Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

মার্গে অনন্য সম্মান ডা: সত্যব্রত মজুমদার (সেরা)

maro news
মার্গে অনন্য সম্মান ডা: সত্যব্রত মজুমদার (সেরা)
অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার পাক্ষিক প্রতিযোগিতা -পর্ব - ৮ বিষয় - প্রয়োজনে প্রিয়জন তারিখ:-২০/০৮/২০২০

বাঁচিয়েছো প্রাণ

সোমনাথ বাবু: -দীপান্বিতা একটু শুনে যাও তো, এই দুর্যোগের রাতে, তাড়াতাড়ি আসো,-----
দীপান্বিতা:- বল কি বলছিলে, বাইরে "উম্- ফাণ ঘূর্ণিঝড়ে সব কিছু ভেঙে তছনছ করে দিচ্ছে, চারদিকে অন্ধকার, আমরা তো পাকা দোতলা দালান ঘরে রয়েছি, উপরে শেড্ রয়েছে, তাতেও মনে হচ্ছে ঘর যেন কেঁপে উঠছে, সন্ধ্যা থেকে যে শুরু হয়েছে, যত রাত বাড়ছে ততো যেন দাপট বাড়ছে,পুরো ঘূর্ণিঝড়ের মূল শক্তি টা যেন আমাদের অঞ্চলের উপর দিয়ে যাচ্ছে, আমার না খুব ভয় করছে। সোমনাথ বাবু:-আমারও তো বুকটা কেমন করছে, প্রেসার টা না হাই হয়ে গেল, ৮০ বছরের জীবনে, বহু ভয়ঙ্কর ঝড় দেখেছি, কিন্তু এইরকম ঘূর্ণিঝড় কমই দেখেছি, হঠাৎ পাশের ভাইপোদের কথা মনে এলো,আর সেই কথাই তো বলছিলাম তোমাকে, ভাইপো অরুন দের পাঁচ ইঞ্চি দেওয়ালের টালির বাড়ি, স্ত্রী সহ তিনজন ছোটো ছেলে মেয়ে রয়েছে, আর্থিক অবস্থা ভালো নয়, তোমাদের সঙ্গে যতই মনোমালিন্য থাক, সাংসারিক জীবনে, আজকের দিনে তাদেরকে আমাদের বাড়িতে ডেকে নিই, কি ভীষণ এই ভয়ঙ্কর রাত্রি, আমরাই ভয়ে দিশাহারা হয়ে পড়ছি, ছেলেমেয়েরা সব বাইরে থাকে, কর্ম আর সংসার নিয়ে, এইখানে আমরা একা,---ভাইপো পাশে রয়েছে, যদিও ওদের কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায়, যতই হোক, আমাদের ভাইয়ের ছেলে তো, ভাই বা ভাইয়ের বউ কেউ তো বেঁচে নেই, যেহেতু আমরা রয়েছি,এই বিপদের সময় আমার মনে কেমন যেন একটা অশনি সংকেত এর বার্তা দিচ্ছে, তুমি কি বলো, দীপান্বিতা?
দীপান্বিতা:-যতই বল আমার মন চায় না, অতীতের ইতিহাস থেকেই বলছি, আমরা তো ওদের কম সাহায্য করিনি, একসময়, কিন্তু সময়ের গতিতে সব ভুলে যায়, অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দেয়, তখন মনে আঘাত লাগে, লোকের কাছে আমরা খারাপ হয়ে যাই, পরিজনদের পাশে নিয়ে এইজন্য থাকতেই নেই কখনো, আর উপকার করতেও ইচ্ছা করে না।
সোমনাথ বাবু:- সব বুঝি তোমার মনের ক্ষোভ, কিন্তু তথাপি আজকের এই বিপর্যয়ের রাত, ক্রমশ ঝড়ের গতি ১০০ কিলোমিটারে মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে, প্রতি ঘন্টায়,---- অরুণদের আমাদের ঘরে ডেকে নিয়ে আসি, রাত টুকু থাকুক, জীবনটা তো বাঁচবে।
অরুণ:- জ্যেঠু, আমাকে ডাকছিলেন? সোমনাথ বাবু:- শোন, তুমি, মৌসুমী, আর ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমাদের ঘরে চলে আসো, তাড়াতাড়ি, পরিস্থিতি ভালো না, রাত টুকু থাকো, তারপর ঝড় থামলে সকালে নিজের ঘরে যাবে। ------------------ -----------এরপর প্রবল ঝড়ের মাঝে, শেষ রাত্রিতে বিকট আওয়াজ, মনে হল কিছু যেন ভেঙে পড়ল, সোমনাথ বাবু, দীপান্বিতা, অরুণ, মৌসুমী, সকলেরই আতঙ্কে চিৎকার করতে থাকলেন, কি হয়েছে দেখ বাইরে, হালকা ঝড়ের মধ্যেই আধো অন্ধকারের হালকা ভোরের রক্তিম আলোয় হাড় হিম করা দৃশ্যে সকলেই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লেন, সোমনাথ বাবুদের দো- তলার উপরের লোহার আচ্ছাদনের তৈরি শেড্ ভেঙে ঝড়ের গতির ধাক্কায় পাশের অরুণদের টালির ওপর দুমড়িয়ে পড়ে - পুরো বাড়ি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে।
এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখে এবং অরুণদের মারাত্মক বিপদের কথা চিন্তা করে ব্লাড সুগার, এবং হাইপারটেনশনের রুগী সোমনাথ বাবু আতঙ্কে এবং উত্তেজনায় জ্ঞান হারালেন, দীপান্বিতা, মৌসুমী, অরুণ তৎক্ষণাৎ জ্যেঠুকে শুশ্রূষা করার কিছুক্ষণ পরেই, জ্ঞান ফিরলে, সোমনাথ বাবু বিছানার পাশে দাঁড়ানো অরুন কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকলেন------------------অস্ফুটে বলতে থাকলেন,"অরুণ তুমি, তোমার স্ত্রী, ছেলেমেয়েরা- আছো তো, সুস্থ শরীরে আমার পাশে, আমি যে বিশ্বাস করতে পারছি না, শেষ রাতের সেই আর্তনাদ, ভেঙে পড়ার বিকট আওয়াজ, তার সাথে প্রকৃতির রোষানল------------ধ্বংসলীলা--------
অরুণ:- সত্যিই জ্যেঠু, তুমি আমাদের এই যাত্রায় বাঁচালে,------ ধরা গলায়,------" জ্যেঠু বাঁচিয়েছো প্রাণ," না হলে এই ঝড়ের রাতে মৃত্যু আমাদের অবধারিত ছিল, এই কথার সাথে সাথেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল ভাইপো অরুন - জ্যেঠুর কোলের ওপরে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register