Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব - ২৯)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব - ২৯)

সোনা ধানের সিঁড়ি

৬১
বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়াতেই দুজনে বেরিয়ে এলেন। স্বামী স্ত্রী। তাদের চোখ আর চলাফেরা দেখলেই বোঝা যায় তারা দুজনে দুই দেশের বাসিন্দা। কিন্তু মনে হয় তাতে তাদের কোনো অসুবিধা হয় না। সবসময় যে দুজনকে পাশাপাশি জড়িয়ে থাকতে হবে তার তো কোনো মানে নেই। তাছাড়া একটা সময়ের পর অর্থাৎ নিজস্ব পৃথিবী তৈরি হয়ে গেলে একা একা থাকার খুবই প্রয়োজন। তবে যখন দরকার পড়বে অবশ্যই তারা কাছাকাছি আসবে।
খুব নির্জন একটা বাড়ি। দেখে মনে হয় এই দুজন মানুষের জন্যেই বোধহয় বাড়িটা তৈরি হয়েছিল। কতক্ষণ আর ছিলাম, বড় জোড় ঘন্টা দেড়েক। ওইটুকু সময়েই মনে হল, দুজন মানুষ আপন মনে যেন নিজেদের একটা করে পৃথিবী তৈরি করছে। বড় ভালো লেগে গেল বাড়িটাকে। মনে হলো এই বাড়িটা তো আমারও হতে পারত। আচ্ছা, কখন বাড়ি নিজের বলে মনে হয় ? যখন বিষয় সম্পত্তিটা আমার নামে লেখা থাকে অথবা যার ওপর আমি আমার অধিকার ফলাতে পারি ? তাহলে আমি এর কোনো বিভাগেই পরি না। অনেকদিন হলো সেই বাড়িটা থেকে বেরিয়ে এসেছি। যদিও একদিনই মাত্র সেই বাড়িটাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আজও সেই বাড়িটায় আমি হাজির হই। দেখি দুজন মাঝবয়স পেরিয়ে যাওয়া মানুষ নিজেদের মগ্নতায় আচ্ছন্ন। কারও কোনো অভাব অভিযোগ নেই। নেই কারও প্রতি ক্ষোভ। হয়ত গভীরে গিয়ে দেখলে আমার ধারণা মিথ্যেও হতে পারে। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। আসলে ওই অদ্ভুত বাড়িটায় দুজন মানুষকে দেখে আমার এরকম ভাবতেই ইচ্ছা করে।
চলে আসার সময় ওরা দুজনেই বাইরে এসে দাঁড়ালো। আবার আসতে বললো। মনে হলো ওরা যেন আমার কতদিনের চেনা। আমারও ভাবতে ইচ্ছা করলো, এই বাড়িটাতে যেন আগে অনেকবার এসেছি।
আজ মনে হয় ভাগ্যিস ওই বাড়িটাতে গিয়েছিলাম, না হলে জানা হতো না একই ছাদের নিচে দুটো মানুষ দুটো পৃথিবী নিয়ে ভালোই থাকতে পারে। আমার ক্ষেত্রে এটা বারবার ঘটেছে, কোনো নির্মিত বস্তুর ওপর আমার নিজস্ব একটা নির্মাণ থাকে। হয়ত দেখা যায় একজনের সঙ্গেও তার কোনো মিল খুঁজে পাওয়া গেল না। কিন্তু তবুও আমার চিরাচরিত অভ্যাসের কোনো বদল ঘটে না। এইভাবেই আমার নিত্য পথ চলা।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register