" ডিয়ার ফ্লেজলিংস্.....এতক্ষণ তোমাদের যে ইন্ট্রোডাকটরি রিচ্যুয়াল হোলো সেটা খুবই ফর্মাল বা সামান্য...এতে তোমরা ইসপ্যামার আসল রহস্য বা তাতে তোমাদের ভূমিকা.... সেভাবে কিছুই জানতে পারো নি...বা বলা ভালো আমরা... তোমাদের চিনতে জানতে পারিনি...তাই এখন যেটা সবচেয়ে বেশি জরুরি... আমরা সেই কাজটাই করবো...তোমাদের কার কি স্পেশাল এবিলিটি বা পাওয়ার আছে সেটার আইডেন্টিফিকেশন...."
মিরান্ডার কথা গুলো মন দিয়ে শুনছিলাম... হঠাৎ পাশে ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাসের শব্দে চমকে উঠলাম....
"স্রোত রে...আর পারছি না এত লেকচার..মানে ইয়ে আর কি অবাক হতে.......যা ই হয়... বলে এটা নয়...এর পরের টা বেশি জরুরি...এই করে করে একের পর এক ভাট........"
" তোর শিক্ষা হয়নি না রে মিট্টি ??দেখলি তখন তোর নাম ধরে তোকে চাটলো..." প্যাম দাঁত চেপে ফিসফিস করলো...
"গার্লস...কথা বোলো না...কনসেনট্রেট করো.."
প্রিস্টেস আলিশার মৃদু বকুনি শুনেই মিট্টি আর প্যাম দু'জনেই পাথর
"এখন আমরা তোমাদের আইডেন্টিফাই করবো আগে...আর একটা কথা তোমাদের জানাই.... আমাদের এখানে স্টুডেন্টস্ দের সবচেয়ে প্রেস্টিজিয়াস গ্রুপের নাম "মিডনাইটস্ প্রাইড"...এই গ্রূপ নিজে নিজেই অনেক রিচ্যুয়াল প্র্যাকটিস করতে পারে...অনেক পাওয়ার পেতে পারে...সেই পারমিশন আমরা এই গ্রূপ কে দিয়েছি...তবে এই গ্রূপে সবাই আসতে পারবে না... নিজের এবিলিটি প্রমাণ করতে হবে.... গ্রূপ লীডার প্রোক্যাস্টিনেশন রিচ্যুয়ালের মাধ্যমে সিলেক্ট করবে কে বা কারা এই গ্রূপে থাকবে..থাকার যোগ্য....আর কারা থাকতে পারবে না...বলা যেতে পারে ইসপ্যামাতে আমাদের পরে এই গ্রূপ ই সবচেয়ে পাওয়ারফুল.."
বলতে বলতেই মিরান্ডা সস্নেহে আলোহার দিকে তাকালেন
আলোহাও গর্বিত মোরগের মতো এদিক ওদিক তাকালো...আর আমাদের দিকে তাকিয়ে অসম্ভব গর্বের আর তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো....
"এখন এই গ্রুপের লীডার হচ্ছে আলোহা মুখার্জি... আমি খুবই গর্বিত... আলোহা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নিজের পাওয়ার কে প্রুভ করতে পেরেছে...তোমরা হয়তো অবাক হবে...ওর মধ্যে ভ্যাম্পায়ার আর উইচ্ দুটোরই শক্তি আছে..ও আগের লীডার জুহেতার জায়গায় নিজেকে খুব সাকসেসফুলি প্লেস করতে পেরেছে...."
"শুধু ওকে....ভদ্র ব্যবহার আর কোথায় কার সামনে... এবং নিজের বন্ধু ও সঙ্গীদের সঙ্গে... কি রকম আচরণ করতে হয়...সেটা একটু ভালো করে শিখতে হবে...এই যা..."
অনিন্দিতার কথায় মিরান্ডা একটু থমকে গেলেন
" আসলে কি বলো তো অনিন্দিতা... বাচ্ছা তো..আর খুব পাওয়ারফুল ও..তাই একটু..."
" ম্যাডাম অনিন্দিতা ঠিকই বলছেন হাই প্রিস্টেস্......আলোহা মাঝে মাঝে খুবই অসভ্যতা করে...সেদিন আমার ক্লাসে আন্দ্রিয়া কে ঘোড়া থেকে টেনে নামিয়ে ফেলে দিয়েছিল... ও হার্ট ও হতে পারতো...আমি বলতে আমার মুখের উপর উত্তর দিয়েছিল... আমার বাবা হোম মিনিস্টার..আমি বেস্ট....তাই আমি সব কিছু সবার আগে করবো... আমি সেদিন ভীষণ রেগে গিয়েছিলাম কিন্তু...."
