Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

এক মাসের গপ্পে ঈশা দেব পাল (পর্ব - ৩)

maro news
এক মাসের গপ্পে ঈশা দেব পাল (পর্ব - ৩)

বিভাস বসুর বউ - ৩

আমি কলকাতায় থাকলে সন্ধ্যের পর বিছানায় শুয়ে শুয়ে বই পড়তে ভালবাসি। কিন্তু আজকাল কী যেন হয়েছে। সূর্য ডুবে গেলে ই আমার চুপ করে শুয়ে থাকতে ভাল্লাগে। কারোর সঙ্গে কথা বলতে ও ভাল লাগেনা।এমন কী গান শুনতেও না। প্রকৃতির যে একটা নিজস্ব শব্দ আছে, সেটা শুনি। মনে মনে নিজেকে সপ্তদশ শতকের কন্যা ভাবি । আর ঘুম ঘুম চোখে ওকে ভাবি। আমার গোপন প্রেমিককে, ও ছাড়া আমার ভালবাসা কেই যে চেনা হতনা। এই দেড় বছর ধরে সে কথাই ভাবি। ----ছোড়দিভাই, তুই বিয়ে করবিনা বলেছিস কেন ? জেঠু এই নিয়ে খুব চিন্তায়। রোজি আমার পাশ ঘেঁষে বসে। ---- কী হবে বিয়ে করে ? বেশ আছি। --আমি হাসি। বুঝতে পারি গত মাসে বাবা আমার বিয়ের জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠাতে বিয়ে করবনা ই বলেছিলাম। বাবা তাতে সত্যিই চিন্তিত হয়েছেন। -----তুই এতদূরে থাকিস, বাবা-জেঠু দুজনের ই এই নিয়ে খুব মনখারাপ। বুঝতে পারি রোজি আমার ছিঁড়ে যাওয়া এই মন কে টের পাচ্ছে। আমাকে জড় করে নিতে চাইছে গুছিয়ে। হয়ত এই উদ্দেশ্যেই ওর এবার আসা। হয়ত আমার বাবা, মা মারা যাবার পর থেকে যিনি প্রাণপণ আমার মা হয়ে উঠতে চেয়েছেন , তিনি ই হয়ত পাঠিয়েছেন রোজিকে । বাবা বা রোজি কি টের পাচ্ছে কেবল প্রকৃতির মোহে নয়, অন্য কোথাও আমি আটকে গেছি এখানে? যে আটকে যাওয়ায় শুধু ভেসে থাকার আনন্দই নেই, রক্তাক্ত হবার যন্ত্রণা ও আছে? ---তুই কি এদিককার কাউকে বিয়ে করার কথা ভাবছিস নাকি ? ----নাহ রে, এখনো কিছু ভাবিনি। তবে এই জায়গা, চাকরি ছাড়া তো সম্ভব নয়। আমি সতর্ক হই। সুপ্রভর ব্যাপারে আমার কাউকে কিচ্ছু বলার নেই, এমনকি নিজেকে ও না। ----ধুর। চাকরি ছেড়ে দিবি তখন, শ্বশুরবাড়ি থাকবি। এরকম একা থাকা যায় নাকি দিনের পর দিন ? তাছাড়া তোর অত ভাল রেজাল্ট। অনেক চাকরি পাবি। ---আমি হাসি। কিছুই বলি না রোজিকে। কী ই বা আর বলার আছে, থাকতে পারে রোজির কথার উত্তরে ? ও যা বলছে সেসব আগে আমি ও ভেবেছি, আমি ও জানি। আগে এই বিয়ে আর উত্তর বৈবাহিক জীবন নিয়ে কত কথাই যে আলোচনা হত আমাদের দুবোনে। আমরা দুজনেই একটা ঝলমলে বিবাহিত জীবনের স্বপ্ন দেখতাম। যেমন সবাই দেখে। ধূসর রং চেনার আগে যেমন আর পাঁচটা মেয়ে দেখে। বিশেষ করে শহরে বড় হওয়া , ভাল রেজাল্ট করা, লোকজন যাদের দেখতে ভাল বলে তেমন মেয়ে হয়ে জন্মালে সাদা এবং কালোর মধ্যবর্তী রং কে যে চেনাই হয়না জীবনভোর। মা মারা যাবার কারণে ই বাবা আর ছোটকা কোনোদিন আলাদা হয়নি। দুজনেই পাশাপাশি ফ্ল্যাট কিনল টালিগঞ্জে। আলাদা সংসার, আলাদা সব ই...।