Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

।। ত্রিতাপহারিণী ২০২০।। T3 শারদ সংখ্যায় শিবাজী সান্যাল।

maro news
।। ত্রিতাপহারিণী ২০২০।। T3 শারদ সংখ্যায় শিবাজী সান্যাল।

ভাল আছি বাবা

আজ প্রদীপের জন্মদিন । সকালে ফোন করে ওকে আশীর্বাদ জানাল শরদিন্দু । তারপর জিজ্ঞেস করল , “ রূপা ভাল তো ?” উত্তরে প্রদীপ বলল , “ ভালই হবে । বড় স্বাধীনচেতা , কিছুই মুখ ফুটে বলে না । যা মনে হয় তাই করে । আপনি বরং ওকেই জিজ্ঞেস করবেন । ” এই প্রথম প্রদীপের কাছ থেকে এমন উত্তর পেয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়ল শরদিন্দু । কিছু হয়েছে কী ? কোনো চিড় ধরেনি তো ওদের সম্পর্কে ? একমাত্র সন্তান এই রূপা । বড় আদরে বুকে করে বড় করেছে ওকে । পড়াশোনায় খুব ভাল ছিল । ক্যাম্পাস থেকেই ভাল চাকরি পেয়ে যায় । বিয়ের কথা শুরু হতে ও বলেছিল , “ ওদের কিন্তু বলে দেবে আমি চাকরি করব । এত পড়াশোনা কী শুধু ঘর সামলানোর জন্য করেছি ? ” প্রদীপের সঙ্গে বিয়ের সময় সে কথা বলেছিল শরদিন্দু , ওরা খুশিমনে মেনেও নিয়েছিল । আজও রূপার ব্যাপারে কিছু হলেই বড় বিচলিত হয়ে পড়ে , রান্নাঘরে গিয়ে মায়াকে ফোনের কথাটা বলল । শুনে মায়া বলল , “ এত ভেবো না , মানুষ সবসময় অত ভেবে কথা বলে না । ” তবুও মন মানে না । কদিন পর মায়ার আপত্তি সত্ত্বেত্ত শরদিন্দু ওদের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছল । দরজা খুলে লিপিকা , রূপার শ্বাশুড়ী , একবারে অবাক্ । ওকে দেখে খুশি হননি বেশ বোঝা গেল । ওর হাতে মিষ্টির প্যাকেটটা দিতে গেলে বলল , “ এসব কেন এনেছেন ? আমরা কেউ মিষ্টি খাই না । আপনি এটা ফেরত নিয়ে যান। ” বড়ই অপ্রস্তুত হল কথাটায় । পরে রূপা এসে কাছে বসল , অনেক কথা হল । শরদিন্দু জানতে চেষ্টা করছিল সব ঠিক আছে কী না । বিরাট ধাক্কা খেল যখন শুনল যে রূপা চাকরি ছেড়ে দিয়েছে । তবে রূপা বলল , “ না আসলে আমিই বাপ্পার কথা ভেবে কাজ ছেড়েছি । ” কথাটা যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না । একসময় লিপিকা আবার এল । বাপ্পার জন্য আনা পোষাক দেখে বলল , “ এসব জামাকাপড় কী বাপ্পা পড়বে ? যাক গে , একবার তোমার শ্বশুরকেও দেখ , ওর খাবার সময় হয়ে গেছে আর তুমি তো দেখছি বাবাকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে আছো । এ ভাবে কী চলে ? ” ফিরতি পথে শরদিন্দু ভাবছিল , প্রথমে প্রদীপের অমন উত্তর , তারপর রূপার চাকরি ছাড়া , ওর শ্বাশুরির এমন ব্যবহার — নাঃ কোথায় যেন একটা ভাঙ্গন উঁকি দিচ্ছে । রূপা ওদের কথা ভেবে নিশ্চয়ই কিছু লুকোচ্ছে । ও নিজের বুকের ভেতর একটি কষ্ট অনুভব করল । রূপা কী ভাল নেই ? ভগবান ওকে রক্ষা কর , ওর চোখে যেন কোনদিন জল না আসে ।
দুদিন বড়ই অস্বস্তি নিয়ে কাটাল শরদিন্দু । সর্বদাই শুধু রূপার চিন্তা । উদ্দেশ্যহীন এদিক ওদিক হেঁটে এল । পেপার পড়তে গিয়ে কিছুই পড়া হল না । তৃতীয় দিন ও আর নিজেকে রুখতে পারল না , রূপাকে ফোন করল , “ মা , একটা কথা সত্যি করে বল , তুই ভাল আছিস তো ? সব ঠিক আছে তো ? ” কিছুক্ষণ কোনো উত্তর নেই । তারপর রূপা বলল , “ আমি ভাল আছি বাবা । ” শরদিন্দুর মনে হল ওর গলাটা কাঁপছিল ।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register