Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

মেঘ কাব্যে বিদিতা ভট্টাচার্য্য চক্রবর্ত্তী (নিউ জার্সি, আমেরিকা)

maro news
মেঘ কাব্যে বিদিতা ভট্টাচার্য্য চক্রবর্ত্তী (নিউ জার্সি, আমেরিকা)

এই পৃথিবীর সব দুর্গাদের জন্য...

হে দুর্গে দুর্গতিহারিণী~

যে দুর্গারা অসুর পীড়িত যে দুর্গাদের মরতে হয় যে দুর্গারা ঘরে ও বাইরে যে দুর্গাদের শুধুই ভয়
যে দুর্গাদের হাতে কোনো অস্ত্র দেননা দেবতা যে দুর্গাদের বস্ত্র হরণে, স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ দেননা ভরসা যে দুর্গারা হাতের পুতুল, অত্যাচারিত, অসহায় যে দুর্গাদের অপমানে আইন কেবল অন্ধ হয়
সেই দুর্গা সবার ঘরেই তাদের পুজো করছে -কে? ঘটা শুধুই বহিরঙ্গে অন্তরঙ্গে কাঁদছে মেয়ে--
এই পুজো হোক অন্তরঙ্গে-- বহিরঙ্গে জাগুক মেয়ে।।
এই দুর্গার গল্পটা শুরু হয় ঠিক তার জন্ম মুহূর্ত থেকে ঠিক সেই সময় থেকে তাকে ঘিরে নানা দুশ্চিন্তা ভ্রূণাবস্হার সংকট কাটিয়ে উঠে হাত পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে ষড়যন্ত্রের মুখে ছাই দিয়ে যদি সে পৃথিবীর আলো দেখে ফেলে তাহলেও সাধারণ নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত যেকোনো পরিবারেই শুরু হবে চিন্তা তাকে পাত্রস্হ করার কত তাড়াতাড়ি কিভাবে কবে কোথায় শিক্ষা দীক্ষা বাঁচা মরা দূরের কথা একটু বড় হতে না হতেই তার শরীরের গঠনতন্ত্র জননতন্ত্র চামড়ার রং ইত্যাদি প্রভৃতি রাশি নক্ষত্র নিয়ে কাটা ছেঁড়া আর সব শেষে কিশোরী হতে না হতেই তার কোমড় তলপেট আর বুক নিয়ে টানা হ্যাঁচড়া দলাদলি তারপর কপালে হাতে চিহ্ন দিয়ে সতীত্বের সহজপাঠ বাদ যায় না কিছুই।
লক্ষী মেয়ে থেকে লক্ষী বউ লক্ষী বউ থেকে লক্ষী মা হতে হতে হয়তো তার দাঁত ভাঙে ভাঙে হাত পা চোয়াল শিরদাঁড়া বা কোমড়-পিঠ ইত্যাদি তার কাপড়ে লাগে আগুন হয়তো তার শরীরে ঢুকে যায় লোহার রড ফেটে যায় পাকস্হলী বেরিয়ে আসে আন্তরযন্ত্র তারপর উড়ে যায় সারা সংসার আর এই সব কিছু ভাঙতে ভাঙতে উড়তে উড়তে পুড়তে পুড়তে পেরিয়ে যায় বছর মাস দিন শতাব্দীর পর শতাব্দী আদিম গুহা জীবন থেকে অত্যাধুনিক জীবনযাত্রা অব্দি সব কিছু বদলায় শুধু বদলায় না তার দুর্ভাগ্য ঘরে বাইরে নিগৃহীত হয় সে রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত হয় তার শরীর মন আত্মা
আর তারপর আজও --- আমি বা আপনি--- তিনি বা সে--- একজন নারী অথবা পুরুষ এই সমাজ, ওই সমাজ বা সেই সমাজের বুকে দাঁড়িয়ে--- হতভম্ব হয়ে দেখি --- একের পর এক তারপর আর এক ---তারপর আর এক এইসব নৃশংস হত্যা বা আত্মহত্যা দৃশ্য।
সীতা থেকে দ্রৌপদী ওকসানা মেকার থেকে জ্যোতি সিং এলিজাবেথ পেনা থেকে জেনিফার আর্টম্যান বা মনীষা কারো জন্যই সেদিনও কিচ্ছু করা যায়নি কিচ্ছু করা যাচ্ছে না আজও কিছুতেই আর কিচ্ছু করা যাবে না হয়তো কালও সে দলিত রমণী হোক বা উচ্চ বর্ণ তরুণী অশিক্ষিতা হোক বা পাশ করা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার সে উচ্চঘর হোক বা রাস্তার রক্ষা পায়নি কেউ আর পাবে না এত দিন বা কোনোদিন
পদ্মিনীর মতো জহরে প্রাণ দিয়ে নয় মৃন্ময়ী প্রতিমার মতো জলে ভেসে গিয়ে নয় অসহায় অপমানিতের মতো অশ্রুতে হেরে গিয়ে নয় আমাদের ফিরে আসতে হবে ঘুরে দাঁড়াতে হবে নিজেই নিজের ভরসায় আত্মরক্ষার তাগিদে ধারণ করতেই হবে অস্ত্র--- ছলে বলে কৌশলে কপটে অকপটে ফুটিয়ে তুলতে হবে নিজেদের নতুন রূপ --- নতুন ভঙ্গি তীব্র ক্ষিপ্ততায় নিষ্ঠুর আঘাতে ছিঁড়ে ফেলতে হবে নিজেদের প্রাচীন খোলস---
কিছুটা বেশী ঘাড় কিছুটা বেশী মাথা কিছুটা বেশী পেশী কিছুটা বেশী শক্তি কিছুটা বেশী দৃষ্টি আর কিছুটা বেশী বুদ্ধি দিয়ে তৈরী করতে হবে নিজেদের নতুন শরীরী কাঠামো সেখানে থাকবে না স্তনের লালিত্য তলপেটের কমনীয়তা সে হবে নির্লজ্জ পুরুষের চেয়ে তার অন্তর হবে কঠিন পাথর সে একাই লড়বে অসুরের বিরুদ্ধে ছিন্ন করবে মধু কৈটভের মস্তক ছিনিয়ে আনবে জয় আর ঋক্ মন্ত্রে ঘোষণা করবে আত্ম পরিচয়।। "ইত্থং যদা যদা বাধা দানবোত্থা ভবিষ্যতি ।। তদা তদাবতীর্যাহং করিষ্যাম্যরিসংক্ষয়ম্।।" শ্রীশ্রীচন্ডী শ্লোকঃ৫৪-৫৫
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register