Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সাহানা ভট্টাচার্য্য (পর্ব - ৩)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সাহানা ভট্টাচার্য্য (পর্ব - ৩)

অস্ত্রদান - একটি কাল্পনিক কথা

পর্ব ৩ - সুদর্শন চক্র

মেয়েটা ছুটছে, প্রাণপণে! ধানক্ষেতের পাশের ওই ছোট্ট ক্লাবঘরটায় ওদের আড্ডাটার পাশ দিয়ে যেতে চায়না কেউ! ক্লাবঘরের তাসের আড্ডার ওদের চোখের নজর এমন করে মেয়েদের শরীরে বুলিয়ে যায় যে মেয়েদের মনে হয় তাদের গায়ে একটা সুতোও নেই! মেয়েরা ভয় পায় ওদের, ওরা মাতাল! মেয়েদের ওড়না ধরে টান ওরা দিতে থাকে এমনিতেই, ভরা বাজারেও মেয়েদের দেখে নোংরা ইঙ্গিত করে, কুচ্ছিত গান গায়, সিটি দেয় ওরা। ওদের আছে খুঁটির জোর, জানে গ্রামের মেয়েগুলো। এ গ্রামে এখনো ইলেক্ট্রিসিটি আসেনি! রাতে মেয়েরা ঘর থেকে কেউ বেরোয় না।
সেদিন একটু বিকেল গড়িয়েই গেছিলো। মাসের এই তিনটে দিন বড্ড যন্ত্রণা হয়, বড্ড কষ্ট হচ্ছিলো সেইদিন মেয়েটার। শিখাদিদির বাড়ি পড়তে পড়তেই আর পারছিলোনা। দিদিকে বলে সেদিন তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ে মেয়েটা। ধানক্ষেতের পাশের রাস্তায় ঢুকে পড়ে, এখনো তো সন্ধে হয়নি! এটা শর্টকাট। ওরা মদের বোতল ভেঙে কাচ ছড়িয়ে রেখেছিলো রাস্তায়, খেয়াল করেনি মেয়েটা, সাইকেলের টায়ার পাঙ্কচার হলো, পড়ে গেলো মেয়েটা। ওরা ঘিরে ধরলো। মেয়েটা সর্বশক্তি সঞ্চয় করে ছুটছে, প্রাণপণে। চটি ছুঁড়ে মারলো একজন, মাথার পিছনে লাগতেই ককিয়ে উঠলো মেয়েটা। একে অত রক্তপাত, তারওপর ভয়, ক্লান্তি - পারলো না মেয়েটা, পড়ে গেলো। পরবর্ত্তী আধ ঘন্টা ধানক্ষেতে শুধুই রক্তস্রোত। একের পর এক নারকীয় অত্যাচারে মেয়েটার আবছা মনে পড়তে লাগলো মা-বাবা-দিদির কথা। বাঁচানো গেলো না।
আর্তনাদ করে উঠলো মাঝবয়সী বৌটি। কখন নিঃশব্দে খ্যাঁকশেয়ালের মতন ঢুকে পড়েছে রান্নাঘরে লোকগুলো! পরবর্ত্তী আধঘন্টায় উনুনে ভাত পুড়ে ঝামা, চারজনের নৃশংসতার বৌটির শরীর-মন মৃতপ্রায়, রান্নাঘরের দরজায় হাতপা বাঁধা স্বামীটির প্রতিবাদ যেন আরও উৎসাহিত করছিলো নরপিশাচগুলোকে! গণধর্ষণের উল্লাস যেন পিশাচগুলোকে পেয়ে বসলো আরো! পোড়াভাতের হাঁড়ির নিচে জ্বলতে থাকা চ্যালাকাঠ বের করে ধরিয়ে দিলো রান্নাঘরের চাল। বেরিয়ে গেলো চারজন! গণধর্ষনে আধমরা বৌটি বোধহয় কোমায় চলে গেছিলো, পাড়াপ্রতিবেশী আগুন নেভানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে এসে শুনলো জ্যান্ত-আধপোড়া স্বামীটির আর্তনাদ। বাঁচানো গেলো না।
