Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সার্ধশততম জন্মদিনে মারিয়া মন্টেসরি (১৮৭০ - ১৯৫২) - লিখেছেন মৃদুল শ্রীমানী

maro news
সার্ধশততম জন্মদিনে মারিয়া মন্টেসরি (১৮৭০ - ১৯৫২) - লিখেছেন মৃদুল শ্রীমানী
শিশুর শিক্ষাপদ্ধতিটা যে সঠিকভাবে চলছে, তা বোঝা যায় যদি দেখা যায় বাচ্চাটা খুশি মনে তাকে নিচ্ছে। শিক্ষার কাজটা হল স্থায়ীভাবে শান্তি স্থাপনা। রাজনীতির লোকেরা শুধু যুদ্ধ বাধানোর অপচেষ্টাটা বন্ধ করুন। এইভাবে কথা বলেছিলেন মারিয়া মন্টেসরি। শিশুশিক্ষাবিদ। আজ তাঁর জন্মদিন। আজ তাঁর সার্ধশততম জন্মদিন। ১৮৭০ সালে আজকের দিনে তিনি ইটালিতে জন্মেছিলেন। অশীতিপর বয়সে ১৯৫২ সালের মে মাসের ছয় তারিখে তিনি নেদারল্যান্ডস এ প্রয়াত হন। পুরো নামটা ছিল মারিয়া টেকলা আরটেমিসিয়া মন্টেসরি। তিনি ছিলেন শিশুদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, এক‌ই সাথে শিশুশিক্ষাবিদ। তাঁর বাবা অ্যালেসান্ড্রো মন্টেসরি ছিলেন সরকারি তামাক কোম্পানির আধিকারিক। মা রেনিল্ডে স্টোপপানি ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত। বাবা ও মা, দুজনের সাথেই মারিয়ার চমৎকার সম্পর্ক ছিল। তবে পড়াশুনার বিষয় নির্বাচন নিয়ে বাবার সাথে কিঞ্চিৎ মতভেদ ছিল। মেয়ের ইচ্ছে গেল ইঞ্জিনিয়ার হবেন। ভরতি হলেন ছেলেদের স্কুলে। তের বছর বয়সে ঢুকলেন মিকেল‍্যাঞ্জেলোর নামাঙ্কিত একটি টেকনিক্যাল স্কুলে। প্রতিষ্ঠানের নাম রিজিয়া স্কুওলা টেকনিকা মিকেল‍্যাঞ্জেলো বুওনারোতি। সেখানে গণিত শাস্ত্রের পাটিগণিত, বীজগণিত, জ‍্যামিতি পাঠের সঙ্গেই ইতিহাস ভূগোল হিসাবশাস্ত্র, ও বিজ্ঞান বিষয়ক পাঠ নেন মারিয়া। ষোলো বছর বয়সে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির নামাঙ্কিত স্কুলে ভরতি হলেন। স্কুলের নাম ছিল রিজিও ইসতুতো টেকনিকো লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। এখানে তিনি পদার্থবিজ্ঞানের সাথে রসায়ন, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান ও বিশেষ করে গণিতের পাঠ নেন। ১৮৯০ সালে মারিয়া বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক হন। এই সময় তিনি মত বদলে চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। এতে বাবার সঙ্গে মতভেদ হয়েছিল। কিন্তু সহজে তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সুযোগ পান নি। রোম বিশ্ববিদ্যালয়ে ন‍্যাচারাল সায়েন্স নিয়ে পাঠ শুরু করেন। পাঠ‍্য ছিল পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জৈব রসায়ন, অ্যানাটমি ইত‍্যাদি। ১৮৯২ সালে এ বাবদে তিনি ডিপ্লোমা অর্জন করলে চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করার বাধা আর র‌ইল না। মেয়ে বলে সহপাঠী পুরুষ ছাত্র ও শিক্ষক মশায়দের কাছ থেকেও তিনি লিঙ্গবৈষম‍্য ও দুর্ব‍্যবহারের শিকার হন‍। পেডিয়াট্রিকস এবং সাইকিয়াট্রি ছিল তাঁর বিশেষ আগ্রহের পাঠ। ১৮৯৬ সালে তিনি রোম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে সাম্মানিক স্নাতক হন। ১৮৯৭ সালে পলিক্লিনিকো পত্রিকায় তাঁর গবেষণা পত্র বা থিসিস প্রকাশিত হয়।
১৮৯৬ তে তিনি সাইকিয়াট্রি নিয়ে গভীরতর গবেষণা শুরু করেন। ১৮৯৭তে এই বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে থাকেন। তিনি সহপাঠী এক চিকিৎসক ছাত্রের প্রেমে পড়েন। কিন্তু বিবাহ করলে পেশাগত ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হবে বলে, বিবাহ করেন নি। তবে নিজেরাই স্থির করেছিলেন যে তাঁরা কেউই তৃতীয় কোনো ব‍্যক্তিকে বিবাহ করবেন না। ১৮৯৮ এর ৩১ মার্চ মারিয়া একটি পুত্র সন্তানের মা হন। শিশুকে একজন ধাইমার কোলে দিয়ে তিনি পুনরায় কাজে যোগদান করেন। কিন্তু প্রেমিক ভদ্রলোকটি বাড়ির চাপে অন‍্যত্র‌ বিবাহ করলে মারিয়া বেশ দুঃখ পেয়েছিলেন। মারিয়ার পুত্র বয়সকালে তাঁর সুযোগ‍্য সহযোগী হিসেবে বিকশিত হন। মারিয়া ইতিমধ্যেই মানসিক সমস্যাগ্রস্ত শিশুদের সেবায় গভীরভাবে আত্মনিয়োগ করেন। নানাবিধ সমস‍্যা বিজড়িত শিশুদের জন‍্য ছিল তাঁর সংগঠিত উদ্যোগ। এই সময়ে তিনি প্রথাগত শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে পড়াশুনা করে নেন। বিকশিত হন একজন শিশুশিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও পথিকৃৎ হিসেবে।
আজকের বিশ্বে যাঁরা অটিজম, স্প‍্যাসটিক ও নানাবিধ রোগে আক্রান্ত শিশুদের শিক্ষা নিয়ে ভাববেন, মারিয়া মন্টেসরি তাঁদের কাছে এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। শিশুদের উপর নানাবিধ আক্রমণের বিরুদ্ধে যাঁরা একজোট, মন্টেসরির জীবন তাঁদের উদ্বুদ্ধ করে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register