Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

বিজ্ঞানসাধক জগদীশচন্দ্র বসু( ১৮৫৮ - ১৯৩৭) : প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন - লিখেছেন মৃদুল শ্রীমানী

maro news
বিজ্ঞানসাধক জগদীশচন্দ্র বসু( ১৮৫৮ - ১৯৩৭) : প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন - লিখেছেন মৃদুল শ্রীমানী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর একটি গানে বলেন, 'আমরা নই বাঁধা ন‍ই দাসের রাজার ত্রাসের দাসত্বে।' রাজা ও প্রজা, শাসক ও শাসিতের পারস্পরিক সম্মানের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা নিয়ে সেই গানের বাণী। ভয়শূন‍্য পৃথিবীর ছবি এঁকে  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আরো বলেন, 'জ্ঞান যেথা মুক্ত'। নিজের জীবনে জ্ঞানের সার্বিক মুক্তি আর পারস্পরিক সম্মান প্রতিষ্ঠা করতে  নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন কবির গুণগ্রাহী সুহৃদ বিজ্ঞানসাধক জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮  -  ১৯৩৭)। আগামী ত্রিশ নভেম্বর তাঁর একশো বাষট্টিতম জন্মদিন। তাঁর মৃত‍্যুও নভেম্বরেই, আজকের দিনে। ২৩ নভেম্বর, ১৯৩৭ এ আটাত্তর বৎসর বয়সে তাঁর জীবনাবসান।
হতে চেয়েছিলেন ব্রিটিশ ভারতের সর্বোচ্চ স্তরের প্রশাসক। আই সি এস। বাদ সাধলেন বাবা। বললেন, প্রশাসনের সর্বস্তরে দাসত্বের বাঁধন। তুমি এমন হও, যাতে কারোর দাসত্ব না করতে হয়। বাবার সেই কথাটাই মর্মমূলে গেঁথে গিয়েছিল কৈশোরেই।
 জগদীশচন্দ্র বসুর বাবা ভগবানচন্দ্র বসু নিজে ছিলেন ডেপুটি ম‍্যাজিস্ট্রেট। সরকারি কর্মচারীদের দাসত্ব জিনিসটা ঠিক কি, তা বুঝতে ওঁর বাকি ছিল না। মা ছিলেন বামাসুন্দরী বসু।
জগদীশচন্দ্র বসু ময়মনসিংহে জন্মেছিলেন। পরে পড়তে এলেন কলকাতায়। হেয়ার স্কুলে। তারপর সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল। ১৮৭৯ সালে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএ পাশ করলেন।
ভেবেছিলেন চিকিৎসক হবেন। হয়ে গেলেন পদার্থবিজ্ঞানী। কেম্ব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজে বিএ ডিগ্রি অর্জন করার পরে লণ্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে ১৮৮৪ সালে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৮৮৫ থেকে কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অধ‍্যাপকের বৃত্তি নিলেন। ১৯১৫ সাল অবধি প্রায় ত্রিশ বছর ধরে ওখানে পড়ালেন। ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বোস ইনস্টিটিউট। ১৯৩৭ সালে মৃত‍্যু পর্যন্ত সেখানেই।
সম্মান পেয়েছেন প্রচুর। ১৯০৩ সালে সিআইই, ১৯১২ সালে সিএসআই, ১৯১৭ সালে নাইট উপাধি, আর ১৯২০ সালে রয়াল সোসাইটির ফেলো। সব সেরা সম্মানটি পেয়েছেন মৃত্যুর অনেক পরে। ২৫ জুন, ২০০৯ তারিখে  স্বাধীন ভারতের ইণ্ডিয়ান বটানিক গার্ডেন এই মহান বিজ্ঞান সাধকের নামাঙ্কিত হয়।
মহাবিজ্ঞানী   জেমস ক্লার্ক ম‍্যাক্সওয়েল তত্ত্বীয় পদার্থ বিজ্ঞানের জগতে তড়িৎ ও চৌম্বকশক্তি যে মূলত অভিন্ন, তা তত্ত্বগতভাবে প্রতিষ্ঠা করেন। তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণের কথা তিনি বলেন। হাতে কলমে সে সব প্রতিষ্ঠিত হবার আগেই ১৮৭৯ সালে ম‍্যাক্সওয়েল প্রয়াত হন। ১৮৮৬ থেকে ১৮৮৮ সালের মধ্যে হাইনরিশ হার্ৎজ হাতে কলমে তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ তৈরি করে দেখান। সে তরঙ্গের রকম সকম নিয়েও বলেন। সে তরঙ্গ যে আলোর ধাঁচে প্রতিফলন, প্রতিসরণ ইত্যাদি নিয়মকানুন মেনে চলে, সেও হার্ৎজ দেখালেন।  জগদীশচন্দ্র বসু বিজ্ঞানী হার্ৎজের কাজে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। হার্ৎজ এত উচ্চমানের কাজ করলেও তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণ যে কী অসামান্য অধ্যায় শুরু করতে চলেছে, তা ভাবতে পারেন নি। ১৮৯৪ সালের আগস্টে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী অলিভার লজ ওই তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণ আর তার নানা দিক নিয়ে বক্তৃতা করেন। এই বক্তৃতাও বসুকে উৎসাহ যোগায়। কয়েক মাস পর, ১৮৯৪ এর নভেম্বরে কলকাতার টাউন হল এ লেফটেন্যান্ট গভর্নর স‍্যর উইলিয়াম ম‍্যাকেঞ্জি সহ আরও অনেক গুণীজনের সামনে মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের মাইক্রোওয়েভ দিয়ে বারুদে আগুন লাগিয়ে ও ঘণ্টাধ্বনি করে দেখান জগদীশচন্দ্র বসু।
তিনি মুক্তজ্ঞানে বিশ্বাসী ছিলেন। নিজের নামকে জাহির করার লক্ষ্যে আবিষ্কারের পেটেন্ট নেওয়া বসুর রুচিবিরুদ্ধ ছিল। নিজের অর্জিত জ্ঞান তিনি ব‍্যবসায়িক কাজে না লাগিয়ে মুক্তকণ্ঠে জনসমক্ষে প্রকাশ করতে ভালবাসতেন।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register