Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গদ্য কবিতায় আকিব শিকদার

maro news
গদ্য কবিতায় আকিব শিকদার

শেলটার

ভ্রুম ভ্রুরুম ভ্রুরুরুরুম... একটা মোটর বাইক চষে বেড়াচ্ছে কলেজ ক্যাম্পাসের এপাশ ওপাশ। ক্লাশ ফাকি মেরে কাঠাল তলায় আড্ডাবাজিতে মাতা ছেলেগুলো, একলা আসা মেয়ে দেখলেই সিগারেট-পোরা ঠোটে শিশ বাজানো ছেলেগুলো উত্তেজনার জোয়ারে ভাসছে। ক্ষনেক্ষনে দুজন তিনজন চড়ে বসে বাইকটায়, আকাশ বাতাস কেপে ওঠে বিভৎস শব্দে। আমি ভাবি মালিক কে! সবাই দেখি মালিকশোলভ গাম্ভীর্যে চালায়!
একজনকে ডেকে জানতে চাই- "মেটর সাইকেল পেলে কোথায়?"
ছেলেটা শ্রদ্ধায় ঝড়কবলিতো সুপারি গাছের মতো মাথা ঝুকিয়ে বললো- "জলিল দারোগা দিয়েছে স্যার... আপন ভাইয়ের সমান স্নেহ করে আমাদের।"
দারোগা সাহেবকে পথে পেলে তিনি জানালেন- "বর্ডারক্রস চোরাই মাল, থানায় পরে নষ্ট হচ্ছিল। দিলাম, চড়ে ফিরে শখ মেটাক।"
আমি বলি- "পড়াশোনা তো গোল্লায়, ছেলেগুলো বিপথে যাবে, সারাক্ষন শুধু ভ্রুম ভ্রুরুম ভ্রুরুরুরুম..."
"কি যে বলেন মাস্টার! এই বয়সে জীবনটা উপভোগ না করলে আর কখন! ওরা সরকারের ডান হাত, আগামী দিনের নেতা। যা করে তাতেই দেশের মঙ্গল।"
বুঝলাম কথা বাড়ানো বৃথা। কদিন যেতেই শুনি বাইক চালকেরা দোকানে দোকানে চাঁদা তুলে, চাঁদা তুলে চলন্ত গাড়ি থেকে রাস্তায়। উত্তলিত টাকার একভাগ নিজেদের একভাগ দারোগার একভাগ যায় উপরমহলে।
রাতে দারোগা এসে তাদের সঙ্গে বসে চা-বিস্কুটে, ফিসফাস আলাপনে, অট্টহাসিতে জমান আড্ডা।
ছেলেগুলো মদের বোতল হাতে রাস্তা মাতায়, কেউ কিছু বলে না, মেয়েদের ওড়না ধরে টানে, কেউ প্রতিবাদে দাড়ায় না। থানাটি তাদের বৈঠকঘর, দারোগা তাদের তাঁসের সঙ্গী, তারাই আইনপ্রনেতা।
তারপর এলো নির্বাচন। ভোট চাওয়া চাওয়ি, মিছিল মিটিং। সরকার বদল। নতুন দল এলো ক্ষমতায়।
ভাবলাম এইবার থামবে। কিন্তু একি! এবার দুটো মোটরবাইক, দিগুন শব্দ, তিনগুন হইহুল্লুর, চারগুন চাদাবাজী।
পরিচিত দোকানিরা নালিশ জানায়- "ওরা তে আপনরই ছাত্র স্যার, আপনি বললে থামবে। কোমরে পিস্তল গুজে চাঁদা তুলে...."
বিকেলে খেলার মাঠে আমি ওদের ডেকেছিলাম। ছেলেগুলো গলে যাওয়া মোমের মতো পায়ের কাছে জড় হয়ে বসলো। আমার সকল উপদেশ মেনে নেওয়ার ভঙ্গিতে ঘাড় নাড়লো।
সন্ধায় এলেন জলিল দারোগা- "জং ধরা পিস্তল মাস্টার, গুলি তো বেরোয় না। লকারে রাখলেই কী, আর ওদের হাতে থাকলেই কী! তাছাড়া ওদের উঠতি বয়স, বাধা দিলে ঘাপলা বাধাবে।"
দারোগার ফ্যাশফ্যাশে হাসি শুনে কেবলই আমার কানে বাজছিলো উঠতিবয়সি মেয়ের আকুতি- "ওড়নাটা ছেড়ে দিন, আপনারা আমার মায়ের পেটের ভাই।"
বৃদ্ধ পথচারীর চোখে ভয়- "দিচ্ছি দিচ্ছি সব, পিস্তল পকেটে রাখো বাবা, তোমরা আমার ছেলের বয়সি।"
পরিচিত কারও অভিযোগ- "ওরা তো আপনারই ছাত্র স্যার, একটু থামান..."
আর বাজছিলো- "ভ্রুম ভ্রুরুম ভ্রুরুরুরুম... ভ্রুম ভ্রুরুম ভ্রুরুরুরুম..."
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register