Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

মার্গে অনন্য সম্মান সুমিতা চৌধুরী (সেরা)

maro news
মার্গে অনন্য সম্মান সুমিতা চৌধুরী (সেরা)
অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার পাক্ষিক প্রতিযোগিতা পর্ব - ১২ বিষয় : রঙবদল তারিখ : ১৪\০৯\২০২০

অতিথি অভ্যর্থনা

সুপর্ণার সবচেয়ে প্রিয় ফুল আজ অবহেলায় অনাদরে পড়ে আছে তার ফিরতি পথে গাড়ির সিটে,তার হাতের নাগালেই। তবুও সামান্য ছোঁয়ার ইচ্ছেটুকু হচ্ছে না তার। একটাই তার কারণ, এটা অভীকের হাত থেকে নেওয়া। সুপর্ণার কাছে তার আর অভীকের অধ্যায়টা আজ মৃত । তাই অভীকের হাত থেকে নেওয়া অভ্যর্থনার প্রিয় ফুলটাও মৃত আজ সুপর্ণার কাছে । একবার জবাব দিতেই হতো সুপর্ণাকে,অভীকের কাছে, তার যোগ্যতার। তাই এই অনুষ্ঠানের আয়োজকদের অন্যতম এক উদ্যোক্তা অভীক জেনেই সুপর্ণা অনুষ্ঠানের অতিথি হওয়ার আহ্বান স্বীকার করেছিল । ফিরতি পথে গাড়ির গতির মতোই দ্রুত গতিতে ফিরছিল মন অতীতের কিছু ঘটনার স্মৃতিতে। অভীক তখন সদ্য এই অখ্যাত অঞ্চলের অঞ্চলপ্রধানের দায়িত্ব পেয়েছে কিছু স্থানীয় নেতার চাটুকারিতার সুবাদে, তাদেরই সুপারিশে । তাই তখন দীর্ঘ দশবছরের ভালোবাসাকে নিতান্তই খেলো, অবান্তর, অযোগ্য মনে হয়েছিল তার। সময়ে অসময়ে, দরকারে অদরকারে যে সুপর্ণা ছিল তার নিত্যসঙ্গী তাকে একেবারেই অবান্তর, অপ্রয়োজনীয় মনে করে হাতের ময়লার মতোই ঝেড়ে ফেলে দিতে একবারও ভাবেনি সে, বিন্দুমাত্র দ্বিধাও করেনি। সুপর্ণা ফোন করলে, বারবার চরম অপমানিত হতে হতো। মেসেজের উত্তরও আসতো চাঁচাছোলা ভাষায় । " তুমি যখন তখন ফোন ম্যাসাজ করে উত্যক্ত করো না। আমার এখন একটা স্ট্যাটাস আছে। তোমার মতো অনন্ত অবসর নেই আমার । আমাকে হাজারটা লোক চেনে,জানে, আসে। তার মাঝে তোমার বারবার ফোন, ম্যাসাজ খুব দৃষ্টিকটূ। বাড়িতে আছো, থাকো, ঘরের কাজকর্ম করো, সময় থাকলে ঘুমাও। শিক্ষা দীক্ষা যা আছে তাতে দু/ চারটে পাড়ার বাচ্চার টিউশনিও করতে পারো।শুধু আমায় ডিস্টার্ব করো না । আমার এখন দেখা করার সময় নেই, না কথা বলার । সত্যেনদারা আমার উপর ভরসা করে এলাকার উন্নয়নের দায়িত্ব দিয়েছে আমায় । তাদের মাঝে তোমার ফোন এলে বহুত প্রেস্টিজে লাগে।নিজের স্ট্যান্ডার্ড বুঝে চলো। কোনোদিন সময় সুযোগ পেলে, আমি নিজে ফোন করলে যা কথা হওয়ার হবে। আশা করি কথাগুলো মনে রাখবে।" হ্যাঁ সুপর্ণা কথাগুলো মনে গেঁথে রেখেছিল।চোখের জল শুকিয়ে গেলেও কথার ধারের ক্ষতকে জাগিয়ে রেখেছিল। আর সেই কথার ধারকেই একদিন নিজের কলমের ধার বানিয়ে ছোটোবেলার সুপ্ত ইচ্ছা, অবদমিত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলে আজ সে এই অঞ্চলের প্রখ্যাত লেখিকা। নানা অনুষ্ঠানে ডাক পায়,সম্মানিও হয়, লেখিকা পরিচিতিতেই। যেমনটা আজ পেয়েছিল এই অঞ্চলের নেতৃবৃন্দের এক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় অতিথি হিসেবে । চতুর্দিকে অনেক ছোটো বড়ো নেতার ভিড়ে অভীককে খুঁজে পাওয়াই দায় হয়েছিল আজ। শুধু সুপর্ণার পূর্ব পরিচিত ও স্থানীয় অঞ্চলের এক নিতান্ত মামুলি নেতা হওয়ার সুবাদে তাকে অভ্যর্থনায় পুষ্পস্তবক দেওয়ার সুযোগটুকু পেয়েছিল। প্রায় ছয়ফুট উচ্চতার অভীককে মাত্র পাঁচফুট উচ্চতার সুপর্ণার কাছে আজ কেন জানি বড়ো খাটো মনে হচ্ছিল। সুপর্ণার স্হির দৃষ্টির সামনে কুঁকড়ে গিয়েছিল অভীক। কোনোরকমে নমস্কার জানিয়ে পালিয়ে বেঁচেছিল যেন। নাকি হারিয়ে গিয়েছিল চিরতরে, নিজের যোগ্যতার মাপকাঠিতে হেরে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register