Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে দেবদাস কুণ্ডু (পর্ব - ২)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে দেবদাস কুণ্ডু (পর্ব - ২)

লড়াইয়ের মিছিল

পর্ব - ২

গাড়ি থেকে নামলো সুদর্শন পাল, গৌর ডাক্তার, জ্যাঠতুতু দাদা কমল, কাকার ছেলে দীনেশ। ওরা উপরে উঠতে লাগল। গাড়ি লক করে উপরে গেল সুদর্শন। রাত দুটোয় বেলারানির ফোন পেয়ে তড়াক করে উঠে বসেছিল সুদর্শন। পাশে তখন ঘুমে বিপাশা। সংগে সংগে পোষাক পড়ে বিপাশাকে না জাগিয়ে বাইরে থেকে মেন দরজায় তালা দিয়ে চাবিটা ছুঁড়ে দিয়েছিল ভিতরে। এখন ডাইভার মধুকে ডাকলে সে আসবে না। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ফোন করে দাদা কমল আর ভাই দীনেশকে। হার্ডকো মোড় থেকে ওদের তুলে নেয়। গৌরদাকে আগেই বলে রেখেছিল। হাউজিং এর সামনে থেকে তুলে গাড়ি ছুটলো ঝড়ের বেগে।
গৌরদা একটা চেয়ারে বসলেন। পালস দেখলেন। মাপলেন প্রেশার। চোখ টেনে দেখলেন। বললেন—এখনই হাসপাতালে ভর্তি করে দাও। ব্রেন স্টোক হয়েছে। কতটা হয়েছে বলা যাচ্ছে না। ওনার কি সুগার আছে? বেলারানি বললেন - না। - কোন দুশ্চিন্তা করেছিলেন? - হ্যাঁ। বড় জামাই এক্সিডেন্টে মারা যাবার পর থেকে ওনার মধ্যে একটা ভয় ঢুকে পড়ে। সব সময় বলতেন, আমি একসিডেনটে মরে যাবো। এই ভয়ে কারখানা বাড়ি যাওয়া ছেড়ে দিলেন। একজন ম্যানেজার রেখেছেন। সে এসে হিসাব দিয়ে যায়। - কখন হলো? গৌর ডাক্তার জিগ্যেস করলেন। - মাঝরাতে আমাকে ডেকে বলল, ওনার বুকে ব্যাথা হচ্ছে। আমি তেল মালিশ করে দিলাম। তবু কমলো না। দুটো ডিম খেয়েছেন রাতে। বলেছিলাম, দুটো ডিম খেয়ো না। গ্যাস হবে। শুনলো না। কোনদিনই শোনেনি কথা। খুব ঘাম হচ্ছিল। কথা আটকে যাচ্ছিল। আমি ভয় পেয়ে ছেলেকে খবর দেই। কমল আর দীনেশ হরিদাস পালকে কোলে করে নিচে নিয়ে গেলো। - গৌরদা আপনার ফিস। - লাগবে না। - কেন? এতো রাতে আপনি এলেন। ফিস নেবেন না কেন? - তুমি আমার ছেলেকে পড়িয়েছো। - আপনি টাকা দিয়েছেন। - টাকা দিলেও তোমার মতো শিক্ষক পাওয়া যাবে না। কি পরিশ্রম না তুমি ওর জন্য করেছো। আমি ভুলবো না। আজ সে প্রফেসর। তুমি তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে যাও। সময় নষ্ট করো না। সুদর্শন মনে মনে বললে, গৌরদা ওটা ছিল আমার যুদ্ধের সূচনাকাল। - আমি হেঁটে যেতে পারবো। কাছেই তো আমার বাড়ি। গৌরদা বললেন। - আপনি বলুন বাবা বাঁচবে তো? একটু ভরসা দিন। - ভরসা দিতে পারে ঐ একজন। আসি আমি। গৌরদা বেড়িয়ে গেলেন। বেলারানি হঠাৎ কেঁদে উঠলেন। বুঝতে পারছেন, তার শাখা সিঁদুরের আয়ু বুঝি ফুরিয়ে এল। - কেঁদো না মা। হরিঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করো। বাবা যেন সুস্থ হয়ে যান। গাড়ি