Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || দোল পূর্ণিমা || সংখ্যায় লিখেছেন জয়িতা ভট্টাচার্য

maro news
T3 || দোল পূর্ণিমা || সংখ্যায় লিখেছেন জয়িতা ভট্টাচার্য

যাত্রাপথের পূর্ণিমা

নীল আর গাঢ় নীল রং সারা ক্যানভাস জুরে এখন।মোটা মোটা সবুজের পোঁচ আর কালো আর তারপর আধঘন্টার চাঁদ গোল নয় হাইপারবোলা।রেক্টাঙ্গেল কালো গরাদ চিরে চিরে ফেটে আসছে চন্দ্রমুখী।ঘরময় দাপাদাপি করছে হলুদ বসন্ত।কোনায় কোনায় ধুলো,একটা সিঙ্গল খাট আর বই,আর তুলি। বিভিন্ন নারীর মতো ছিপছিপে আর পৃথুলা, লাস্যময়ী আর সাদামাটা সবাই ঘিরে আছে দিনকাল।ওখানে ঘুমিয়ে পড়েছে অবসন্ন এক হৃদয়।ঘুমের মধ্যে ঘুরে ফিরে আসছে হাসপাতালের বেড ক্লোরোফর্ম আর শ্বাসরোধকারী গন্ধেরা।হাত বাঁধা,পা শৃঙ্খলিত জন্তুর মতো পড়ে আছে নগ্ন শরীর জেল,পেচ্ছাপের গন্ধ।অরুনেশ অনেকদিন এরকম।সে আর তার ক্যানভাস।সব ফেলে চলে গেছে মন।পূর্ণিমার মাঝখান থেকে একটা অস্পষ্ট দাগ।কালচে।কালচে হাতের ছাপ যেমন গলায়। সেখানে অনেক গাছ ছিল।পিয়াল আর তাল, যজ্ঞিডুমুর,লতিয়ে ওঠা বিষাক্ত লতা জড়িয়ে মড়িয়ে সবাই ঝুঁকে ছিল কালো রাতের মতো গভীর পুকুরটার দিকে।মানুষের দিন আর রাত হিসেব হতো ট্রেনের আসা যাওয়ার হিসেবে।বসন্ত পঞ্চমীর পরে দোলযাত্রার দিন আসত উৎসব নিয়ে।অরুনেশ তখন ছিল বাপন।ওরা দশজন।বিকেলের মাঠের বন্ধু।পারিবারিক বন্ধু।বালতিতে গোলা রং আর পিচকিরি হাতে বাচ্চাগুলো দাঁড়াতো।ফাগ খেলার বেশি চল।গাঢ় সবুজ আর লাল,অথবা গোলাপি এসব রং ঘুরে ফিরে বছরে বছরে।হাফ প্যান্ট বাপন কিম্বা ফ্রক পরা টুসি। বাপন থেকে অরু।অরুণ থেকে অরুণেশ লাহিড়ি। দুপুরবেলা খোল কর্তাল বাজিয়ে বড়দের দল নগরকীর্তন করত,আকাশে উড়িয়ে দিত সবুজ ফাগ।পথ ঘাট,গাছের পাতা,মানুষের গা,সব অন্য রং সেদিন। যা হওয়ার নয় তা।সেদিন দোলে মাতাল পল্টু বউ কে সন্দেহ করে দু টুকরো হয়ে গেল রেলে।সেদিনও শেষ বসন্ত নয়।অরুণেশ দেখেছিল দোল যাত্রার যাত্রী,সেই হরিকাকার দু ছেলে সমীর আর সুজয় মর্গ থেকে এসেছিল ফিরে একবার,পুলিশের গুলি খেয়ে লাল রং মেখে দোলের ঠিকদুপুরে।পানকৌড়ির মতো পা ফেলে ফেলে হেঁটে যেতো পম্পা,পুকুরের পাড় ধরে তারপর ডুবে গেল একদিন ঘন সবুজ লতায় শ্যাওলায় পা জড়িয়ে,আর অরুণেশ রং মাখাতে মাখাতে গোলাপি আবির লাগাতে লাগাতে উদ্দাম অরুণেশ নগ্ন করে ফেলছে তনুর শরীর,নগ্ন করে ফেলতে ফেলতে চলে যাচ্ছে খাদের ধারে, অন্ধকার খাদ,ওখান থেকে ফেরার উপায় নেই আর।দশ বছরের তনু ,ছাত্রী তার।চেঁচিয়ে উঠছে,ছটফট করে পালাতে চাইছে আর শক্ত একটা হাত ছুঁয়ে যাচ্ছে তার পালকের মতো গা,গোলাপি,পালাবার পথ খুঁজতে গিয়ে প্রতিবার হেরে যাচ্ছে চিলেকোঠার ঘরে,তারপর একসময় চিৎকার বন্ধ করে দিয়েছে শক্ত হাতের চাপ।গলায় চাপ দিতে দিতে সমস্ত লাল বেরিয়ে আসছে দু পায়ের ফাঁক থেকে আচমকা সংঘর্ষে ফেটে যাচ্ছে জরায়ু,গালে আর মাথায় আর কচি বৃন্ত দুটো থেঁতলে যাচ্ছে। অরুণেশ দশ বছর জেল খেটেছিল,সমস্ত পৃথিবী ঘৃণায় ঠেলে ফেলে দিয়েছে তাকে অক্সিজেন বিহীন স্পেসে। শহর থেকে দূরে গ্রাম থেকে আরো গভীর গ্রাম ঘুরে হয়রান।তুলি তাকে ছাড়েনি।ইজেল থেকে গড়িয়ে গেছে অনেক রং।ধূসর হয়ে গেছে স্মৃতি।এখন পঞ্চাশ বসন্তে মাঝরাতে ঘুম ভেঙেছে আবার।চিলেকোঠার এই ঘরে বন্দী সে বিগত পাঁচ দোলবসন্ত।ধুলো ধুসর ঘরে স্তুপাকার ক্যানভাস।রঙের উল্লাস।রক্তের উৎসব।বিং এণ্ড ননাথিংনেস।অক্টেভে বাজবে সিলসিলা রাত আজ।মোটা মোটা ভার্মিলিয়ানের পোঁচ সারা ক্যানভাস জুরে মাখিয়ে দিচ্ছে একজন।চাঁদের শরীর বেয়ে লাল আর শ্বাপদ রং। অরুণেশ বিড়বিড় করছে "হোলি হ্যায়।"
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register