Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গুচ্ছকবিতায় তুহিন কুমার চন্দ

maro news
গুচ্ছকবিতায় তুহিন কুমার চন্দ

আমার বাড়ি তালসাড়িতে

আমার বাড়ি তালসাড়িতে তোমার বাড়ি মেঘে, সাগর ঢেউয়ে চোখ মেলে তাই রাত্রি আছি জেগে।
আমার বাড়ির উঠোন জুড়ে জ্যোৎস্না নেমে আসে, তারার দলে আকাশ জ্বলে ঋতুর বারোমাসে।
তালসাড়িতে ঝাউয়ের বাগান নানান পাখির বাসা, কে যেন রোজ ছড়ায় এসে বুকের ভালোবাসা।
এখান থেকেই কেয়া ফুলের গন্ধ ভেসে আসে, সমুদ্র ঢেউ আছড়ে পড়ে বনের সবুজ ঘাসে।
আমার বাড়ি তালসাড়িতে ঝাউ বনের ঐ বাঁকে, সাগর ঢেউয়ে জ্যোৎস্নামাখা ছন্দে ছবি আঁকে।

ছোট্টবেলার দিনগুলি আজ

ছোট্টবেলার হাওয়াই মেঠাই পেঁচিয়ে লাঠির মাথায়, চাটছি কেবল খাচ্ছি না কেউ মন থাকে না খাতায়।
এক আনাতে দু'খান মেলে একটা ছোট ভাইয়ের হঠাৎ দাদু হেচকি তোলেন দুধ ছাড়া কাপ চায়ের।
কি হলো গো কি হলো গো ব্যস্ত এদিক সেদিক, দাদু কেবল তাকিয়ে আছেন হাওয়াই মেঠাই যেদিক।
এমনি কি আর বিষম খেলেন বলছে খোকা মা'কে, লোভ হয়েছে মেঠাই খাবার নজর সেদিক রাখে।
তাকিয়ে দেখি লাঠির মাথায় চুপসে গেছে মেঠাই খেপলো ভীষণ ভাই যে আমার ছুঁড়ছে ঘুড়ি লাটাই।
ছোট্টবেলার দিনগুলি আজ মেঘের আড়াল থেকে, মুচকি হাসে চুপটি করে দুখের স্বপ্ন দেখে।
হঠাৎ যদি হাওয়াই মেঠাই দেখি মেলার মাঠে, ছোট্টবেলার হারিয়ে যাওয়ায় স্মৃতির সময় কাটে।
করুন সুরে দূরের গাঁয়ে রাখাল বাঁশির সুরে ছোট্টবেলার সেদিনগুলো আসছে না আর ঘুরে।

যা উঁড়ে যা খুশীর ঘুড়ি

যা উঁড়ে যা খুশীর ঘুড়ি দিলাম তোকে ছেড়ে, যেমন খুশী উঁড়তে পারিস এপথ ওপথ ঘুরে ইচ্ছেমতো ওড়ার দিকেই নজর ছিলো তোর, তাই খেতি লাট নীল আকাশে সকাল সন্ধ্যে ভোর।
আমি তোকে শিশিরভেজা পুব আকাশে দেখে, নামিয়ে নিতাম যত্ন করে ভেজা আকাশ থেকে। সেসব নাকি ভাল্লাগেনা শুনতে পেলাম যেদিন, উঁড়িয়ে দিলাম গিরগিটি তুই মেঘ মুলুকে সেদিন।
যা উঁড়ে যা দুষ্টু ঘুড়ি ছেড়েই দিলাম তোকে ভোকাট্টা যেদিন হবি ছিড়বে দুষ্টু লোকে। আজের আদর বুঝবি সেদিন কত দুঃখে ভরা, ডাকবি যতই কাঁদবি বসে কেউ দেবে না ধরা।
পথের পাশের নর্দমাতে লজ্জা ঢাকবি কত দিলাম ছেড়ে এই এখনি ওড় না ইচ্ছেমতো। একলা ওড়ার কি যে মজা বুঝতে পাবি যেদিন নষ্ট ঘুড়ি দাও ছুঁড়ে দাও বলবে লোকে সেদিন।