ছুটছে। চালকের আসনে সুদর্শন। মনে পড়ল তার, এই বাবা একদিন তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলেন, সেই বাবাকে তার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত ? বিপ্লবী বারিন ঘোষ সরনির ওপর তিন কাটা জায়গায় হরিদাস পালের বাড়ি। যার বর্তমান ভ্যালু এক কোটি। সেই বাড়িতে হরিদাস পালের দুটো কারখানা। একটা আইসক্রিম আর অন্যটা হুঁশিয়ারি ফ্যাক্টরি। পুরনো একটা ভাড়াটে ছিল। আগে আরো ভাড়াটে ছিল। ভাড়াটে শুদ্ধ বাড়িটা কিনে ছিল কম দামে। আগের বাড়িওয়ালা বাড়িতে ঢুকতে পারতেন না। ভাড়াটেরা ভাড়া দিতো না। মাত্র একটা ঘর খালি ছিল। তিনি রিস্ক নিয়ে কিনে নিলেন। সব ভাড়াটেকে এক সংগে তুলতে গেলে তারা জোট বাঁধতে পারে। তখন রাজ্যে শ্রমিক দরদী সরকার। তিনি এক এক ভাড়াটেকে টাকা দিয়ে তুলেছেন। শুধু একটা ভাড়াটে তুলতে পারেনি। অনেক টাকা ডিমান্ড করেছিল। তিনি রাজি হননি। কেস চলেছে দশ বছর। কেসে হেরে গিয়ে তবে ঘর ছেড়েছে। একটা ছোট ঘরে সে থাকতো। একদিন হরিদাস পাল তার ঘরে ঢুকে বললেন-তোমাকে এঘর ছেড়ে দিতে হবে। - কেন? - এই ঘরে আমি নতুন অফিস করবো। - আমি কোথায় থাকবো? - সে ব্যাবস্থা তুমি করে নেবে। আমি তোমাকে এম এস সি পড়িয়েছি। আমার কর্তব্য শেষ। এবার তুমি তোমার পথ দেখ। - আমি কি অন্যায় করলাম যে তুমি আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছ? - না। তুমি কোন অন্যায় করোনি। কিন্তু আমি শূন্য থেকে জীবন শুরু করে লড়াই করে এই জায়গায় এসেছি। আমি চাই তুমি আমার মতোই লড়াই করো। বেলারানি সব শুনে সেদিন প্রতিবাদ করেছিলেন, - আমার ছেলে কি রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াবে? - রাস্তায় কি পার্কে দাঁড়াবে, আমি জানি না। - কেমন বাপ তুমি? - তুমি যা ইচ্ছে ভাবতে পারো। হ্যাঁ, আমি আজই চলে যেতে বলছি না। একমাস সময় দিচ্ছি। - কি করছিস? এখনই একসিডেনট হতো। দেখতে পারছিস না উলটো দিক থেকে গাড়ি আসছে। - খেয়াল করিনি। - কি ভাবছিস? কাকা ঠিক হয়ে যাবে। কমল বলল।
- তাহলে তুই বলছিস এখানে বিশেষ সুবিধা হবে না? নিউ লাইফে নিয়ে যাবো? - হ্যাঁ। ওখানের সেরা নিউরো সার্জেনট আমার পরিচিত। ওনার হাতে পড়লে কাকাবাবু সুস্থ হবেন। আমি স্যারকে ফোন করে দিচ্ছি। বিকাশের কথায় গাড়ি ঘুরিয়ে দিল সুদর্শন। বিকাশ তার বহুদিনের বন্ধু। হরিদাস পাল যখন তাড়িয়ে দিল, তথন সে ভেবেছে, কোথায় যাবে? কার কাছে যাবে? তখন বিকাশকে সব বলেছিল। বিকাশ শুনে বলেছিল,
- এই রকম অদ্ভুত মানুষও আছে! - কি করি বলতো? - কি আবার করবি? আমার কাছে চলে আয়। - তোর ফ্ল্যাটে তো একটা ঘর? - আমার বুকের ভিতর আরো একটা ঘর আছে।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register