Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে দেবদাস কুণ্ডু (পর্ব - ৪)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে দেবদাস কুণ্ডু (পর্ব - ৪)

লড়াইয়ের মিছিল

পর্ব - ৪

---কল্যাণ বাবু আপনি বাড়িতে কাগজ পড়েন না? --আগে অনেক সময় নিয়ে পড়তাম। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। মিসেস রাগ করতেন। বলতেন—তুমি কোন স্কুলে পড়ো? --মানে! আমি অবাক হয়েছিলাম। মিসেস বললেন—দেখছি তো ঘন্টার পর ঘন্টা মনোযোগ দিয়ে কাগজ পড়ছো। আমি বললাম – কাগজটা কিনেছি তো পড়ার জন্য। পড়বো না? দেশের খবর রাখবো না? মিসেস বললেন-দেশের খবর রেখে তুমি কি করবে? দেশের খবরটাই বা কি আছে কাগজে? আমি বলেছি—তুমি পড়ো না বলে আর কেউ পড়বে না? --কেন পড়বে না। মিসেস বললেন—তুমি এতো মনোযোগ দিয়ে পড়ছো তো। কোন পরীক্ষার্থী ও এতো মনোযোগ দিয়ে পড়ে না। আমি বলেছি—যা করবো মনোযোগ দিয়ে করবো। --কই আমাকে তো কখনো মনোযোগ দিয়ে দেখ না। --কি আশ্চর্য তোমাকে আর এ বয়সে কি নতুন করে মনোযোগ দিয়ে দেখবো? পঞাশ বছর তো দেখলাম। --কাগজও তো 50 বছরের ওপর পড়ছো। তাতে এতো মনোযোগ দাও কেন? --নতুন নতুন খবর থাকে তাই মনোযোগ দিতে হয়। মিসেস বলেছিলেন—নতুন খবরটা কি শুনি? --ঐ—ঐ—তোতলাতে থাকলাম। বলতে পারলাম না কিছু। তখন মিসেস বললেন—আমি বলছি, তুমি শোন। নেতা নেত্রীর কিছু মিথ্যে ভাষন, যুদ্ধ বিমান কেনায় দূর্নীতি। জাতপাতের লড়াই। ধর্ষন খুন ব্যাংকের টাকা মেরে বিদেশে বহাল তবিয়তে থাকা। বন্যা ঝড়ের টাকা ঝড়ের মতো উড়ে যায়। হিসেব দেওয়া সম্ভব হয় না। পরিবেশ দূষনের প্রতিরোধ নেই। শিল্পে মন্দা। দব্যমূল্য বৃদ্ধি। শ্লীলতাহানি। অকারনে যুদ্ধ বিমান কেনা। সরকারি কর্মচারীদের স্যালারী বৃদ্ধি। দেশের বাকি লোক মানুষ নয়। চাষীর মৃত্যু। ড্রপ আউট বৃদ্ধি। সম্পত্তির লোভে মা বাবাকে খুন করা। মেয়েদের--- -এবার থামো তো। --কেন আমি কি ভুল বললাম? --ভুলও না। আবার সঠিকও না। --দোআসলা কথা বলো তো। সত্যি টা পড়তে পারো বলতে ভয় পাও কেন? --কথা সেটা নয়। তুমি কাগজ না পড়ে-- --সারাদিন তো টি ভি পড়া মুখস্ত করে ছাড়ছে। সেগুলো গিলছো। ঘর থেকে তো বেরিয়ে যেতে পারি না। অগ্যতা সেগুলো কানে আসে। কয়েক দিন কাগজ পড়ে দেখবে একই খবর রিপিট হচ্ছে । --কথাটা মিথ্যে বলোনি তুমি। --কবে কোন কথাটা মিথ্যে বলেছি? । আমি বললাম – এখন কি করতে হবে বলো? আর কাগজ পড়বো না। হরিদাস পাল বললেন-সত্যি কাগজ পড়া ছেড়ে দিলেন? --আরে মশাই এ নেশা কি ছাড়া যায় নাকি? সকালে কাগজ না এলে মনে হয় দিনই শুরু হয়নি। চায়ের দোকানে, সন্ধ্যায়, পাড়ার লাইব্রেরিতে পাট পাট করে পড়েনি। হরিদাস পাল বললেন—দিন দিন কাগজ পড়ার নেশাটা আমার কমে যাচ্ছে। মানুষ এতো বীভৎস নিষ্ঠুর হয়ে যাচ্ছে যে মনটা বিষয়ে যায়। আমার স্ত্রী ভালো আছে। লেখাপড়া জানে না। সন্ধ্যা বেলা রাসমনি, না হলে বামাখ্যাপা কিংবা নিমাই এসব দেখে। --আপনি তো মশাই ভাগ্যবান। --কোথায় আর ভাগ্যবান হলুম? --ব্রেন স্টোকের কথা বলছেন তো?এতে আশ্চর্য হবার কি আছে? দাঁত থাকলে যেমন দাঁতের যন্ত্রণা হয়, তেমনি ব্রেন থাকলে ব্রেন স্ট্যোক হবে। --তাহলে আপনি বলছেন, যাদের ব্রেন স্টোক হয়নি তাদের ব্রেন নেই? তাই তো? দুজনে হেসে ওঠেন। কল্যাণ বাবু বলেন—হরিবাবু আপনি কি খুব টেনশন করেন? -তা করি। --তাহলে ব্রেন স্টোক হবেই। ব্রেন নিয়ে সব সময় ছেলে খেলা করবেন ওরা কেন প্রতিবাদ করবে না? --ভালো বলেছেন আপনি। আচ্ছা আপনি টেনশন করেন না? --না। আমি কোন টেনশন করি না। --তাহলে আপনার ব্রেন স্টোক হলো কেন? এবার চুপ করে গেলেন কল্যান বাবু। ওদিক ওদিক চাইতে লাগলেন। --কি হলো চুপ করে গেলেন কেন? আপনি টেনশন করেন না তাও আপনার ব্রেন স্টোক হলো কেন? কল্যাণবাবু গলা খাকারি দিয়ে বললেন—এটা একটা রহস্য বটে। পালবাবু অবাক হয়ে বললেন—রহস্য! আচ্ছা শুনি কি রকম রহস্য?

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register