Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

।। ত্রিতাপহারিণী ২০২০।। T3 শারদ সংখ্যায় উমা বসু

maro news
।। ত্রিতাপহারিণী ২০২০।। T3 শারদ সংখ্যায় উমা বসু

বিজ্ঞাপনী দান

বাবু ছপি নিলি না তো? -বৃদ্ধ মানুষটা বলে উঠলো । ছবি? অনিমেষ অবাক হয়ে তাকালো । হ্যাঁ। তুরা এই যে আমাদের বাচ্চাগুলানকে জামা দিলি, মিয়াদের কাপড় দিলি, আর চাল-ডাল দিলি, সেসবের ছপি তুললি না তো? শোভন বললো- ওসব ছবি তুলে আমাদের কোনো দরকার নেই । ই বাবা, তু তো ভেন্ন কতা কইলি। ইখানে যত সরকারি আর অন্য অন্য বাবুরা, দিদিরা রেশন দিতে আসে, তাদের সবাই আমাদেরকে সার দিয়া দাঁড়া করাই রেশন দেওয়ার ছপি তুলে। হাসি হাসি মুখে সেসব ছপি তুলতে হয়, তুরা জানিস নাই? শোভন আর অনিমেষ পরস্পরের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। বৃদ্ধ বলে চলে - ছপি না দিলে তুদের এই রেশন দেয়ার কতা সবাই জানবে কিমন করে? সবাই কত ভালো বুলবে তুদের ।ফেচবুকে কত পশনসা করবে লুকে। তাপ্পর ভুট আছে সামনে । তা, তুল না কেনে বাবু ছপি । আমি উদেরকে সার দিয়া দাঁড় করাই দি? অনিমেষ নরম গলায় বলে -তোমরা এর আগে রেশন পেয়েছ বলো? এই লকডাউনে তাহলে তোমাদের খুব একটা অসুবিধা হয়নি বলো? সরল হাসি ছড়িয়ে বৃদ্ধ বললো - করুনা আসার পর থিকা অনেকদিন কাম কাজ বন্দ ছিল। তখুন কয়েকবার বেশ কয়েকজন দাদা, দিদি এসে আমাদের কখুনো আন্না খাবার, কখুনো চাল, ডাল, তেল, দিয়াছে। তুদের সবার দয়াতেই তো দুটো খেতে পাই বাবু। তা, ওরা সবাই তো কত কত ছপি তুলেছে আমাদের । বিটির ইস্কুলে মাসে মাসে চাল, আলু, কখুনো ছোলা, স্যানিটাই না কি বলে, আরে ওই যে হাত ধোয়ার জন্য, সেসব দেয়। তা সেখানেও তো উরা কত কত ছপি তুলে। ছপি না দিলে নাকি চলবেক না। তুরাই শুধু অন্যরকম। একবার তো এখুনকার একটা ছেল্যা ছপি তুলতে চায়নি বলে এক বাবুর কি মিজাজ। আমি ওর হয়ে ক্ষমা চেয়ে মিটমাট করলাম শেষমেশ । তাই ভাবলাম, তুরা ভুলে গেলি নাকি ছপি নিতে। অনিমেষ বলে -তোমাদের এই চাবাগানের বেশ কিছু সুন্দর ছবি আমি তুলেছি। একটা বাচ্চা কি সুন্দর একটা ছাগল নিয়ে খেলছিল সে ছবিও নিয়েছি আমরা। তোমার কোনো চিন্তা নেই। তাছাড়া আমরা তো দুজনে তোমাদের দেখতে এসেছি তোমরা কেমন আছো? আমরা কি ভোটে দাঁড়াবো নাকি যে আমাদের বিজ্ঞাপনের দরকার ? শোভন হেসে বলে - তবে তোমার যদি ছবি তুলতে ভালো লাগে, তাহলে তুলে দিতে পারি। পরে পাঠিয়েও দিতে পারি। বিষন্ন হেসে বৃদ্ধ বলে, আমাদের ভালো লাগা নাই বাবু। সে ছিল ছুটোবেলায়। আসলে বাবু, গতর খাটায় চা বাগানটোতে কাম করতাম আমরা । বউ, ছেলা, বিটিরাও করতো। গরিপ ছিলাম বাবু, ভিকারি ছিলাম না । এখুন কাজ নাই, তাই ভিকারি হইছি। নিজেকে ভিকারি দেকতে কি ভালো লাগে বাবু? তবু, তুরা এত উবগার করছিস আমাদের । তুদের দয়ায় খেতে পেছি। তা তুদের পোচারের দিকটাও তো আমাদের ভাবতে হবে । আমাদের তো কিছু দেয়ার মতো জিনিস নাই, তাই সম্মানটুকুই না হয় দিলাম তুদের। না হলে তুদেরই বা কিসের দায়। সরকারের কাছে আমরা তো ভুটের সনখা ছাড়া কিছু না । আমাদের মানুষ ভাবে কে?
যদিও শোভন আর অনিমেষ নিজেদের বিবেকের প্রেরণায় এই সেবাকাজে গিয়েছিল, কোনো বিজ্ঞাপন এর আশায় নয়, তবুও এই দরিদ্র, অশিক্ষিত বৃদ্ধের সামনে সেই মুহুর্তে নিজেদের বড় অপরাধী আর অসহায় বলে মনে হল।সমাজের মুল স্রোতের প্রতিনিধি হিসেবে একরাশ লজ্জা নিয়ে ফিরে এলো ওরা।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register