Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

।। ত্রিতাপহারিণী ২০২০।। T3 শারদ সংখ্যায় ‎সোমনাথ সরকার

maro news
।। ত্রিতাপহারিণী ২০২০।। T3 শারদ সংখ্যায় ‎সোমনাথ সরকার

মনের মানুষ

উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, কাছেই বানারহাট। চা বাগানের জঙ্গল। জঙ্গলের ভিতর নদীর ধারের বাংলো। এক সন্ধেবেলা বারান্দায় বসে আছেন সব্যসাচী। সামনে কুয়াশায় মোড়া অমাবস্যার জঙ্গল। কানে আসছে নদীর জলের ছলাৎ ছলাৎ আওয়াজ। সব্যসাচী ডুয়ার্সের জঙ্গলে কর্মরত। ফরেস্ট অফিসার, অবিবাহিত। সেখানে তাঁর সাথে থাকে ড্রাইভার রামু। গার্ড বাহাদুর। আর থাকে কাজের ছেলে মংলু। সাঁওতাল কিন্তু বড় ভালো। হাট-বাজার রান্না-বান্না সবই বেশ গুছিয়ে করে। সত্যি কথা বলতে কি মাঝে মধ্যে ও মহুয়া খেয়ে আসে। বিরাট গুন ভালো বাঁশি বাজায় । প্রতিদিন বাঁশির সুরে জঙ্গল মাতিয়ে একা একা ঘুরে বেড়ায়। হানা বাড়ির মতো কয়েকটি পোড়ো বাড়ি জঙ্গলের ভিতর। অমাবস্যার পর আসে ফাল্গুনী পূর্ণিমা। এ যেন জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে। এ হেন পরিবেশে মংলু বাংলো বারান্দায় উদাস মনে বসে আছে। সব্যসাচী একটা বই পড়ছিল নিবিষ্ট মনে। ওর দিকে লক্ষ্যই করেনি । তখন ভর সন্ধ্যা। হঠাৎ ওর বাঁশির আওয়াজ সব্যসাচীর কানে এল। মনপ্রান একেবারে ভরে গেল। কি করুন সুরে ও বাজাচ্ছে। বাঁশের বাঁশি থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে যেন কারো কান্না ঝরছে। সব্যসাচীর মনটাও কেমন যেন হয়ে গেল। বইটা বন্ধ রেখে পায়ে পায়ে বাইরে এসে দেখলেন মংলু জঙ্গলের দিকে চেয়ে বাঁশি বাজিয়ে যাচ্ছে আর ওর চোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে। মনে হল ওর কোন গোপন ব্যথা আছে সেটা ওর বাঁশির ছোঁয়ায় জেগে ওঠে। চুপি চুপি ওর পিঠে হাত রাখতেই ও চমকে উঠলো। হঠাৎ ওই সময়ে ঐখানে সব্যসাচীকে দেখে তাড়াতাড়ি চোখ মুছে হেসে বলল-- বাবু তুই ইখানে? মংলু তোর কী এমন ব্যথা। আমাকে বল, কথা দিচ্ছি কাউকে বলবনা। হনহন করে কোন কথা না বলে মংলু সেখান থেকে চলে গেল। ঘন্টা খানেক পরেই ও গেট খুলে রোজকার মতো জঙ্গলে বেড়িয়ে পড়ল ওর ভূত টূত আপদ বিপদের কোন বালাই নেই। কৌতুহল বশত: সব্যসাচী রাইফেলটা হাতে নিয়ে পিছু ধরল। বেশ কিছুদূর গিয়ে দেখল মংলু পাগলের মত একটা অশ্বত্থগাছের তলায় মাটিতে হাত বুলাতে লাগলো। গড়াগড়ি খেতে লাগলো তারপর বাঁধ ভাঙ্গা নদীর মতো অঝোরে কাঁদতে লাগলো । হঠাৎ কাঁকরে পা পিছলানোর পাতার আওয়াজ উঠে বসে চেঁচিয়ে উঠলো - - - তুই ইখানে ক্যানে? তারপর নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলল - - - বাবু শুন, তুকে আজ শুনাবো আমার কিসের দু:খু, কিসের ব্যথা¡ বলে হাউহাউ করে কাঁদতে লাগলো । পূর্ণিমা রাত, জ্যোৎস্নায় ভরে গেছে চারিদিক । কেবল শুকনো ঝরাপাতার আওয়াজ। মংলু বলতে থাকলো - - - - জানিস বাবু ¡ ইখানে আমার মুংলী বাঘের পেটে গ্যাছে, এমনই এক পূর্ণিমা রেতে। সেছিল আমার মনের মানুষ, কাছের মানুষ । কিন্তু তুই আমাকে কথা দে, কাকেও বুলবি নাই। - - - - ঠিক আছে কথা দিলাম। তুই বল্। মংলু বলতে থাকে - - - - - - - এই দিনে ও রোজ আসে । আমার সাথে দেখা করে। তাইতো ছুটে ছুটে আসি। মনের মানুষ বুলে কথা। কোন কথা না বলে সব্যসাচী চুপ করে শুনে যাচ্ছে আর অবাক হচ্ছে। নীরবতা ভঙ্গ করে মংলু হঠাৎ প্রশ্ন করে- - - - বাবু তুর কোন মনের মানুষ নাই? সব্যসাচী ঘার নেড়ে জানালো - - - - না। তু মিথ্যা বলছিস বাবু। মনের মানুষ না থাকলে কি মানুষ বাঁচে? আমাকে তুই মিছা বলছিস। সব্যসাচী বললেন - - - না মংলু মনের মানুষ একদিন ছিল, কিন্তু আজ আর বেঁচে নেই। মংলু কিন্তু এতে বিশ্বাস হল না। মাথা নেড়ে বলল - - - - সি কখনো হয়? মনের মানুষ কখনো হারায় না। তুই ঠিক মতো খুঁজি নাই। খুঁজলে পেয়ে যাবি। সব্যসাচী মংলুর কথা শুনে হতবাক। উপলব্ধি ও অনুভূতির দুয়ারে হাত বাড়িয়ে সব্যসাচী সারারাত জেগে বসে তোলপাড় করে খুঁজলো এবং শেষে দেখলো সেই মনের মানুষের খোঁজে অশত্বগাছের তলায় মংলু গড়াগড়ি খাচ্ছে ও কেঁদে কেঁদে বলছে - - - ওই বেইমান পূর্ণিমার চাঁদ সব দেখেও হাসছে। একি রহস্য রোমাঞ্চ। হঠাৎ সব্যসাচী দেখলো মংলুর সামনে একটা চিতাবাঘ। দেখামাত্রই গুলি। মংলু ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে অজ্ঞান হয়ে গেল। আর জ্ঞান ফেরেনি। সত্যিই কি তাই? এদিকে সব্যসাচী উদ্ভ্রান্তের মতো আকাশের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। দেখে মনে হয় যেন একরাশ হতাশা ও একাকিত্ব তাঁকে গ্রাস করেছে। ও যেন কিছু বলতে চাই......... মনের মানুষ বলে কথা।।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register