Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ছোটগল্পে উজ্জ্বল সামন্ত

maro news
ছোটগল্পে উজ্জ্বল সামন্ত

শয্যাসঙ্গিনী

প্রকৃত প্রেম বা ভালোবাসা নিঃস্বার্থ, কামনা-বাসনার ঊর্ধ্বে, স্বার্থত্যাগ, নিজের সুখ বিসর্জনে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। ভালোবাসার সাথী কখনো শয্যাসঙ্গিনী হয় , কখনো পাশে থেকেও যোজন দূরে সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছয় সন্দেহ ভুল-বোঝাবুঝি মান অভিমানে। আবার কখনো দূরে থেকেও ভালোবাসার মানুষের হৃদয়ের স্পর্শ অনুভব করা যায়।
অর্নবের স্কুলের প্রেমিকা রিয়া যথেষ্ট সুন্দরী কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তাদের প্রেমটা জমে ওঠে না। অর্ণব অনেক চেষ্টা করেও বিফল হয়। মেডিকেল কলেজের গন্ডি পেরিয়ে অগত্যা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি দেয়। ওইখানে বিদেশের হাসপাতালে কর্মরত মহিলা ডাক্তার সুস্মিতা র সাথে প্রেম ,পরিণয় এর সম্পর্কে পৌঁছয়। ওরা গাঁটছড়া বাঁধে। অর্ণব ও সুস্মিতা খুব সুখে দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করে। বছর ঘুরতেই একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। সুস্মিতা কলকাতার মেয়ে অর্ণবের শিলিগুড়িতে বাড়ি।
বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে অর্ণব দেশে ফিরে আসে। হঠাৎ দেখা হয় তার স্কুলের প্রেমিকা রিয়ার সাথে একাকী মধ্যরাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে। পুরনো প্রেমকে চিনতে কোন অসুবিধা হয় না গাড়ির হেডলাইট এর আলোতে। গাড়ি থামিয়ে অর্ণব নেমে জিজ্ঞাসা করে কেমন আছো রিয়া? রিয়া কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে। উত্তর দেয়, মোটামুটি আছি। কেন কি হয়েছে? রিয়া উত্তর দেয় তার স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত হসপিটালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। অর্ণব বাড়ি ছেড়ে দিতে চায়, রিয়া কিছুটা ইতস্তত করে পরে রাজি হয়। জনমানব শূন্য অন্ধকার গলিতে গাড়ি থামে। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ির দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে অর্ণব বলে এখন চলি তাহলে । রিয়া বলে, এক কাপ কফি খাবে না? বাড়িতে কেউ নেই, ফাঁকা। অর্ণব ইতঃস্তত বোধ করে। কিন্তু রিয়ার অনুরোধে ঘরের ভিতরে আসে।
রিয়ার একমাত্র ছেলে বোডিংয়ে থাকে। বিগত দু-তিন বছর ধরে স্বামী অসুস্থ চিকিৎসায় অনেক খরচা হয়ে গেছে, এখনোও হচ্ছে। জমানো টাকা প্রায় শেষ। আত্মীয়-স্বজন প্রথম প্রথম আর্থিক সাহায্য করলেও এখন আর কেউ এগিয়ে আসে না। বাধ্য হয়ে রিয়া এসকট সার্ভিস দেয় লোকচক্ষুর অজান্তে। মোবাইলে মেসেজ আসে রিয়ার, নির্দিষ্ট সময় ও জায়গায় পৌঁছে যায় গভীর রাত্রে। এরপর চলে তার উন্মুক্ত যৌবনের উপর সাইক্লোন, টর্নেডোর মত ঝড়। নির্জনতার অন্ধকারে এখন এসব তার গা সওয়া হয়ে গেছে । নিজের দুঃখ বুকে চেপে রাখে বোবা কান্নায়।
বৃষ্টিতে আদ্যোপান্ত ভিজে গেছে রিয়া। চটজলদি অর্ণব এর জন্য এক কাপ কফি করে আনে। মোমবাতির আলোয় রিয়াকে লক্ষ্য করে অর্ণব। রিয়া ভিজে শাড়িটা পাল্টানোর জন্য পাশের ঘরে যায়। রিয়ার হাতের কফি চুমুক দিতে দিতে পুরনো কিছু স্মৃতি তার মনে পড়ে। কিছুক্ষণ পর রিয়া ফিরে আসে। গাড়িতে আসতে আসতে তার দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন করে রিয়াকে। রিয়া কিছু জবাব দেয়। অর্ণব বাড়ি ফিরতে উদ্যত হলে রিয়া ঝর ঝর করে কেঁদে অর্ণবকে আলিঙ্গন করে। #শয্যাসঙ্গিনী হতে চায় সেই রাতের। নিজেকে সামলে নেয় অর্ণব। রিয়ার মুখ থেকে ওর জীবনের করুন কাহিনী শুনে ওর অ্যাকাউন্ট নাম্বার হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে দিতে বলে, চলে চায়। ১ দিন পর অর্ণব আবার বিদেশে ফেরে। রিয়ার মোবাইলে একটা মেসেজ আসে । নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারে না। এত টাকা? বুঝতে অসুবিধা হয় না ওর অর্ণব পাঠিয়েছে। এসএমএসটা ছিল #ইয়োর অ্যাকাউন্ট হ্যাজবিন ক্রেডিটেড অফ রুপিস ফিফটি ল্যাক্স। নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসার সঙ্গীকে নতুন জীবন দিতে ও তার ভালোবাসা রিয়ার স্বামীর জীবন ফিরে পেতে অর্নবের এই সাহায্য , রিয়া আমৃত্যু মনে রাখে শ্রদ্ধার সাথে....
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register