Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব - ৩৪)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব - ৩৪)

সোনা ধানের সিঁড়ি

৬৬ আজ আমার একটা পাগলামোর ঘটনা আপনাদের বলবো। সালটা সম্ভবত ২০০০ হবে। তখনও ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে গিয়ে আমি পড়াই। আমার বাড়ি থেকে প্রায় ৪০ মিনিটের দূরত্বে একটা পড়ানো পাই। সন্ধে থেকে বাড়ির কাছাকাছি সবগুলোকে পড়িয়ে নিতাম। তারপর রাত ৯ টার সময় বাড়ি থেকে রওনা দিতাম। রাস্তায় অনেকের সঙ্গে দেখা হতো। তারা সবাই কাজ মিটিয়ে বাড়ি ফেরার পথে। অনেকেই জিজ্ঞাসা করতো কোথায় যাচ্ছি। আমি একজনকেও সঠিক উত্তর দিতাম না। যদি তারা আমাকে অসুস্থ ভাবে। যেদিন ছাত্রের বাড়িতে প্রথম যাই সেদিন প্রায় রাত ১০ টা। ওনারা সবাই জানতেন আমার বাড়ি বেশ খানিকটা দূরে। তাই ওনারা আরও সকাল সকাল মানে সন্ধে নাগাদ আসতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি রাজি হই নি। ইচ্ছা করলেই পারতাম। কিন্তু আমি চেষ্টা করিনি। আসলে আমার আসল উদ্দেশ্য তো ওনারা জানতেন না। খুবই সামান্য গুরুদক্ষিণা। তবুও আমি দুবছর পড়িয়েছিলাম সপ্তাহে দু'দিন করে। পড়ানো শেষ হতো রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ। পাশেই আমার এক বন্ধুর বাড়ি। সেখানে প্রায় আধঘণ্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট কাটিয়ে তবে নিজের সাইকেলে উঠতাম। সাইকেলে চেপে খানিকটা আসার পর জামাটা খুলে সাইড ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখতাম। অনেকটা রাস্তাই ছিল গঙ্গার ধার ধরে। গরমকালে আস্তে আস্তে সাইকেল চালিয়ে খালি গায়ে গান করতে করতে বাড়ি ফিরতাম। কোনো কোনো দিন গঙ্গার ঘাটে বসতাম। বলাই বাহুল্য কোথাও কোনো জনপ্রাণী থাকত না। ভয় আমার কোনোকালেই ছিল না। শীতকালের রাতে গঙ্গার ঘাটে বসার যে আনন্দ তা কাউকে বলে বোঝানোর নয়। কোনোদিন রাত একটা কোনোদিন রাত দেড়টার সময় বাড়ি এসে পৌঁছাতাম। বাড়িতে এই নিয়ে বিরাট অশান্তি হতো রোজ। কিন্তু আমি কারও কথা শুনিনি। আসলে আমি গ্রামের ছেলে। সারা দিন রাত মাঠে ঘাটে জলে জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে আমার দিন কেটেছে। আধা শহরে এসে তার সামান্যমাত্র পরিবেশও কোথাও খুঁজে পাই নি। তাই নিজেই নিজের মনের খোরাক জোগাড় করে নিয়েছিলাম। ওই দুটো দিন ছিল আমার কাছে উৎসবের মতো।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register