Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ছোটগল্পে আনোয়ার রশীদ সাগর

maro news
ছোটগল্পে আনোয়ার রশীদ সাগর

স্রোত

লিলি অনেক বার শিক্ষকদের মুখে শুনেছে, পাখিদের কোনো সীমানা নেই। কবিতা বা গানের মাধ্যমে অনেক কবিই পাখিদের মত মুক্ত আকাশে উড়তে চেয়েছে। লিলিও অনুপ্রাণিত হয়ে, নিজেকে পাখিদের মত স্বাধীন ভাবতে শিখেছে। পাখিরা কী আকাশের ঠিকানায় স্বাধীন?- এ প্রশ্নও করে নিজেকে সে।
সকালে লিলি ভৈরব নদীতে গোসল করতে গেছে। বেশ কটা শালিক কিচির-মিচির ডাকতে ডাকতে উড়ে এসে নদীর ধারের শিমুল গাছে বসে। লালটুকটুকে শিমুল ফুলের কুঁড়ি ফুঁটেছে মাত্র। হঠাৎ পাখিগুলো ক্যাঁচোর-ক্যাঁচোর করতে করতে নদীর ওপারে বাঁশবাগানের মধ্যে হারিয়ে যায়। লিলি নদীর ভিতর মাজাপানিতে নেমে, বুকের কাপড় পানির জলে ধুতে চেষ্টা করতেই আবার শালিকগুলো উড়ে এসে শিমুল গাছে এসে বসে। লিলি কাপড় ধোওয়া বাদ দিয়ে চোখ রাখে শিমুল ফুলে। ভৈরব নদীর ওপারে ভারতের গাছপালা ও মানুষের বসবাস।এপারে বাংলাদেশের মানুষের বসবাস। তবে নদীতে গোসলের সময় কারো মনে থাকে না, তারা দু'দেশের নাগরিক।আচার-আচরণ ও কথাবার্তায় পানির জলে ভেসে যায় দ্বিজাতি-তত্ত্ব। এখানে সবাই বাঙালি। ডুব খেলতে,সাঁতার কাটতে,কান্না-হাসির গল্প করতে পার্সপোর্ট লাগে না। হঠাৎ দড়াম করে গুলির শব্দে বেশ কটা পাখি ঘুরতে ঘুরতে গাছের মগডাল থেকে নিচে পড়ে যায়।দু'জন ভদ্রলোক দৌড়ে এসে আহত হরিয়াল পাখি কটা ধরে নিয়ে চলে যায়।ঘানিগাছে বাঁধা বলদ গরুর মত জীবন মনে হয় লিলির কাছে।বড় বিরক্ত লাগে তার।সকালের বসন্ত স্নানের আনন্দটা কেড়ে নেয়, এই পাখি হত্যাকারীরা। মন খারাপ করে,স্নান সেরে ভেজা কাপড়ে উঠে,মেঠো পথ ধরে, মাত্র দেড়'শ মিটার হেঁটে বাড়ি আসে। বাড়িটা নদীর ধারে হলেও পুরানো দালান বাড়ি।বাড়ির সামনে বড় একটা তেঁতুল গাছও রয়েছে।ঘর থেকে পরণের কাপড় পাল্টিয়ে,শুকনো শাড়ি পরে,উঠানে এসে বাঁধা তারের উপর ভেজা কাপড় ও গামছাটা নেড়ে দিচ্ছে।এমন সময় তেঁতুল গাছের মগডাল থেকে দুটো পাখি চ্যাঁ-চ্যাঁ করে চিৎকার করছে।লিলি ঘাড় উঁচু করে দেখতে থাকে,পাখির বাসা থেকে ছোঁ মেরে একটা বাচ্চা, কাক তার ধারালো ঠ্যাঙ দিয়ে ধরে নিয়ে চলে গেলো।লিলির মিষ্টি হাসিটুকু ম্লান হয়ে যায়,কী হচ্ছে সাত-সকালে।চারিদিকে শুধু ছোবল আর ছোবল। তেঁতুল গাছের নিচে বড় মাচা পাতা আছে।আশ-পাশের গ্রামের ও পাড়ার মানুষ এসে মিটিং করে এই মাচায় বসে।কদিন আগেও এ গ্রামের মহিলারা ভোরবেলা উঠে ঢেঁকিতে ধান ভানতো,ঢেঁকিছাটা চালের ভাত খেতো।বদলিয়ে যাচ্ছে জীবন ও জীবিকার পথ।তেঁতুল গাছ থেকে মাত্র এক'শ মিটার দূরে রাইচমিল দিয়েছে লিলির শ্বশুর আব্দুল্লাহ । এখানেই সময় দেয় লিলির স্বামী আনিস।এলাকার মানুষ গরু-মো'ষের গাড়িতে করে ধান-গম ভাঙিয়ে নিয়ে যায়।দু'একটা ইঞ্জিন চালিত ভটভটি গাড়িও চলছে এখন। এর মাঝে খবর আসে ওপারে মৌলবাদী দলের কারণে রামমন্দির নিয়ে উত্তেজনা চলছে।তার ঢেউ এপারেও কিঞ্চিৎ পড়েছে। শান্তির মধ্যে অশান্তি যেন ধীরে ধীরে জমা হচ্ছে।ভৈরব নদী যেন দু'ভাগ হয়ে যাচ্ছে।প্রাগপুর সীমান্তে দু'জনকে গুলি করে মেরে ফেলেছে বিএফএস।সচেতন মুসলিমলীগ পরিবারে বেড়ে উঠা লিলির মন বিষন্ন হতে থাকে। লাল সূর্য উঠার সময়, বিশাল পৃথিবীকে যে নদীর জলে একাকার হতে দেখে এলো সকালবেলা,সে নদীর জল তো আগের মতই দক্ষিণে বয়ে চলে যেতে থাকে!
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register