মোটর বাইকটার শব্দে সচকিত হয়ে উঠলো পিশাচগুলো। এই সেই মোটরবাইক না! ক্লাবঘরের পাশের ধানক্ষেতে তুলতুলে মেয়েটাকে ছাড়তেও ইচ্ছে করছে না, কিন্তু ওই বাইকের আওয়াজ চেনে পিশাচগুলো। মাস্টারমশাইয়ের বাইকের আওয়াজ, বেঁচে গেলো মেয়েটা, ইশ! আরেকটু হলেই মেয়েটাকে ... চারজন ছুটে পালালো, মাস্টারমশাইয়ের বাইকের দাঁড়ানোর শব্দে মেয়েটার গোঙানির আওয়াজটা চিৎকারে পরিণত হলো। বাঁচানো গেলো।
মাস্টারমশাই লিখছেন এপ্লিকেশন! গ্রামের কোথাও ইলেক্ট্রিসিটি নেই। সবাই অবাক, গ্রামে দুমাসে পরপর হওয়া বাইশটা ধর্ষণের প্রতিবাদ যাচ্ছে ইলেক্ট্রিসিটি অফিসে? মাস্টারমশাইয়ের অকাট্য যুক্তি - আলো চাই। আলো প্রতিবাদের ভাষা, আন্দোলনের ভাষা, প্রতিরোধের ভাষা, অন্ধকারকে জয় করার ভাষা। আলো এলে আঁধার কাটবেই! গ্রামের বাজারে ধর্ষণের প্রতিবাদে তৈরী হলো প্রতিবাদমঞ্চ। নাম হলো জাগরণমঞ্চ। মার খেয়ে একাকার অহিংসনীতিতে চলা মাস্টারমশাই ও তার সাঙ্গপাঙ্গ। তার মধ্যে ঘটেছে আরো চারটে ধর্ষণ। মাস্টারমশাইয়ের কিন্তু সারারাত বাইকের চাকা থামলো না! সারারাত জেগে টহল, জনজাগরণের আওয়াজ। পুলিশ গ্রেপ্তার করলো ধর্ষকদের, হয়তো অল্প সময়ের জন্য। গ্রামে আলো এলো, বাঁচানো গেলো!
রিভলবারটা পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জে ধরে গুলিটা ছুঁড়লো ছাত্র। মাস্টারমশাইকে অবাক করে মৃত্যু এলো ছাত্রের রূপ ধরে। লুটিয়ে পড়লেন মাস্টারমশাই। এক স্টেশন লোকের মাঝে বাইকের স্ট্যান্ড অবধি পৌঁছাতে পারলেন না মাস্টার। একজন মাস্টারকে বাঁচানো গেলো না, কিন্তু বাকিরা তো বাঁচবেই!
সুদর্শন চক্রটার গতি একটু কম করে মা দুর্গা পরিষ্কার করছিলেন। নিজের হাতে অস্ত্র পরিষ্কার করা মায়ের হবি! চক্রটা সাফ করতে করতেই কানে এলো কামদুনির চিৎকার, সুতিয়ার আর্তনাদ, নয়ডার যন্ত্রণা, ব্যাঙ্গালোরের হাহাকার, দিল্লীর দীর্ঘশ্বাস! একটা লড়াই থামলেও আরো দশটা লড়াই হবেই। মা দুর্গার সুদর্শন চক্র মাস্টারদের বাইকের চাকা হয়ে ঘুরবে, ঘুরবেই। কিছু বেঁচেছে, আরও বাঁচবে।
মা দুর্গার তাঁর চক্রটা শান দিয়ে রেডি করলেন। অস্ত্রদানের উপযুক্ত আরো মানুষ চাই যে! বাঁচাতেই হবে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register