Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সীমন্তি চ্যাটার্জি (পর্ব - ১৩)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সীমন্তি চ্যাটার্জি (পর্ব - ১৩)

স্রোতের কথা

পর্ব - ১৩

ওয়েলকাম টু ইসপ্যামা 

"দিয়া!!প্রাইভেট জেট কি এরকম হয় গো?! এ তো পুরো একটা বাড়ি.. !!!" "হুমমম্... তাই তো দেখছি!!! মনে হচ্ছে অর্থনৈতিক দিক থেকে ইসপ্যামা খুব ই সমৃদ্ধ একটা ইনস্টিটিউশ্যন !!!" আমাদের ফিসফিস্ করে কথা বলতে দেখে এক অপূর্ব সুন্দরী ফ্লাইট এ্যাটেন্ড্যান্ট আমাদের কাছে এগিয়ে এলো.... মিষ্টি হাসি মাখা মুখে মধুর সুরেলা গলায় জানালো... কলকাতা পৌঁছতে আর একঘন্টা বাকি...এর মধ্যে আমাদের আর কিছু লাগবে কি না...লাগবে আর কি...এক তো প্লেনে উঠেই আমাদের চোখ মাথায়...আর তার উপর খাতিরদারি আর খাওয়াদাওয়ার এলাহি আয়োজন দেখে আমি আর দিম্মা দুজনেই হাঁ হয়ে রয়েছি...এত বড় একটা গোটা প্লেনে মানুষ বলতে আমরা ছাড়া আর গোটা তিনেক সুন্দরী ফ্লাইট এ্যাটেন্ডেন্ট.. যেহেতু এটা একটা অটোমেটেড ডিভাইস্ , তাই প্লেন নিজের সেট করা ডেস্টিনেশনে নিজেই পৌঁছে যাবে... আর এই ধরনের হাই টেকনোলজির প্লেনে কোনো পাইলট থাকে না ...এই প্লেনটাতে ও নেই আমি একটা পিনাট বার চেয়ে নিয়ে তাতে কামড় বসালাম...তারপর সামনের টেবলে্ রাখা ছোট্ট কম্পিউটার টা অন করে কলকাতা বলে সার্চ দিলাম "কি দেখছিস?? কলকাতা??" আমি দিম্মার দিকে তাকালাম...কেন জানি না গত কালের ঐ অদ্ভুত অভিজ্ঞতা আর অনুভূতির কথা আমি দিম্মাকে বলতে পারি নি...কিসে যেন আটকেছে... আমার ভিতরের আমি টা আমায় যেন সতর্ক করে দিয়ে বলেছে ...এটা একান্তই আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা, নিজস্ব অনুভূতি... এখানে অন্য কারোর প্রবেশ নিষেধ। "কি রে? চুপ করে তাকিয়ে কি ভাবছিস??" দিম্মা আমার মুখের উপর উড়ে আসা চুল গুলো সরিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞাসা করলো... "নাঃ সেরকম বিশেষ করে কিছু না... আচ্ছা দিম্মা...তোমার দেবী... মানে তোমার মেয়ে সেদিন কখন ফিরে গেল?" আমি মুখ টা একটু বেঁকিয়ে বললাম "সার্সী প্লিজ্...দেবী তোমার মা হয়... সেদিন কিন্তু তুমি ওর সাথে যথেষ্ট খারাপ বিহেভ করেছ...বড়দের অশ্রদ্ধা করার শিক্ষা কিন্তু আমি তোমাকে দিইনি।" আমি চুপ করে রইলাম... "তুই এবার সতেরো পেরিয়ে আঠেরো তে পড়লি...তাই না?"...দিম্মা অন্যমনস্ক ভাবে কিছু একটা গভীর ভাবে ভাবতে ভাবতে নিজের মনেই বললো... "দেবী যখন মা হয়েছিল তখন ও তোর থেকেও দু'বছরের ছোট ছিল।" হুঁহ !!! উনি অল্প বয়সে পেকে লাল হয়ে গিয়েছিলেন...