"আচ্ছা আচ্ছা.. ঠিক আছে ডায়ানা...ওরা জাস্ট ফ্লেজলিং....ছাড়ো....এসব কথা তো পরেও হতে পারে... এখানকার কাজ টা আগে তো সারতে হবে...তাই না? রাত শেষ হতে আর বেশি দেরীও নেই "
মিরান্ডা দ্রুত একবার অনিন্দিতার দিকে তাকিয়ে নিলেন....
"ভেরি ব্যাড...আলোহা ডিয়ার... তুমি পাওয়ারফুল ,মানছি... কিন্তু বড় হচ্ছো তো?? দুস্টুমি তো কমাতে হবে এবার...তাই না??"
আলোহা আধো আধো নেকু নেকু গলায় " স্যঁরি ম্যাঁম" বলে চকিতে একবার অনিন্দিতার দিকে তাকিয়ে নিয়েই ... লক্ষ্মী মেয়ের মত মিরান্ডার দিকে তাকিয়ে রইলো....
"শালা সব জায়গায় গ্রূপবাজি আর পক্ষপাতিত্ব...
সে ইসপ্যামা হোক...আর যমের বাড়ি হোক...তবে ঐ অনিন্দিতা টা একদম সুপার...আলোহাদের একদম সিধে করে দিয়েছে...কি বল্??" আবার কানের কাছে মিট্টির ফিসফিস।
তাহলে এখন আমরা তোমাদের পাওয়ার আইডেন্টিফিকেশনের কাজ টা আগে সেরে ফেলি....প্রিস্ট টাইরেসিয়াস.... আপনি প্লিজ এবার যা করার তাড়াতাড়ি করুন....
প্রিস্ট টাইরেসিয়াস সামনে এগিয়ে এলেন....
অদ্ভুত মানুষ উনি....আমি ভাবলাম...একটু আগেই...ডিনার খেতে খেতেই আলোচনায় শুনেছি...উনি অসম্ভব পাওয়ারফুল.... নিজের ইচ্ছেমত...বছরে কিছুদিন উনি মেয়ে থাকেন....তখন ওনাকে প্রিস্টেস বলতে হয়....আর বাকি দিন গুলো পুরুষ....আসলে উনি বোধহয় নারী পুরুষের লিঙ্গ বিভাজনের উর্দ্ধে একজন অস্তিত্ব বা পৃথিবীর প্রচলিত ধ্যান ধারণার অনেক উপরের একজন.....আমি ঠিক করলাম ওনাকে আমি প্রিস্ট বা প্রিস্টেস কিছুই বলবো না,...শুধুই প্রফেসর বলবো....
প্রফেসর টাইরেসিয়াস এগিয়ে এসে সামনে রাখা বিরাট টেবিলটার উপর একটা বড় স্বচ্ছ গ্লোবের মত জিনিস রাখলেন...(আমি হলফ করে বলতে পারি একটু আগেও ওটা ওনার হাতে ছিলো না)....
উনি গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন...ফ্লেজলিংস... তোমাদের মধ্যে এক এক জন এসে এই মেটামরফোস বলে হাত রাখো...
আমি ...আমি.. আমি আগে যাবো....রিজ আমাদের প্রায় ধাক্কা দিয়ে ঠেলে সরিয়ে আগে এগিয়ে এল...."এটা হয়ে গেলে কি রুমে ফিরে যেতে পারবো স্যার?? ইয়ে মানে প্রিস্টেস...না না প্রিস্ট...না কি প্রফেসর???"
আগে এসে এখানে হাত রাখো..এতো ছটফট্ করছো কেন?? টাইরেসিয়াস একটু কড়া ভাবেই রিজ্কে বললেন...
"ওর কি পটি পেয়েছে নাকি বল্ তো?? সমীর ডাইকোর কানে কানে বললো..প্রথম থেকেই দেখছি কিরকম অস্থির অস্থির করছে যেন!!!"
ডাইকো কোনো উত্তর দিলো না....ও খুব মন দিয়ে টাইরেসিয়াসের দিকে তাকিয়ে ছিল... আমার মনে হলো টাইরেসিয়াসের গলা দিয়ে যে নারী ও পুরুষের দুরকম আওয়াজ বেরিয়ে আসছে...সেটা ও ঠিক শুনছে... নাকি ওর মনের ভুল.... সেটাই মন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে....
আমার ভাবনার মধ্যে ই রিজ্ গিয়ে স্বচ্ছ...একটা অদ্ভুত চাপা আলো বেরোনো গ্লোবটাতে হাত রাখলো...আর সঙ্গে সঙ্গে টাইরেসিয়াস ওর সেই হাতটার উপর নিজের হাত রেখে অদ্ভুত সুরে এবং ভাষায় মন্ত্রের মত...(অথবা গানের মত?) কিছু বলতে শুরু করলেন...ডাইকো চাপা শ্রদ্ধামাখা উত্তেজিত স্বরে বললো...