তবু রোজি আমার নিজের বোন ছাড়া আর কিছুই নয়। পরিচিতরা আমাদের রূপের অনবরত তুলনা করত, কে বেশি সুন্দরী তাই নিয়ে কোনো সঠিক সিদ্ধান্তে আজ ও পৌঁছতে পারেনি। কিন্তু সেই তুলনায় আমাদের হাসির উদ্রেক ছাড়া আর কিছুই হতনা। আমরা মনের আনন্দে সাজগোজ, পড়াশোনা, আড্ডাবাজি সবই করতাম। সেরকম সময়েই রাজীবের সঙ্গে আলাপ, প্রেম। সেটা যেন ছিল আমার সেইসময়কার জীবনের আবশ্যিক শর্ত হিসেবেই। খুব সাজানো একটা জীবনে ক্রমশ যুবতী হয়ে উঠলে একজন বয়ফ্রেন্ড আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রাজীব তখন সি,এ পাশ করে নিজের ফার্ম তৈরি করার স্বপ্নে বিভোর। ওর কেজো স্বভাব, অত্যন্ত উদ্যমী ভাব এবং অবশ্যই একটা ঝকঝকে জীবনের হাতছানি আমার ভালো লাগত। দ্রুত জড়িয়ে পড়েছিলাম ওর সঙ্গে। বছর দুই এর মাথায় এখানে যখন চাকরি নিয়ে এলাম, ও বারণ করেছিল প্রবল ভাবে। আমি ও এসে প্রথম দিকে ওকে যখন তখন ফোন করতাম, সারাদিন মেসেজ করতাম। তারপর দুম করে সব হাল্কা হয়ে গেল। আমার ই মন টা কেমন সরে গেল নাকি ওর জানিনা। মেসেজ করলে উত্তর দিতে ইচ্ছে করতনা, ফোন করলে এড়িয়ে যেতাম। এর মানে না বোঝার মত বোকা রাজীব নয়। কলকাতায় গেলেও আর আমাদের দেখা হতনা । দুজনেই এড়িয়ে গেলাম। শুনলাম ওর বিয়ের ঠিক হয়েছে। কিন্তু খবরটা আমকে তেমন বিচলিত করলনা। আমি রাজীবকে খুব সহজে পেরিয়ে যেতে পারলাম সুপ্রভর কারণে। শুধু সুপ্রভ ই আমাকে ধরেও পার হলনা ওর পুরোনো জীবন।
রোজি শুধু আমার বোন নয়, সবচেয়ে ভাল বন্ধু ও। ও মানতে পারেনা আমার এই প্রায় নির্জন বাস। রেগে ওঠে। আমাকে বোঝায়। কলকাতা গেলে জোর করে নতুন ড্রেস কেনায়। বুঝতে পারি ওই ধূসর রং এর আওতা থেকে আমাকে বার করে নিতে চায় ও। মাঝে মাঝে মনে হয় তিন বছরের ছোট বোন টা আমার মায়ের জায়গা নিয়ে নিয়েছে। ও আমার পাশে এসে বলে— সুপ্রভ দার বাড়িতে কে কে আছে রে ? আমি জানতাম রোজি এই প্রশ্ন এবার করবে। সুপ্রভর কথা ও জানেনা অথচ জানে। যদিও ও আসলে আমি সুপ্রভর সঙ্গে কলেজ ছাড়া দেখাই করিনা। আমি অল্প ইতস্তত করি। তারপর বলি,--সবাই ই, মা-বাবা-বোন।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register