Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ছোটগল্পে প্রনব রুদ্র

maro news
ছোটগল্পে প্রনব রুদ্র

তুষের আগুন

লড়াই করার মানসিকতা সর্বদা মানুষ ধরে রাখতে পারে না। মিথ্যের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করেও মিথ্যার শক্তির কাছে হেরে অনেকেই আত্মহত্যা করে। সবাই, সাথে সাথেই বিচার পাবে এমনটা তো ওই আড়াই-তিন ঘন্টার সিনেমা ছাড়া বাস্তবে হয়না। এই জীবনে পাওয়া বা দেখা চরমতম আঘাতের কথা বলি।
প্রায় সাড়ে তিন বছর হলো বিবাহিত। প্রেমঘটিত নয়। ছেলেপক্ষের খুব অল্প খোঁজ-খবরে ঠিক হয়ে যায় নূন্যতম দাবী-দাওয়াহীন বিয়ে। দাবী বলতে একটাই ছিলো থ্যালাসেমিয়া টেষ্ট। ছেলের পরিবারের সামাজিক অবস্থান, ছেলে কি করে সব-ই বলা হয়েছিলো।
যে চরম সত্যটা গোপন রেখে মেয়েপক্ষ বিয়ে দেয়, তাহলো মেয়ের মানসিক-বৌদ্ধিক বিকাশ কম। বিয়ের সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই তা স্পষ্ট প্রকাশ পেতে থাকে নানা সংসারী সাধারণ কথা ও কাজে। প্রথমে আদরের মেয়ে মনে করে ছেলেপক্ষ হাসি মশকরা হিসাবেই নেয় ওর চলন-বলন। এমন কি চট করে বালখিল্যপনাই মনে হবে মেয়ের কথাবার্তায়। কিন্তু একটু গভীরে গেলেই পরিষ্কার বোঝাও যায় সমস্যা আছে। যেকোন শিক্ষিত সত্য বিচারে সক্ষম মানুষই এটা বুঝবেন। কিছু একটা সমস্যা আছে সেটা বিয়ের কিছুদিন পরই ওদের বলাও হয়। ওরা ফোনে নানা যুক্তি দিয়ে, এটা হয়েছে বলেই ওটা হলো, এটা আসলে ওটা, এমন কথা বলে পাশ কাটিয়ে যায়। কখনো বলে না সমস্যা আছে। সামনাসামনিও আসে না। অনেক কথা, আলোচনা, কর্মকান্ডের পর ডাক্তার দেখাতে রাজী হয় মেয়েপক্ষ। যেহেতু মানসিক সমস্যার লক্ষণ তাই ছেলেপক্ষ নিজে থেকে আগে দেখায় না। কেননা যে ধড়িবাজরা সমস্যার কথা গোপন রেখে বিয়ে দিতে পারে তারা ডাক্তারী চিকিৎসা সংক্রান্ত সবকিছু মিথ্যা বলে ছেলেকেই যে দোষী বানাবে না, তার কোন নিশ্চয়তা নেই! সত্য এখন সামনে এবং আগের ভয়টাই সঠিক। মানসিক অসুখ আছে, যেটা আগে থেকেই ছিলো। সম্ভবত বাই বর্ন। আর যথারীতি ওদের বেগড়বাই শুরু। চিকিৎসায় সামনে আসে মেয়ে ২৬/২৭ বছর হলেও মানসিক বুদ্ধি স্বাভাবিকের চেয়ে কম। স্বাভাবিক জীবনের সাথে চলা নানা ঘটনা ও তাকে যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে বিশ্লেষণ করে মোটামুটি মানিয়ে গুছিয়ে চলা মেয়েরপক্ষে সম্ভব নয়। মানসিক অসুখের যেহেতু নানাভাগ আছে এটিরক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন এবং সম্পূর্ণ স্বাভাবিকভাবে একা বাজার-ঘাট করে চলাফেরা করা সম্ভবত সহজে সম্ভব হবে না। যে জানে না- ১০০ টাকা নিয়ে বাজারে গেলে ১০ টাকা দিয়ে পেন কিনলে দোকানদার কত ফেরৎ দেবে, জানে না নিজের প্রেসক্রিপশন মিলিয়ে নিজের ওষুধ খেতে। সে কী করে সব ঠিক রেখে বর্তমান সমাজে চলবে?
ছেলের জীবনটা নষ্টের জন্য কে দায়ী? কে করবে এই মিথ্যাচার প্রতারণার বিচার? কতটা স্বার্থলোভী হলে সত্য গোপন করে একটা পরিবারকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া যায়? মেয়েপক্ষে শিক্ষিত বড়ো চাকুরে শক্তিশালী মানুষজন আছে, ওরা জেনে বুঝেই এটা করেছে। ছেলেপক্ষ যেহেতু নরম, কী আর করতে পারবে? একটি জীবন ধুঁকেধুঁকে মৃত্যুরদিকে যাচ্ছে। কার দায়ভার কে টানবে বলো? ভগবান! ছেলেরা বিয়ের আগে সমস্ত রকম মানসিক শারীরিক পরীক্ষা করে তবেই সম্পর্ক কোরো। নইলে সারা জীবন চিতার আগুনে জ্বলবে এই ছেলেটির মতো। আর এতো অন্ধকার গ্রাস করবে যে, এই লেখার শুরুর কথাই সত্য বলে মনে হবে। আত্মহত্যা!
সামাজিক মাধ্যমে আত্মকথনের আকারে একটা ছোটগল্পের মতো লেখা দিয়েছেন তরুণ লেখক অনির্বাণ কুন্ডু। সেটা পড়ে ওনারই এক পাঠক ভাবচ্ছেন এটা কি উনি নিজের জীবনে দেখা কথা লিখেছেন না একেবারে নিজেরই জীবন কথা? কমেন্ট করে জানতেও চেয়েছেন এক পাঠক পবন রায়। উত্তরে লেখক শুধু একটা স্মাইলির ছবি দিয়েছেন। এই হলো লেখকদের মজা নিজের কথা লিখলেও কেউ সাথে সাথে বুঝতেই পারে না। আমি এক রসিক পাঠক গল্প আর কমেন্ট পড়তে পড়তে আঙুলের ফাঁকে সিগারেটকে পুড়িয়ে মারছি…
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register