"আমি রিজওয়ান মালিক... আমি আমার এলিমেন্ট...মানে ইয়ে আর কি... যে আমাকে ভালোবাসে...আ্যাহেম আ্যাহেম...যে আমার কথা শুনতে চায়...আহ্বান কর...মানে ইয়ে...ডাকছি আরকি..."
রিজ্ জারার হুবহু নকল করে ওর মত হাত আকাশে তুলে এলিমেন্টদের ডাকার চেষ্টা করলো... কিন্তু কিছুই ঘটলো না...ইসপ্যামার রাতের প্রকৃতি আর তার চারিপাশ কিছু ছেলেমেয়েদের গুঞ্জন ছাড়া যেমন নিস্তব্ধ...তেমনই রইলো...
"ও এলিমেন্ট রা আবার বলছি...মানে রিকোয়েস্ট করছি।এসো না... প্লিজ ফ্রেন্ড..."
আলোহার খুকখুক করে চাপতে গিয়ে হেসে ফেলা হাসির আওয়াজ আমাদের কানে ভেসে এল...
"ওঃ...ওভাবে নয় রিজওয়ান...মন থেকে ফিল্ করো...প্রতিটা এলিমেন্টের আলাদা রূপ...আলাদা অস্তিত্ব...আলাদা প্রাণ আছে... শুধু জড়বস্তু না ভেবে একাগ্র মনে তাদের একটা অবয়ব কল্পনা করো... করো...ধীরে ধীরে কিন্তু ফার্মলি...তাদের শক্তিকে নিজের মধ্যে অনুভব করার চেষ্টা করো রিজওয়ান... কনসেন্ট্রেট করো..."
রিজের মেন্টর প্রিস্ট অনিরুদ্ধ উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে রিজের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলেন...
"হচ্ছে না স্যার...পারছি না কিছুতেই...কিছুই তো ফিল করতে পারছি না...হতাশায় ভেঙে পড়ে সার্কেলের মধ্যেই হাঁটু মুড়ে বসে পড়লো রিজ..."
" তাহলে কি রিজের কোনো এলিমেন্টের উপরই দখল নেই রে??!! আমাদেরও কি তাই হবে??"
প্যাম হতাশ ভাবে মুখের উপর থেকে চুল সরাতে সরাতে রিজের দিকে তাকিয়ে নিজের মনেই বলে উঠলো।
"ঠিক আছে, আর শুধু শুধু সময় নষ্ট না করে ছেড়ে দাও...চলে এসো রিজওয়ান্...অন্যদের গুলো দেখা যাক্" ...
মিরান্ডা প্রিস্টলির গলা শুনে রিজ্ চমকে উঠলো আর লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখ নিয়ে সার্কেলটার বাইরে বেরিয়ে এসে উঁচু বেদিটা থেকে নেমে আসার জন্য পা বাড়ালো...
"এক মিনিট,এ্যালাও মি ম্যাম... ইফ ইউ প্লিজ..."
আকাশ থেকে গডেসরা হেঁটে হেঁটে নেমে এলেও বোধহয় আমরা এর থেকে অবাক হতাম না!!!
আলোহা মুখার্জীর গলায় কিন্তু একটু আগের হাসির কোনো চিহ্ন নেই... বরং ওর গলা এখন যথেষ্ট গম্ভীর আর সিরিয়াস...
"আমি মনে হয় জানি...রিজওয়ানের কি হয়েছে...আর ওর এখন কি দরকার...প্লিজ ম্যাম ওকে আর একটা সুযোগ দেওয়া হোক..."
আমি আর আমার বন্ধুরা যতটা অবাক হয়েছি...তার থেকে আরো হতভম্ব রিজ্ কে দেখালো...
" স্রোত...আলোহার মতলবটা কি বল্ তো??ওর মত শয়তান মেয়ে নিশ্চয়ই রিজ্ কে সত্যিকারের হেল্প করার জন্য কিছু বলবে না বা করবে না!! আরো ফাঁসানোর তাল ছাড়া কিচ্ছু নয়...হে গডেসরা... রিজ কে আলোহার শয়তানি মতলব থেকে রক্ষা করো..."
"ঠিক বলেছিস মিট্টি...ওই হাড় শয়তান মেয়ে আলোহা আর ওর ন্যাকাচন্ডী বদমাইশ বন্ধুগুলো...ওরা কখনো কারোর ভালো চাইতেই পারে না... আর ঐ কিয়ারা টা...উফ্ফ ওটা তো জাস্ট অসহ্য...ওই তো ছিরি...তাইতেই নিজেকে বিশ্বসুন্দরী ভাবে যেন...."
সুজি কথা বলতে বলতে একবার আড়চোখে সমীরের দিকে তাকিয়ে নিল... এবং তা আমার বা মিট্টির কারোরই চোখ এড়ালো না...
" আলোহা তুমি কি বলতে চাইছো?"
