Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

।। ত্রিতাপহারিণী ২০২০।। T3 শারদ সংখ্যায় নীলাঞ্জন ভৌমিক

maro news
।। ত্রিতাপহারিণী ২০২০।। T3 শারদ সংখ্যায় নীলাঞ্জন ভৌমিক

শারদ প্রাতে

বেশ মনে আছে। শেষ রাত্তিরে মায়ের ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙা। আশির দশকের জলপাইগুড়ির আলগা হিমভেজা আশ্বিনের ভোর। রেডিওগ্রাম। চাদরের আড়াল থেকে ঘুমজড়ানো মুখ বাড়ানো একটুকরো গড়িমসির ফাঁকেই বেজে ওঠা শঙ্খধ্বনি ... তারপরেই উদাত্ত কন্ঠে " আশ্বিনের এই শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর : ধরণীর বহিরাকাশে ...."
বুকের ভিতর কি যেন একটা আবেগ উথাল পাতাল করে দিত, তড়াক করে উঠে বসতাম বিছানায়, পুজো কি তবে এসে গেলো সত্যিই !' ... তাই চিন্ময়ীকে মৃন্ময়ীরূপে আবাহন।" --- বলা শেষ হতে না হতেই সেই গানের শুরু, যা শোনার জন্য আপামর বাঙালীর মতো অপেক্ষা করে থাকতাম একটি বছর --- বা-আ-আ-জ-লো-ও-ও তো-ও-মা-আ-র আলোর বেণু-উ-উ ....
দু' তিন দিন আগে থেকেই সব বাড়ির রেডিও ঝাড়পোঁছ হয়েছে। খতিয়ে দেখা হয়েছে ব্যাটারির হাল হকিকত। পাড়ার ক্লাব চোঙা লাগিয়ে ফেলেছে, শেষ রাতে আকাশবাণীর 'মহিষাসুরমর্দিনী 'কে পল্লীবাসীর কানের ভিতর দিয়া মরমে পশাইতে !
অন্তরে যা লুকিয়ে রাজে, অরুণবীণায় সে সুর বাজে, সেই আনন্দযজ্ঞে সবার মধুর আমন্ত্রণ ভেসে আসতো ইথারতরঙ্গে, আজও যেমন আসে শরতের এই আকাশবীণায় ! 'হে মহালক্ষী, জননী, গৌরী, শুভদা ...' মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় সুরের টানে প্রাণের আগল দিতেন খুলে। 'তব অচিন্ত্য রূপচরিতমহিমা'- য় অবগাহন করে একসময় পথ হারিয়ে ফেলতাম 'রূপং দেহি জয়ং দেহি'-র অন্তহীন স্তোত্র পাঠে !
ততক্ষনে বাজির শব্দে ভোরের পাখিরা শান্তির কুলায় ছেড়ে দেশান্তরী। প্রভাতি সমীরণ আলোয় পাগল। দেবীপক্ষের সুচনা আজ। নিখিল বিশ্বে তাঁরই জয়গান !
উঁচু ক্লাসে উঠে মহালয়ার সকালে বন্ধুদের সাথে মিশে যেতাম জনস্রোতে। রাস্তা উপচে পড়া হাসিমুখ মানুষ ... আনন্দের সাগরে যেন এসেছে বান ... হাঁটতে হাঁটতে করলা নদীর বাঁধ। শান্ত নদীটি পটে আঁকা ছবিটি ... বাঁধের সবুজ ঘাসের গালিচা ঝাঁপাই জুড়েছে নদীর জলে ... সেই সবুজ মখমলে একের পর এক অগ্নিমুখী চকলেট বোম ছুঁড়ে দিচ্ছে সাইকেলবাহিত নওজোয়ান। কত না খিলখিল - খুনসুটি - লাস্য - রহস্য সেই নবযৌবনের জোয়ারে !
আগমনী আলোয় পায়ে পায়ে শেষ পর্যন্ত জুবিলী পার্ক। তিস্তার আদিগন্ত চরে শ্বেতশুভ্র কাশফুলের অথৈ সাগর। আমরা বেঁধে নিতাম কাশের গুচ্ছ। সেই কাশবনে নির্জনতা খুঁজে নিতো কেউ কেউ। শরতের আকাশও বোধহয় চাইতো একলা হতে, মেঘগুলোকে সরিয়ে দিয়ে … আর ভাবনা আমার একলা হতে চাইতো, একা, আকাশনীলে ....
বাড়ি ফিরে … বাইরের আঙিনায় ঠাকুমার নিজের হাতে পোঁতা শিউলি গাছ। তার নীচ থেকে, গাছ থেকে পেড়ে আনা এক আঁজলা শিউলি ফুল জলে ভেজা সাদা চিনেমাটির পীরিচে বাইরের বসার ঘরের কাঠের সেন্টার টেবিলের ওপর। তাজা।
আর সেই কাশফুলের গুচ্ছের ফাঁক দিয়ে, শিউলি ফুলের মন মাতানো গন্ধ বেয়ে পূজোটা যেন কখন আনমনে টুক করে খিড়কি দোর দিয়ে আমাদের ঘরে ঢুকে পড়ত। আজও সে সেভাবেই আসে। মহালয়ার সকাল বেলায়।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register