Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব - ৪৯)

maro news
সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব - ৪৯)

ঊনপঞ্চাশ

তারপর যা ঘটলো তা খুবই অপ্রীতিকর। এর জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। কতক্ষন আমরা বিহ্বলতার মধ্যে ছিলাম জানিনা। চেতনা ভাঙলো পিঠে শক্ত কিছু একটা ঠেকায়। চেতনা ভেঙে দেখি আমরা দুজনে জরা জরি করে আছি। আমার হাত আর ঠোঁট ছিল লুলিয়ার অন্তরঙ্গ জায়গায়। পিঠে কি ঠেকছে দেখার জন্য পিছনে তাকাতেই দেখি দুজন ষণ্ডা মার্কা লোক দাঁড়িয়ে আছে। একজনের হাতে একটা মোটা লাঠি। সেই লাঠিটা পিঠে ঠেকিয়ে বললো, "উঠে আসুন আপনারা"। আমি রসভঙ্গ হওয়ায় ঝাজিয়ে বললাম " কে আপনারা? কি চাই এখানে? "। একজন ষণ্ডা বলল, "অন্যায় করে আবার মেজাজ দেখানো হচ্ছে "। বলে আমার জামার কলার ধরে দাঁড়করাল। চার পাশে তাকিয়ে দেখলাম সব যুগল মূর্তিরাই উধাও। লেকের পাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে কলকাতা পুলিশ এর নীল ভ্যান। লোকদুটোর পায়ের জুতো দেখে বুঝলাম এরা আন্ডারকভার পুলিশ। এতক্ষনে পুরো ব্যাপারটা বোঝা গেল। লেকে পুলিশ রেট হয় আগেই শুনেছিলাম। লুলিয়াও উঠে দাঁড়িয়েছে। আমি পলিশদুটোকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে আমরা নির্দোষ। কিন্তু ওরা বোঝা বুঝির ধার ধারেনা। বলল, "দুজনেই ভ্যানে গিয়ে বসুন "। আমি রিকোয়েস্ট করে বললাম, "স্যার আমরা এই প্রথম এসেছি, ভুল করে ফেলেছি, আমাদের জরিমানা করে এবারকার মতো ছেড়েদিন,"। পুলিশ দুটো রাফ এন্ড টাফ।কর্কশ গলায় বলল, "পাবলিক প্লেসে ফুর্তি মারা হচ্ছে? এটা কি ফুর্তি মারার জায়গা? যা বলার থানায় গিয়ে বলবেন"। বেগতিক দেখে বললাম, "ওনাকে ছেড়েদিন স্যার, আমি যাচ্ছি"। কি ভেবে পুলিশ গুলো রাজি হল। লুলিয়াকে বলল, "আপনি বাড়ি চলে যান। ওনাকে থাই নিয়ে যাওয়া হবে। চিন্তা নেই ছেড়ে দেওয়া হবে। আমি ভ্যানে ওঠার আগে লুলিয়াকে বুঝিয়ে দিলাম কিভাবে ও বাড়ি ফিরবে। লুলিয়া এবার পুলিশ দুটোকে অনেক অনুনয় বিনয় করে বলল আমায় ছেড়ে দিতে।পুলিশ দুটো বিরক্ত হয়ে বলল, "হয় আপনি বাড়ি চলে যান নাহলে ভ্যান এ গিয়ে বসুন"। আমি অনেক বুঝিয়ে সাজিয়ে লুলিয়াকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম। ভ্যানে উঠে দেখি আমার মতো আরো অনেকে বসে আছে। বুঝলাম পুলিশ এর এটা রুটিন রেড। পুলিশদেরও প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যায় কেস দিতে হয়। ভ্যান থানার উদ্দেশ্যে রওনা হল। আমার কান মাথা সব গরম হয়ে আছে। নিজেকে খুব হীন মনেহচ্ছে। আমি নিজেকে কোনোদিন এতো ছোট অনুভব করিনি। ভ্যানে কয়েকজন অল্পবয়সি ছেলেও ছিল। তারা খুব হয় হুল্লোড় করতে করতে যাচ্ছিলো। তাঁদের মানসম্মানের জ্ঞান নেই। লেকের ধারে বসে মদ খাচ্ছিলো তাই তাঁদের ধরেছে। থানার সামনে ভ্যান আস্তে আমাদের সবাইকে নামতে বলা হল। সবাইকে লাইন করে দাঁড়াতে বলা হল। লাইন করেই জনা দশেককে থানায় ঢোকানো হল। ভাবলাম আর্যমাকে একবার ফোন করি। তার পর ভাবলাম কি ভাববে ও। অন্যায় তো ঠিকই আমি করেছি। তার জন্য হয়তো সামান্য কিছু শাস্তি পেতে হবে। তাই এই সামান্য বেপাররে ওকে আর জড়িয়ে লাভ নেই। তাছাড়াও আমি ওর কাছে ছোট হয়ে যাবো। সবাইকে পেটি কেস দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হল। সঙ্গী ছেলেদের কথা শুনে নিজের নাম ভাঁড়িয়ে পুলিশ রেকর্ড এ লিখলাম। একশো আসি টাকা জরিমানা দিয়ে ছাড়া পেয়ে গেলাম। হয়তো খুব সহজেই ছাড়া পেলাম কিন্তু এর জন্য মূল্য অনেকটাই দিতে হল। মান সম্ভ্রম বিসর্জন গেল। নিজেকে চোর ছেচরের সম গোত্রীয় মনে হচ্ছে। ছাড়া পেয়েই দ্রুত থানা থেকে বেরিয়ে এলাম। বেরিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। দেখি থানার বাইরে লুলিয়া দাঁড়িয়ে আছে। কান্নাজড়ানো মুখ। আমাকে দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, "সরি অর্ক, আমার জন্যই এতো কিছু হল। তোমার সন্মানহানি হল"। লুলিয়ার চোখের জলে আমার সব গ্লানি ধুয়ে গেল।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register