পুতুল নাচের গল্পগুলো

মঞ্চে তখন রাম রাবনের যুদ্ধ হতো জোর রাত গড়িয়ে যুদ্ধ থামে রাত তখনই ভোর। সুতোয় বাঁধা পুতুলগুলো মঞ্চে ভীষণ নাচে, এখন সেসব যত্নে রাখা বসার ঘরের কাঁচে।
চন্ডীতলার বিশাল মাঠে পুতুল নাচায় মামা রাজা সাজে রানী সাজে নানান রকম জামা। হ্যাজাক জ্বলা মাঠটি জুড়ে খড়ের আসন পাতা নাচতো পুতুল রাম রাবনের হরন হতেন সীতা।
সুতোয় বাঁধা পুতুলগুলো নাচতো যাদের হাতে এখন তাদের উপোস করে দিন কাটে একসাথে। পুরুলিয়ার নানান গ্রামে আজ কারো নেই কাজ, পুতুল নাচের পুতুলগুলোর দুঃখ ভীষণ আজ।
মঞ্চে এখন রাম রাবনের যুদ্ধ হয়না জোর দুঃখ নিয়ে কাটায় সময় রাত তখনই ভোর। সুতোয় বাঁধা পুতুলগুলো মঞ্চে ভীষণ নাচে, সেসব এখন যত্নে রাখা বসার ঘরের কাঁচে।

সেইসব স্মৃতি

কাঠের টেবিল নড়বড়ে পা কলা পাতায় খাওয়া সেসব ছিল সেই যুগেতে এখন যায় না পাওয়া। বিয়ের ভোজে এই ছিলো যে নেমন্তন্ন মানেই এই টেবিলেই সবার সাথেই বসতাম সাবধানেই।
উলটে যেত হঠাৎ টেবিল চেয়ার যেতো যে বসে তরকারী ঝোল দিত ঢেলে রং পোষাকেই অবশেষে। কলাপাতা নিয়ে মাটির গ্লাসেতে ইঁদারার সেই জল কে দেবে নুন,কে দেবে জল এই নিয়ে কোলাহল।
ছোট্টবেলায় বিয়ের পাতে নুন দিয়েছি যে কত এলুমিনি জগে জলকে দিয়েছি নিজের ইচ্ছেমতো। বরকে দেখেছি ট্রাঙ্ক কাধে করে বৌ নিয়ে আলপথে, পিছনে পালকি বাজতো বাজনা হেঁটে যাই কোনমতে।
এখন সেসব কোনদিন দেখি ভুল করে কোন গ্রামে ফিরে যাই সেই আগের সময়ে দৃষ্টি যেখানে থামে। আজো চেয়ে থাকে গাছের নিচেতে পালকিটা রাখা আছে, ভুল করে যদি কেউ নিতে আসে সখ করে তার কাছে।
সেইসব দিন মমির আদলে স্মৃতির কাঁদনে কাঁদে চোখে আসে জল সেইসব স্মৃতি লজ্জাতে চোখ বাধে।

ছড়ায় ছবি আঁকি

বললি যখন পাখি ঘরের থেকে নীল পালকে স্বপ্ন ধরে রাখি।
আকাশ কালো মেঘে আমি তখন শব্দ ভাঙ্গি ছন্দরা যায় রেগে।
অংঙ্ক কষে দেখি বজ্জাতরা মিথ্যেবাদী মিথ্যে কথার ঢেঁকি।
আকাশ বলল আয় মেঘ মুলুকে উড়ছে পালক চাঁদের আঙ্গিনায়।
বলছো তুমি আরো সেই যে দেখা আমায় তুমি চিনতে কি আজ পারো?
নাউয়ের রঙ্গিন পালে মাঝির দেখা নদীর জলে দেখেছি এককালে।
বলবে তুমি আরো ছড়ার ছন্দে লিখতে ছড়া ইচ্ছে করলে পারো।
ডাকলো যখন পাখি নীল আকাশে রং তুলিতে ছড়ায় ছবি আঁকি।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register