সেটা যেন আমার দোষ...আমি যেন ওনার মেয়ে হয়ে জন্মানোর জন্য এ্যাপ্লিকেশন দিয়েছিলাম! আমি মনে মনে ভাবলাম! "তার উপর সেই অদ্ভুত ঘটনা...সেই ধাক্কা টা ঐটুকু বয়সে দেবী আসলে সামলাতে পারেনি...তাই পরিস্থিতি টা এ্যাকসেপ্ট করতে পারেনি... এমনিতে তো হাল্কা মনের হাসিখুশি ধরণের মেয়ে ছিল..." "কি অদ্ভুত ঘটনা গো দিম্মা?কি ব্যাপার গো? আমাকে কোনোদিন কিছু বলোনি তো?" দিম্মা যেন হুঁশ ফিরে পেয়ে চমকে উঠলো। "সে আছে এক ব্যাপার!বলবো তোকে সব,সময় করে...তুই এখন বড় হয়েছিস...তোর জানা উচিত...নয়তো মা সম্পর্কে তোর তিক্ততা আরো বেড়েই যাবে আর তাতে নিজেই কষ্ট পেতে থাকবি...তবে এখন এসব কথা থাক ... এখন আমরা যেখানে যাচ্ছি সেখান টা নিয়ে আগে ভাবা দরকার...তুই তো আমার সাথে বেশ কয়েকবার ইন্ডিয়া বা ভারতবর্ষে এসেছিস...জায়গাটা তোর কেমন লেগেছে বল্ তো?" "ইন্ডিয়া খুবই বড়লোকদের জায়গা দিয়া, আর কী সুন্দর!!! আমার তো দিল্লি আর মুম্বাই দুটোই দারুণ লাগে...আর কলকাতা... সেখানে তো কোনোদিন যাইনি...আর শুনেছি তো সেখানে তো সবাই যেতেই পারে না... শুধু খুব কম কয়েকজন...যারা ভীষণ বড়লোক আর অভিজাত...তারাই থাকে ওখানে...আর এই সার্চ এন্জিনে কলকাতার যা ছবি দেখছি দিম্মা... এখানে থাকতে হবে ভাবলেই আমার মাথা ঘুরছে.... "জানিস তো আমরা কিন্তু আসলে কলকাতারই মানুষ... কলকাতায় একসময় বাঙালি রাই বেশি থাকতো আর শহর টাও খুব ঘিন্জি আর নোংরা ছিল ...তারপর 3000 সাল নাগাদ কলকাতা নতুন করে সেজে ওঠে... আর পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আর দামি শহর গুলোর মধ্যে একটা হয়ে ওঠে! বলতে বলতেই দিম্মার যেন একটা কি মনে পড়ে গেল ওহহ্ সার্সী , তুই তো এবার তোর বার্থ ডে টা ঠিক করে পালন করতেই দিলি না..তোর বার্থ ডে গিফ্ট টাই দেওয়া হয়নি..." বলতে বলতেই দিম্মা নিজের সাইড টোট্ ব্যাগটা থেকে একটা ব্রাউন কালারের অনভেলাপ বার করে আমার দিকে বাড়িয়ে ধরলো। "এটা কি গো দিয়া??!!!" "না না...এখন খুলবি না...ইসপ্যামা তে গিয়ে , আমার চলে আসার আগে , আমার সামনে খুলবি..." দিম্মার হাসিমুখ টা যে কীইই মিষ্টি আর ভরসা মাখা... "ম্যাম্ আর টেন মিনিটস্ এর মধ্যে ই আমরা ইসপ্যামার প্রাইভেট এয়ারস্ট্রিপে ল্যান্ড করছি..." মিষ্টি মুখের ফ্লাইট এ্যাটেন্ডেন্টের কথায় আমার বুকের ভিতর টা লাবডুব করে উঠলো.... তাহলে সত্যিই এবার আমার নতুন জীবন শুরু হতে চলেছে...