আলোহা প্রিস্ট অনিরুদ্ধের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে রিজের দিকে এগিয়ে গেল...
"রিজ্ দ্য ডেমন আগে এটা খেয়ে নাও...তারপর চোখ বন্ধ করে প্রিস্ট অনিরুদ্ধ যেমন বললেন, সেরকম ভাবে এলিমেন্টদের ডাকো...তবে আমার একটা ছোট্ট টিপস্...এলিমেন্ট গুলোর ব্যবহার বা ইউটিলিটি গুলো একটু মনে মনে ভাবার চেষ্টা করো...যেমন ওয়াটার কি কাজে লাগে,ফায়ার দিয়ে কি হয়...এই রকম..."
কথা বলতে বলতেই আলোহা রিজের দিকে একটা অসম্ভব সুন্দর দেখতে...গোল্ডেন কালারের, ছোট্ট বোতল বাড়িয়ে ধরলো...
রিজ হতভম্ব মুখেই আলোহার হাত থেকে বোতলটা নিয়ে কর্ক টা খুলে নিজের মুখে ঢাললো...আর...ওই বোতলে কি আছে তা আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারলাম...যখন রিজ্ ওর মুখের পাশে গড়িয়ে পড়া লালচে ঘন তরল...হাতের উল্টো দিকে মুছে নিল.. আমরা দেখলাম...রিজের চোখ মুখের হতাশ ভাবটা সম্পূর্ণ কেটে গিয়ে সেখানে এক আত্মপ্রত্যয় আর আত্মবিশ্বাস ঝলমল করে উঠেছে...
আমাদের অবাক দৃষ্টির সামনেই রিজ্ দৃঢ় পদক্ষেপে আবার সাদা সার্কল টার ভিতরে গিয়ে দাঁড়ালো আর জারার মত করে নয়... সম্পূর্ণ অন্যভাবে নিজের ডান হাত টা সামনের দিকে প্রসারিত করে দিল....
আমরা স্তম্ভিত... বাকরুদ্ধ হয়ে দেখতে থাকলাম... হঠাৎই... গডেস হেকেটির স্ট্যাচুর ডান হাতে ধরে থাকা ইস্পাতের তরোয়াল বা সোর্ডটা,গডেসের হাত থেকে বেরিয়ে...সোজা উড়ে এসে রিজের সামনে দুলতে লাগলো...রিজ সেটাকে ডান হাত বাড়িয়ে এমন ভাবে ধরলো...যেন ওর বড়দিনের কোনো প্রিয় বস্তু ওর কাছে ফিরে এসেছে...সোর্ডটার রুপোলি গা থেকে যেন খুশির আলো ঠিকরে পড়ছিল...
"হোয়াও!!!"....প্রিস্ট অনিরুদ্ধের খুশী ভরা গলা চারপাশের সব গুঞ্জনকে ছাপিয়ে গেল...
"রিজওয়ান মালিকের এফিনিটি মেটাল...."
সমস্ত প্রফেসররা... আলোহা, এরিক,জারা,রাজন্য আর আমাদের সবার... পায়রা ওড়ানো সমবেত হাততালির মধ্যে দিয়ে গর্বিত হাসি মুখে রিজ সার্কল থেকে বেরিয়ে এল...আর ফিসফিস করে, হাতে ধরা সোর্ড টাকে কিছু একটা বলতেই সেটা শূণ্যে গিয়ে... আবার আগের মত গডেস হেকেটির হাতে শোভা পেতে লাগলো...
রিজ আমাদের কাছে নেমে এলে আমরা সবাই ওকে জড়িয়ে ধরলাম...
"রিজ তুই আমাদের মুখ রেখেছিস...আমরা তোকে নিয়ে সোওওও হ্যাপি...তুই আমাদের কনফি আরো আরো বাড়িয়ে দিয়েছিস ইয়ার..."
"কিন্তু আমি আলোহার কেস টা ঠিক বুঝলাম না....ও হঠাৎ আগবাড়িয়ে এসে রিজ কে হেল্প করলো...কেস টা ঠিক...!!!"
" ডাইকো!!দ্যাখ দ্যাখ!!"
প্যামের কথা শেষের আগেই হঠাৎ নিজের হাত টা বাড়িয়ে দিয়ে চিৎকার করে উঠেছে রিজ...
আমরা সবাই ঝুঁকে পড়ে দেখলাম রিজের ডান হাতের রিস্টের ভিতরদিকে আড়াআড়ি ভাবে দুটো...গোল্ডেন কালারের তলোয়ারের ট্যাটু ফুটে উঠেছে...এত উজ্জ্বল... নিখুঁত আর অপূর্ব ট্যাটু মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আর নামকরা ট্যাটু পার্লারের পক্ষেও করা সম্ভব নয়...যেন সত্যিই দুটো সোনার তলোয়ার কোনো মন্ত্রবলে রিজের হাতের কব্জিতে এসে ছোট হয়ে আশ্রয় নিয়েছে..."
