বলল, “দাদু এবার পারবে তো ভূতের গল্পটা লিখতে?” “এবার মনে হচ্ছে পারব,” বলে দাদু চোখদুটো গোল গোল করে পাকিয়ে একটু রহস্য করে হেসে বলল, “কিন্তু আমার মনে হয় এই মিষ্টি ভূতের গল্পটা তুমিই লিখে ফেলো। তুমি লিখতে পারবে।” “আমি গল্প লিখব দাদু!” অপু যেন ভাবতেই পারছে না, এমন অবাক হয়ে বলল। “হ্যাঁ, তুমিই তো পারবে এই মিষ্টি ভূতের গল্পটা লিখে ফেলতে। ঠিক আমাকে যা যা বললে, সেই কথাগুলোই গুছিয়ে লিখে ফেললেই একটা গল্প হয়ে যাবে।” অপুর খুব আনন্দ হল মনে। এবার একটু ভেবে বলল, “দাদু, আমি পারব গল্প লিখতে? গল্প লেখা তো খুব কঠিন!” “কঠিন তো বটেই। কিন্তু আমার মন বলছে তুমি পারবে।” “আমি পারব দাদু?” “খুব পারবে। আর যদি লেখাটা ভালো না হয়, তুমি ব্যাকস্পেস টিপে ডিলিট করে দেবে!” অপু এক দৌড়ে ঘরের ভেতরে চলে গেল, “মা, মা আমি গল্প লিখব। মিষ্টি ভূতের গল্প। তুমি আমাকে ল্যাপটপটা দাও তো!” দাদু দূর থেকে অপুর কথাগুলো শুনে হাসতে হাসতে নিজের লেখার টেবিলে গিয়ে বসল!...
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register