Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

এক মাসের গপ্পে ঈশা দেব পাল (পর্ব - ১)

maro news
এক মাসের গপ্পে ঈশা দেব পাল (পর্ব - ১)

বিভাস বসুর বউ - ১

আজ ও দেখা। বিভাস বসুর বউ এর সঙ্গে। বাজারে। ছোট্ট একচিলতে শহর। দেখা না হওয়াটাই আশ্চর্য। তবু আমার মনে হয় আমার যেন একটু বেশি ই দেখা হয়ে যাচ্ছে এনার সঙ্গে। ঠিক একই রকম শীতল চাহনি। একই রকম কঠিন মুখ করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমার কেমন সহ্য হয়না। প্রতিবারের মত এবার ও আমি চোখ সরিয়ে নিই। চিরকাল ই একটা কাঠিন্য ছিল ওনার মুখে। এখনো আছে। বরং আরো কি যেন যুক্ত হয়েছে মুখে । নর্থ বেংগলের ধোঁয়াটে আবহাওয়াটা যেন ওনার মুখের থেকেই নেমে আসছে। আমি একটু ফ্যাকাশে হাসি। কী বলব বুঝতে পারিনা। ভদ্রমহিলার মুখের মধ্যে একটা মধ্যযুগীয় ছাপ আছে। শিক্ষিত আধুনিকতা ওনাকে স্পর্শ করতে পারেনি যেন । এরকম তো অনেকের মুখেই থাকে, কিন্তু উনি বিভাস বসুর বউ বলেই চোখে লাগে আমার। আজ আমার সঙ্গে রোজি ছিল। আমার খুড়তুতো বোন। দুদিনের জন্য এসেছে কলকাতা থেকে। তিনদিন থেকে আবার তিস্তা-তোর্সায় উঠিয়ে দেব। আমি থেকে যাব একলা, নির্বান্ধব এই শহরে, আমার চাকরিক্ষেত্রে। আমার কলেজ ছুটি পড়তে সেই গরমের ছুটি। এখন সবে ডিসেম্বর পড়ল। রোজি আমাকে দেখে ফিসফিস করে বলল—ছোড়দিভাই, ভদ্রমহিলা তোর সেই আগের বাড়ির ইংরেজি স্যরের বউ না ? আমি হাল্কা ঘাড় নাড়ি। রোজি বলে—কেমন বদলে গেছে , না ? কেমন যেন চাহনি টা। আর আগের মত নেই তো ! আমি ফিসফিস করে বলি--- বিভাস বসু বাড়ি ছাড়ার পর থেকেই এরকম। আগে একটা দাপুটে চাহনি ছিল ওনার , বিশেষত সেসব মেয়েদের প্রতি ই, যারা পড়াশোনা করে, সাজগোজে খানিকটা আধুনিক ও। এখন সেটা হয়ে গেছে খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা। সবার প্রতি ই। আমি রোজিকে নিয়ে বাজারে ঢুকে যাই। আজ কলেজ থেকে ফিরে আমাদের হাতি দেখতে যাবার কথা। একটা হাতি জঙ্গল আর গভীর জঙ্গলের মাঝখানে , যেখানে ট্যুরিস্টরা ঘোরে , এসে বসে আছে দুদিন ধরে। সবাই দেখতে যাচ্ছে। সারাদিন কলেজে আর বাড়ি ফিরে এসে ও বিভাস বসুর বউ এর ওই চাহনি টা আমাকে চুপ করিয়ে রাখে। ভদ্রমহিলার নামটা যে কি, আমার তা মনে পড়েনা। চারপাশের লোকজনও ওনাকে অনায়াসে “ বিভাসদার বউ “ বা “ বিভাসবাবুর বউ “ ই বলে বলেই তো শুনতাম। আমিও ওনাদের বাড়িতে যে কদিন থাকলাম কোনো নাম শুনিনি। বিভাসবাবুর সুভদ্র, সংযত কথায় কোনো নাম ই কোনোদিন কানে আসেনি। যদিও দেখেছি, ওনার টিউশানি পড়ানোর সময় মাঝে মাঝেই ভদ্রমহিলা কেমন তীরবেগে ঢুকে পড়তেন অনায়াসে। ভদ্রমহিলার সঙ্গে সকালের ঐ দেখাটা হয়ে মনটা নানা কারণে একটু এলোমেলো হয়ে গেল সারাদিন। যদি ও আমার এই একলা সংসারে কেউ এলে আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। কিন্তু এক্ষুণি যেন আমার একটু একা থাকতে ইচ্ছে করছিল। রোজি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইকনমিক্সে এম।এ পড়ছে। মাঝে মাঝে চলে আসে আমার কাছে। ও সকালের বাজার থেকে আনা জিনিসগুলো গুছিয়ে রেখেছে দেখি। এখানে এসেই কম দামে মুগ্ধ হয়ে কিনে নিয়েছিলাম একটা পেল্লায় সেগুনকাঠের টেবিল। একা থাকার রোজ রাতে সেখানে একটা চেয়ার টেনে খেতে বসার সময় , চাই বা না চাই, একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস পড়ে আমার মুখ থেকে। আজ সেটার একপ্রান্তে বাজারি প্যাকেটে চাউমিন, বাদাম, চানাচুর, চিঁড়ে ভাজা, চিপ্স, বিস্কিট রোজি গুছিয়ে রেখেছে দেখে আমার মনটা অল্প ভালও হয়।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register