"ওঃ গডেস্...আমি এই দৃশ্য দেখে ধন্য...রিজ্...রিজ্... তুমি বুঝতে পারছো না!!এটা এলিমেন্টাল ইন্ডিকেশন...তোমার এলিমেন্টের তোমার প্রতি ভালোবাসা আর দায়বদ্ধতার চিহ্ন...যতক্ষণ তোমার এলিমেন্টের আশীর্বাদ তোমার উপর থাকবে...এই চিহ্ন ও তোমার হাতে ফুটে থাকবে।"
ডাইকোর গলায় সম্ভ্রম...ও আলতো করে রিজের হাতের ট্যাটুটা স্পর্শ করলো
আমরাও অবাক বিস্ময়ে ঝুঁকে পড়ে রিজের হাতের সুন্দর... আলো ঠিকরোনো ট্যাটুটা দেখছিলাম...কেউ বা হাত দিয়ে পরখও করছিলাম
"মৃত্তিকা মাহাতো....মৃত্তিকা মাহাতোওও"
"মিট্টি...মিট্টি... এবার তোকে ডাকছে রে... তাড়াতাড়ি যা.."
"যাচ্ছি রে সমীর যাচ্ছি...এত তাড়া দিস্ না তো...কেন জানি না এটা নিয়ে আমার এত চাপ নেই... আমি মনে হচ্ছে অলরেডি জানি...কোন এলিমেন্ট আমার বেস্ট ফ্রেন্ড... আমি তাকে ফিল করতে পারছি..."
"কে রে!! বল্ বল্ মিট্টি.."
"আরে বলার কি আছে...সত্যি হলে তো দেখতেই পাবি এক্ষুণি...আর না হলে ওক্কে...কি আর করা যাবে...আমার বশে যেটা নেই...সেটা নিয়েও আর চাপ খেতে পারছি না... ইসপ্যামাতে এসে থেকে চাপ খেতে খেতে চ্যাপ্টা হয়ে গেছি...বলতে বলতেই মিট্টি ওর অজস্র কোঁকড়া লম্বা চুল গুলো ধরে উপর দিকে একটা নট্ বেঁধে নিল...
"সত্যি মিট্টি...তোর এই কেয়ারফ্রী এ্যাটিটিউড্ টা আমার যা ভালো লাগে না!!তোর পুতুল পুতুল রুপের সাথে হেভ্ভী যায়...আর তোর ঠোঁটের নীচের পিন টা তো জাস্ট উলাল্লা... কিয়ারার প্রেমে না পড়লে হয়তো তোরই প্রেমে পড়ে যেতাম... অবশ্য এখনো পড়তে পারি..."
" হ্যাঁ...তাই না তো কি...তুই বলবি...আর আমরা মেয়েরা পটাপট্ তোর প্রেমে পড়ে যাবো আর কি...ওরে দিল্লী কা লাড্ডু সমীর সেনগুপ্ত...এই মৃত্তিকা মাহাতো কে পটানো অত্ত সহজ না... শুধু সুন্দর থোবড়া থাকলেই মিট্টি পটে না ইয়ার..."
"সমীইইইইর!!! মিট্টির প্রেমে পড়...ক্ষতি নেই...ও তোকে পাত্তাও দেয় না... কিন্তু কিয়ারা!!!ওটার নামও যদি করেছিস!!"
"কি আশ্চর্য... আমি যাকে খুশি তার নাম নিলে...তোর তাতে কি...তোকে তো আর..."
সমীরের কথা শেষ হওয়ার আগেই প্রিস্টেস অহনার ক্রুদ্ধ গলা শোনা গেল
"মৃত্তিকা মাহাতো...উই ডু নট হ্যাভ অল নাইট ফর ইউ... অনেক ক্ষণ তোমায় ডাকা হয়েছে...কি করছো তুমি!!"
মিট্টি আমাদের দিকে তাকিয়ে... চোখ টিপে হাত নেড়ে... উঁচু শ্বেতপাথরের বেদিটার দিকে কিছুদূর এগিয়ে গিয়েও থেমে গেল... খুব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সিলভিয়ারা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল...সেদিকে ফিরে তাকিয়ে বলে উঠলো...
"সিলভিয়া ম্যাম...ব্লাড প্লিজ্...."
সিলভিয়ার এগিয়ে দেওয়া বোতলে লম্বা চুমুক মেরে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে গিয়ে সাদা বৃত্তের মধ্যে গিয়ে দাঁড়ালো মিট্টি...
আমি দেখলাম ওর চোখে মুখে এক মৃদু হাসি আর আনন্দ মাখামাখি হয়ে আছে...
আমার ষষ্ঠ অনুভূতি যেন আমাকে বলে দিল...কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা এক অভূতপূর্ব ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছি
উদগ্রীব মন আর চোখ নিয়ে আমি আমার বি এফ এফ... আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ফরএভার... আমার মিট্টির দিকে তাকিয়ে রইলাম।...
0 Comments.