Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

অণুগল্প সিরিজে সুদীপ ঘোষাল - ৬

maro news
অণুগল্প সিরিজে সুদীপ ঘোষাল - ৬

লকডাউন ডায়েরী

১৪. লকডাউন চলছে। - কি রে মাস্ক ছাড়া রাস্তায় কেন? পুলিশের একটা লাঠির আঘাতে পিঠে খুব লাগল আলাপের। - স্যার একটু বাজার যাব। মাস্ক কিনব। - যা কিন্তু এবার বেরোলে মার খাবি। আলাপ বাজার করে মাস্ক কিনে মুখ ঢেকে বাড়ি এল। নিজেই রান্নাবান্না করল। তারপর দুপুরে সেই দায়ীত্ববান পুলিশের কাছে খাবার নিয়ে বলল, খেয়ে নিন। আমাদের জন্য কত কষ্ট করছেন আপনারা। - তোমাকে চেনা চেনা লাগছে। - হ্যাঁ স্যার।আমি সকালের সেই মাস্কবিহীন ছেলেটা। মাস্ক পরে আলাপ বলল, বাড়িতে আপনার কে কে আছে? - আমার মেয়ে আর তার মা। - কতদিন বাড়ি যান নি? - এখন তো যাব না ভাই। আমি গেলে যদি ওদের উপর করোনার কোপ পরে? তোমার কে আছে? - আমার কেউ নেই। আমি একা। পরিযায়ী এক শ্রমিক।বাড়ি যেতে পারি না। ঘর ভাড়া করে আছি। টাকাপয়সাও ফুরিয়ে আসছে ক্রমশ...
১৫. নীরেনবাবু স্কুলে কাজ করেন। মাইনেও ভাল পান। বাড়িতে বুড়ি মা আছেন। নীরেনবাবু  অকৃতদার। করোনার সময় মানুষ সবাই ঘরবন্দি। তাই পথের কুকুরগুলোকে ধরে বাড়িতে রাখেন,খেতে দেন।
 কুকুরগুলোই তার ছেলেমেয়ে। তাদের খেতে দেন। চিকিৎসা করান। কিন্তু কাজের চাপে কুকুরগুলোকে দেখশোনার সময় পান না বেশি। এখন স্কুল বন্ধ। তাই সময় আছে।
 মা বলেন, কুকুর তো প্রায় একশো ছাড়িয়ে গেল। আর কত আনবি। নীরেনবাবু বলেন, মা তুমি আমার কাছে আছ বলে ভরসা পাই। কুকুরগুলোর কেউ নেই।  কেউ লেজে পটকা বেঁধে আগুন দিত। কেউ আবার গরম ফ্যান ঢেলে দিত তাদের গায়ে। বড় নিষ্ঠুর তারা। নীরেনের কথা শুনে তার মায়ের চোখে জল চিকচিক করে।
 মা বলেন, আমিও দেখব তোর পোষ্যদের। তুই বস গিয়ে যা। নীরেনবাবু বললেন, মা আমি এখন স্কুল যাচ্ছি না,করোনার কারণে সরকার বন্ধ রেখেছে স্কুলগুলি।
 এদের দেখব আর খেতে দেব বলে, আমিই এখন থেকে রান্না করব। তোমার তো বয়স হয়েছে। তুমি বিশ্রাম নাও আর আমার সঙ্গে থাক।
 তার মা বলেন তোর মত পাগলের খুব প্রয়োজন সমাজে...
১৬. অনুপের মা মারা গেছেন লকডাউন পিরিয়ডে। মোবাইলে খবরটা পেল। মায়ের কাছে তো যেতেই হবে। বন্ধু বলল, কি করে যাবি?  সব যানবাহন বন্ধ। - আমি হেঁটে যাব - এতদূর হাঁটবি কি করে? - মায়ের আশীর্বাদে ঠিক পৌঁছে যাব। বন্ধুও সঙ্গ ধরল। দুজনে হাঁটতে হাঁটতে তিনদিন পরে গ্রামে পৌঁছল। তখন মায়ের দাহ কাজ শেষ। অনুপ কাছা পরে মায়ের শ্রাদ্ধের কাজ সমাপ্ত করল। বন্ধু বলল, মায়ের আশীর্বাদ পেলে সমুদ্রও বোধহয় সাঁতারকেটে পার হতে পারি। অনুপ শুধু বন্ধুর কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে রইল কিছুক্ষণ।
মায়ের হাসি মুখটার ছবি ভেসে উঠল অনুপের মনের আয়নায় বারবার..

চলবে...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register