"রুণ....রুণ....উনি রুণ ভাষায় মন্ত্র পড়ছেন "
"সেটা কি ডাইকো??" ... আমি প্রশ্ন করলাম...
"পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো , রহস্যময়,কঠিন ও জটিল ভাষা...হাজার হাজার বছরের পুরোনো...এই ভাষার একটা আলাদা পাওয়ার আছে...যেকোনো সুপার ন্যাচারাল প্র্যাকটিসের জন্য এই ল্যাঙ্গোয়েজ ব্যবহার করা হয়...."
আমাদের কথার মধ্যেই এক অভূতপূর্ব ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটলো...যা আমরা ভাবতেও পারিনি.....
টাইরেসিয়াসের মন্ত্রোচ্চারণের সাথে সাথেই রিজ্ ফুলতে শুরু করলো....আস্তে আস্তে ওর মাথা সিলিং স্পর্শ করলো...মুখ থেকে অস্ফুট জান্তব কতগুলো শব্দ বেরিয়ে এল....তবে মাত্র দু /এক মুহূর্তের জন্য...তারপরই রিজ্ আবার আগের মত হয়ে আগের জায়গায় ফিরে এল... এবং ওর হতভম্ব মুখ দেখে আমরা বুঝতেই পারলাম...রিজ্ কিছু বুঝতেই পারেনি...প্রফেসর হাসান বলে উঠলেন....
"অনিরুদ্ধ সিস্টেমে লোড করে নাও... রিজওয়ান মালিকের ডেমনিক পাওয়ার আছে...হি ইজ্ আ ডেমন"
ঘটনার অভিঘাতে আমরা প্রায় বোবা হয়ে দুরুদুরু বুকে দাঁড়িয়ে রইলাম...
এরপর ডাক পড়লো ডাইকোর...
এক ই ভাবে আমরা ডাইকোর জায়গায় এক অদ্ভুত নেকড়ে-মানুষ বা ওয়্যারউলফ্ কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম...যে অসম্ভব হিংস্র এক নেকড়ের মুখ নিয়ে দুপায়ে দাঁড়িয়ে... আকাশের দিকে তাকিয়ে এক দীর্ঘ হুংকার ছাড়লো....আর আমরা জানতে পারলাম ডাইকোর মধ্যে আসলে নেকড়ে-মানুষ বা লাইক্যানথ্রোপের পাওয়ার আছে...
এর পর সমীরের পালা... সেইরকমই রুদ্ধশ্বাস হয়ে আমরা দেখলাম...সমীরের মুখের দু'পাশ থেকে দুটো তীক্ষ্ণ স্বদন্ত বা ক্যানাইন টীথ বেরিয়ে এল...তার সাথে হাতের নখ গুলোও এক একটা ছুরির মতো হয়ে উঠলো...আর আমরা জানলাম সমীর একজন পাওয়ারফুল ভ্যাম্পায়ার.....তবে এক মুহূর্তেই সব স্বাভাবিক...
"এবার স্রোতস্বিনী এসো" প্রিস্টেস অহনার ডাকে আমি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে গিয়েই ..
মিরান্ডার গলায় "এক মিনিট" শুনে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম...
"স্রোতস্বিনী কে আমার দেখা হয়ে গেছে...ওর মধ্যে ভ্যাম্পায়ার আর উইচ্..... দুধরণের পাওয়ার আছে...তাই ওর আর আসার দরকার নেই "
"তা বললে তো হয় না মিরান্ডা... তোমার জানা থাকলেও আমাদের সবারও তো দেখা...বোঝা দরকার.....কি বলো অনিন্দিতা???"
অনিন্দিতা কোনো উত্তর দিলেন না
কিন্তু টাইরেসিয়াস ও প্রিস্টেস তাশি একসঙ্গে বলে উঠলেন..."আমরা প্রফেসর হাসানের সাথে একমত...কারণ জানা থাকলে আমাদের ক্লাসে ট্রেইন করতে সুবিধা হয়।"
"ঠিক আছে...তাহলে সবার হয়ে যাক আগে...তারপর যদি সময় থাকে....মৃত্তিকা তুমি এসো এবার..."
মিরান্ডার কন্ঠস্বর ও কথা বলার ধরণই বুঝিয়ে দিলো এই নিয়ে উনি আর কথা বাড়াতে চান না....অতএব আমি পিছিয়ে এলাম...... আর মিট্টি এগিয়ে গেল...
0 Comments.