********************************************************************************
আমরা একটা বিশাল হলের মধ্যে..... যেখানে চতুর্দিকে প্রচুর রাজকীয় চেয়ার এবং সোফাসেটি...আর অদ্ভুত এক মায়াবী আলোয় মাখা জায়গাটা ... সেখানে বসে আছি... একটু আগে এক বিশাল রাজকীয় রোবট্ চালিত গাড়ি আমাকে আর দিম্মাকে এক বিশাল লোহার কারুকার্য করা গেটের সামনে নিয়ে এসেছিল...সেই স্বয়ংক্রিয় গেট গাড়ি সামনে আসতে নিজে নিজেই খুলে গেছে... আমরা এয়ারস্ট্রিপ থেকে নেমে গাড়িতে আসতে আসতেই সন্ধ্যার অন্ধকার ক্রমশঃ গাঢ় হয়ে উঠেছে আর গাড়ি কালো কাঁচে ঢাকা তাই জায়গাটা সেভাবে ভালো করে দেখতে পারিনি... শুধু এই পথ টুকু আসতে গিয়ে এইটুকু বুঝেছি জায়গাটা প্রচুর গাছ ও ফুলে ভরা , অসম্ভব সাজানো এবং সুন্দর একটা শহর......আমি অন্ধকারে খুব ভালো এবং স্পষ্ট দেখতে পাই... কিন্তু কয়েকদিন ধরে আমার কাশি ,সর্দি ,বুকের যন্ত্রণা এবং দেখার সমস্যা সবগুলো ই খুব বেড়ে গেছে... আমি জানি এর সমাধান আমার কাছেই সেই কাঁচের বোতলে বন্দী আছে... কিন্তু প্রচন্ড ইচ্ছে করলেও আমি নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছি...ফলতঃ আমি খুবই দুর্বল ও অসুস্থ বোধ করছি... যদিও দিয়াকে কিছুই বুঝতে দিইনি...আর তো মাত্র কয়েক ঘণ্টা...কি জানি আবার কবে দিয়ার সাথে দেখা হবে...তাই যেটুকু সময় একসাথে আছি...মানুষ টা যাতে নিশ্চিন্ত থাকে আর শান্ত মনে ফিরতে পারে... সেটা আমাকে যেভাবে হোক, নিশ্চিত করতেই হবে। আমরা ইসপ্যামার বিশাল কালো গেটটা দিয়ে ঢুকে প্রথমে একটা বিরাট অটোম্যাটিক স্ক্রীনে নিজেদের নাম দেখলাম... আমাদের নাম লেখা জায়গায় একটা মিষ্টি মহিলা কন্ঠ,হাত ছোঁয়াতে বললো। সেটা করে আবার গাড়িতে উঠতে... কিছু দূর গিয়ে গাড়ি টা এই বিশাল রাজকীয় হল..যেটার বাইরে অদ্ভুত সুন্দর জোরালো আলো তে লেখা আছে ভিজিটরস্ প্লেস... সেখানে আমাদের পৌঁছে দিয়েছে। "সার্সী....তুই কেন ঐ লিকুইড টা খাচ্ছিস না বল তো?? তোর কষ্ট হচ্ছে... আমি তোর মুখ দেখে বুঝতে পারছি কিন্তু..." "ওয়েলকাম টু ইওর ট্রু হোম ডিয়ার..." আমি সবে দিম্মাকে কিছু উত্তরদিতে যাচ্ছিলাম.... তার আগেই একটা পরিচিত গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম... আমি আর দিম্মা দুজনেই চমকে ফিরে তাকালাম। প্রফেসর আদিল হোসেন !!! সঙ্গে একজন মহিলা। প্রফেসর সেই রকম আন্তরিক হাসি হাসতে হাসতেই এগিয়ে এলেন..... ততক্ষনে আমি আর দিম্মা দুজনেই উঠে দাঁড়িয়েছি "ওয়েলকাম স্রোতস্বিনী... তুমি এসে গেছ শুনে তোমার সাথে দেখা করতে চলেই এলাম " প্রফেসর আমার হাত দুটো ধরে একটু ঝাঁকিয়ে দিলেন। "ভূমিসূতা আপনি স্রোতস্বিনী কে নিয়ে একদম চিন্তা করবেন না...ও খুব ভালো থাকবে।" উত্তরে দিম্মা একটু হেসে 'থ্যাংকস্' বললো প্রফেসর আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলেন... কিন্তু পাশের মহিলা টি একটু অধৈর্য্য কিন্তু পোলাইট হওয়ার চেষ্টা করা গলায় বললো..." প্রফেসর হাসান আমাদের কিন্তু দেরি হয়ে যাচ্ছে...