Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

কিশোর গল্পে দেবদাস কুণ্ডু

maro news
কিশোর গল্পে দেবদাস কুণ্ডু

রাজকন্যে

অন্ধকার ঘরে শুয়ে আছে বিট্টু। তার মন খারাপ। দেবপ্রিয়ার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে ছিল সে। সে কি এলাহি আয়োজন। প্যান্ডেল করেছে। ফুল দিয়ে সাজিয়েছে অপূর্ব। কত রঙের আলো। বাজনা। গান। আবার চ্যালিচ্যাপলিন এনেছিল। সে বিট্টুর হাত ধরে হ্যান্ডসেক করেছে। কত মানুষ। দেবপ্রিয়ার কতো বন্ধু। কতো বড় কেক। এই জমজমাট অনুষ্ঠান দেখে তার নিজের জন্মদিনের কথা মনে পড়ল। তার জন্ম দিনে তার মা একবাটি পায়েস করে মাএ। ধান দূর্বা দেয়। সে মাকে প্রনাম করে। বাবা একটা মলিন জামা নিয়ে আসে। এইতো তার জন্মদিন। সেখানে দেবপ্রিয়া তো রাজকন্যা। এতো বড়ো না হোক। একটু বড় করে তো তার জন্মদিনটা পালন করতে পারে বাবা। সে কথা বাবাকে বলেছে সে। বাবা বলল, 'আমি কি ওদের মতো বড় লোক রে। আমার বাবা তো আমার জন্মদিন পালন করে নি কোনদিন। যেটুকু পারি করি। এর বেশি পারবো না।' বিট্টুর আরো মন খারাপ হয়ে গেল। হঠাৎ বাবার ফোনটা বেজে উঠলো। তার বাবা বলল,' দেবপ্রিয়া ফোন করেছে তোমার।' , 'বলে দাও আমার শরীর খারাপ।' '. ' মিথ্যে কেন বলবি? দেখ ও কি বলে? ' আমি জানি ও কি বলবে? , 'কি বলবে শুনি?' 'কে কে কতো বড় বড় গিফট দিয়েছে। আমি তো সামান্য একটা বই দিয়েছি। আমার এসব শুনতে ভালো লাগে না।' , 'ফোন যখন মেয়েটা করেছে, এতো রাতে, তখন একবার কথা বলতে হয়। না হলে খারাপ দেখায়।' অনিচ্ছা সত্বেও ফোনটা নিল বিট্টু। বলল, 'হ্যাঁ বল। কি বলবি। ' 'তুমি যে আমাকে রাজকন্যা বইটা দিয়েছো, ওটা আমার আজকের জন্মদিনের বেষ্ট গিফট।' বলে কি দেবপ্রিয়া! কতো দামী উপহার ও পেয়েছে, সে তা নিজে দেখে এসেছে। কেউ কেউ সোনার আংটি পর্যন্ত দিয়েছে। সেখানে আমার একটা সামান্য বই বেষ্ট গিফট হয়ে গেল! দেবপ্রিয়া মজা করছে। 'তুমি অবাক হচ্ছো আমার কথা শুনে তাই তো? তুমি জানো এতো ভিড়ের মধ্যে আমি বইটার প্রথম গল্প রাজকন্যে টা পড়ে ফেলেছি। ,' পড়ার জন্য তো দিয়েছি।' 'কিন্তু বইটা পড়ে আমার একটা এতো দিনের ধারনা পাল্টে গেছে যে। ' ' কি রকম? শুনি।' , 'এতোদিন আমার ধারনা ছিল, রাজকন্যারা সবাই খুব সুখী। ওদোর শুধু সুখ আর সুখ। কিন্তু আজ জানলাম, রাজকন্যাদেরও দু:খ আছে।' , 'বলো কি? রাজকন্যাদেরও দু:খ! ভারী অবাক কান্ড তো!` ` সেই অবাক কান্ডটা ঘটালে তুমি। আজ জানলাম, যতো রাজরানী হও না কেন, দু:খ তোমার থাকবে। এর চেয়ে বড়ো গিফট কি হতে পারে? তাই তোমাকে ফোন করে জানালাম।' ফোন অফ। বাবাকে ফোনটা ফিরিয়ে দিয়ে বিট্টু বলল. 'বাবা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও'। , 'কিসের জন্য? '. 'তখন ঐ কথা বলেছিলাম।' ' সে আমার মনে নেই। দেবপ্রিয়া কি বলল?' 'আমার বইটা ওর বেষ্ট গিফট।' ' বেষ্ট গিফট হবে না কেন? ওখানে যে জীবন সত্যের কথা লেখা আছে? ' তুমি কি বইটা পড়ে এনোছো?' '. ' হ্যাঁ ।রাজকন্যে গল্পটা পড়েছি। তোমার জন্যও এক কপি এনেছি। এই নাও।' বাবার হাত থেকে বইটা নিয়ে বিট্টু বলল. 'দারুন বাবা, দারুন। কিন্তু আজ তো আমার জন্মদিন না? ,' একটা কথা জানবে প্রত্যেক দিন মানুষের জন্মদিন। কেন বলতো? ' ' যেমন আজ একটা সত্য জানলাম, এই দিনটা জন্মদিন। তাই তো? 'একদম ঠিক কথা বলেছো। মনে রাখবে সারাজীবন।' এতোখন বারান্দার স্বল্প আলো ঘরে এসেছিল ছিটকে সামান্য। বাবা আলো জ্বেলে চলে গেল। পুরনো আলো। কিন্তু মনে হচ্ছে নতুন আলো। বড্ড ঝলমল করছে ঘরটা।
ছবি লেখক
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register