Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

।। ত্রিতাপহারিণী ২০২০।। T3 শারদ সংখ্যায় মোহনা মজুমদার

maro news
।। ত্রিতাপহারিণী ২০২০।। T3 শারদ সংখ্যায় মোহনা মজুমদার

শান্তির সুখ

:-"আজ বড্ড রোদ উঠেছে, আজ আর হেঁটে যেতে ইচ্ছে করছে না" বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ছাতা টা খুলতে খুলতে রিকশার জন্য খানিক দাঁড়ালো বছর বাহান্নর মীনতি দেবী ।
তারপর আবার হাটা শুরু করলো। উনি পেশায় স্কুল শিক্ষিকা। আজ মাসের সাত তারিখ হয়ে গেল, বাড়ি ভাড়া টা দিতে যেতে হবে। এবারের বাড়িওয়ালা সুমিত মজুমদার লোকটা খারাপ নয়, প্রায়ই খোঁজ খবর নেন, জল ঠিক মতো আসছে কিনা, ইলেকট্রিক বিল দেওয়া হয়েছে কিনা, ওষুধ ফুড়িয়ে গেছে কিনা। সব ঠিকঠাক আছে কিনা, বাড়ি ভাড়া দিতে লেট হলেও কিছু বলেন না। মীনতি দেবী নিজের মনেই ভাবে, সত্যি তো সব লোক তো খারাপ হয় না, ওনার স্বামীর মতো। সেই যে বিল্টু পেটে এলো, সাত মাসের ভরা অন্তঃসত্ত্বা মীনতি দেবীকে ফেলে রাসকেলটা কোন এক অবিবাহিতা ছাত্রীর সাথে চম্পট দিলো। বহু বছর পর খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায় দুটি ছেলে মেয়েও হয়েছে ওই পক্ষের। যদিও উনি আর কোনও মামলা মোকদ্দমার ঝামেলায় যাননি। তবে সিঁদূরটাও রোজ নিয়ম করে পরেন এখনও, স্বামীর পদবী টাও ব‍্যাবহার করেন। ছেলেটারও কলেজের ফি দিতে হবে। ছেলেটাও হয়েছে এক্কেবারে বাপের মতো। প্রত‍্যেক মাসে হাতখরচ এর টাকা, কলেজের ফি, টিউশন ফি সব হিসেব করে নেবে অথচ সংসারের একটা কাজে আসবে না। জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ সবটাই সামলাতে হয় মীনতি দেবীকে। তবু আজকাল যেন আর পেরে উঠছেন না, অল্পেতেই হাপিয়ে যান। এত বছর স্কুল, টিউশন সন্তান মানুষ এই সবের মধ্যে জীবনটা বেশ ব‍্যস্ততাতেই কেটেছে, স্বামীর অভাব তেমন বোধ করার সুযোগ দেন নি নিজেকে, কখনও যদি মনেও পড়েছে, শেষ বেলার তিক্ত অভিজ্ঞতার স্মৃতি মনে করে স্বামী কে হাজার মাইল দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। তবু এই প্রৌড় বয়সে এসে জীবনের গতি যখন ক্ষীন হয়ে আসে কোথায় যেন একাকীত্বটা অনুভব করেন। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরলে ঘরটা যেন বড্ড খা খা করে, তা শুধু স্বামী র জন্য নয়, এমন কেউ যদি থাকতো যে দরজা খুলে দেবে, ঘরে ফিরলে এক গ্লাস জল হাতে তুলে দেবে, ভাত বেড়ে ডাকবে, দুটো সুখ দুঃখের গল্প করবে। এই বয়সে এসে এমন সঙ্গই বা দেবে কে?এবাবা কিসব ভাবছি?এমন চাওয়া টাও যে লজ্জার.. লোকে শুনলে ভাববে চরিত্রের দোষ বা মতিভ্রম... স্বামী থাকলেও কি আর ভাত বাড়া বা জলের গ্লাস হাতে তুলে দেওয়া এমন সেবা জুটতো? কি উল্টো পাল্টা ভাবছি এসব, যে কিনা স্ত্রীর মর্যাদা টুকুই দিলো না আবার... রেডিও টা চালিয়ে চা বসাতে গেল মীনতি দেবী। গান বাজছে "এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মেলেনা, এমনই মায়ার ছলনা" সত্যি সারা জীবন তো এভাবেই কেটে গেল, যে বয়সে প্রেম আসার কথা ছিল, পেলাম না, মানুষটা ঠকিয়ে চলে গেল, এই বয়সে এসে আর কি সুখ খুঁজবো! তার চেয়ে এই বেশ ভালো আছি ..কথায় আছে না সুখের চেয়ে সোয়াস্তীই ভালো।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register