ওকে তো একটু বিশ্রাম নিয়েই ইন্ট্রোডাকটরি রিচ্যুয়ালের জন্য রেডি হতে হবে..." আমি মহিলার দিকে ভালো করে তাকালাম...আর একটু নিশ্চিন্ত হলাম... যাক্ বাবা,তাহলে নর্মাল মানুষের মতো দেখতে লোকজন ও ইসপ্যামা তে আছে।সবাই ই অপূর্ব সুন্দর নয়...এই মহিলার যেরকম বিরক্তি মাখা শক্ত মতো মুখ...ইনি নির্ঘাত কনস্টিপেশনে ভোগেন... "ইনি ম্যাডাম সিলভিয়া... আমাদের হাউস কিপিং সুপার ভাইজার...ইনিই তোমাকে তোমার ঘর ও তোমার প্রয়োজনীয় অন্যান্য ব্যাপার গুলো বলে দেবেন... তোমার সাথে ইন্ট্রোডাকটরি রিচ্যুয়াল কাম ডিনারে দেখা হচ্ছে তাহলে....আর ঠিক চার ঘন্টা পর আমার অবাক মুখের দিকে তাকিয়ে প্রফেসর একটু হাসলেন। "হ্যাঁ স্রোত ঠিকই ধরেছো... এখানে রাতেই সব কিছু কাজ কর্ম হয়...দিন টা আমাদের বিশ্রামের সময়..." ম্যাডাম সিলভিয়া এবার স্পষ্টতই অধৈর্য্য গলায় বললেন ..."এসব পরে শুনো ...স্যরি প্রফেসর... এবার ওকে নিয়ে যেতে হবে... না হলে খুব দেরি হয়ে যাবে".... উনি দিম্মার দিকে ফিরলেন... "আপনাকে এর পাশেই একটা গেস্ট উইং আছে , থাকতে চাইলে সেখানেই থাকতে হবে...এর থেকে ভিতরে আউটসাইডার এ্যালাউড নয়..." আমার খুব রাগ হোলো হঠাৎ...দিম্মা আউটসাইডার!!!!! আমি কিছু বলার আগেই দিম্মা মুখ খুললো "আপনাদের আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ, কিন্তু আমি থাকবো না ম্যাডাম্... চলেই যাবো...তার আগে আমি আমার গ্র্যান্ডডটারকে একটু বাই বলে নিই? সার্সী আমার কাছে আয়," আমি এগিয়ে গেলাম... আমার খুব কান্না পাচ্ছিল " তুই তো ব্রাউন অনভেলপের মধ্যে রাখা তোর বার্থ ডে গিফ্টটা দেখিসই নি... আচ্ছা ওটা ঠিক কি... আমিই বলে দিচ্ছি...ওটা আসলে একটা ডিড্...." দিম্মা কি বলছে আমি কিছু বুঝতে না পেরে তাকিয়ে রইলাম... "এখান থেকে যেতে হয়তো আধঘন্টা সময় লাগবে... এরকম দূরত্বে আমি তোর নামে একটা বাড়ি কিনেছি...আর এখন থেকে বেশিরভাগ সময় আমি তোর এই বাড়িটাতেই থাকবো... আমার "আর্দি ম্যাজিক" ব্র্যান্ডের একটা ব্রাঞ্চ আমি কলকাতা তেও খুললাম...তাই এটা সবসময় মনে রাখবি আমি তোর খুব কাছেই আছি..." আমি দিয়া কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম।
দিয়া কে নিয়ে কালো গাড়ি টা বেরিয়ে গেল....ইসপ্যামার নাকি এটাই রুল...তারা গেস্ট দের লিফ্ট দেয়... প্রফেসর হাসান আমার দিকে তাকিয়ে সেই মন ভালো করা হাসি টা হাসলেন... "ওক্কে স্রোত...তাহলে চারঘন্টা পরে দেখা হচ্ছে... তোমার নতুন ফ্রেন্ডস্ দের আর এখানকার বাকি যারা আছে/আছেন...সবার সাথে... এখনকার মতো বাই" উনি লম্বা পা ফেলে সামনে এগিয়ে গেলেন... আমি ওনার পিছনে যেতে হবে ভেবে পা বাড়াতেই... "ওই মেয়ে,ওদিকে নয়... এদিকে...যত্তোসব্ "
আমিও বিরক্ত মুখের সিলভিয়া ম্যাডামের সাথে উল্টোদিকে পা বাড়ালাম....

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register