Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ৩৮)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ৩৮)

কেমিক্যাল বিভ্রাট

এগারো

স্কুলবাস থেকে নামার পর রোজকার মতো কাজের মাসির পিছু পিছু বাড়ি ফিরছিল সুস্মিতা। তখন হঠাৎই সামনে থেকে অভিমন্যুকে আসতে দেখে হাঁটার গতি খানিকটা কমিয়ে, কায়দা করে কাজের মাসির থেকে বেশ কয়েক পা পিছিয়ে, টুক করে তার পায়ের কাছে দলা পাকানো একটা চিরকুট ছুড়ে দিয়েছিল সে। কী ছুড়ল? অভিমন্যু চোখ তুলতেই, চোখের ইশারায় ও বলেছিল, ওটা তুলে নিতে। ওই চিরকুটটা নিয়ে আর কোনও দিকে তাকায়নি সে। সোজা বাড়ি চলে এসেছিল। মা তখন প্রতিদিনকার মতো স্কুলে। বাবাও ল্যাবরেটরিতে। এই সময় কেউ আসবে না একশো শতাংশ নিশ্চিত হওয়া সত্ত্বেও, সে কিন্তু কোনও রিস্ক নেয়নি। জানালা দিয়ে এ দিক ও দিক খুব ভাল করে দেখে নিয়ে, ভেতর থেকে দরজায় ছিটকিনি তুলে দিলেও, কীসের একটা ভয় যেন তাকে কুরে কু়রে খাচ্ছিল। বুকটা ধক ধক করছিল। তাই ঘরের মধ্যে নয়, চিঠিটা নিয়ে বারবার বাথরুমে যাচ্ছিল সে। আর প্যান্টের লুকোনো পকেট থেকে দু’লাইন ছড়া লেখা চিরকুটটা বের করে কখনও রুদ্ধশ্বাসে, কখনও আবার থেমে থেমে সময় নিয়ে পড়ছিল। আর যত পড়ছিল, ততই যেন উত্তেজনায় সে টগবগ করে ফুটছিল। সেই চিরকুটটায় লেখা ছিল— কাক ডিম পাড়ে কোকিলের বাসায় / আমি আছি তোমার চিঠির আশায়। তা হলে কি ও তার ফিলিংসটা এত দিনে বুঝতে পেরেছে! সে যে মনে মনে ওকে চায়, সেটা টের পেয়েছে! আর সেটা যদি টেরই পেয়ে থাকে, তা হলে নিশ্চয়ই এটাও বুঝতে পেরেছে যে, সে তাকে যতই ভালবাসুক না কেন, সেটা আকার-ইঙ্গিতে যতই বোঝানোর চেষ্টা করুক না কেন, মুখ ফুটে সে-কথা সে কিছুতেই বলতে পারবে না। তাই কি ও নিজেই সাহস করে এগিয়ে এসে এই দু’লাইনের ছড়ার মধ্যে দিয়ে বলতে চেয়েছে, ও তার চিঠির আশায় বসে আছে! নিশ্চয়ই বলতে চেয়েছে। না হলে লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে এ কথা সে কিছুতেই লিখতে পারত না। একটা মেয়ে হয়ে ও এতটা এগিয়ে এসেছে, আর সে একটা ছেলে হয়ে চুপচাপ বসে থাকবে! না। এটা হতে পারে না। সে-ও খাতা-কলম নিয়ে বসে পড়েছিল চিঠি লিখতে। বসে তো ছিল। কিন্তু শুরুই করতে পারছিল না। কী সম্বোধন করবে তাকে! প্রিয়া, প্রিয়তমা, নয়নের মণি, নাকি অন্য কিছু… লিখেও ছিল। কিন্তু লেখার পরেই মনে হয়েছিল, না। এটা নয়, এটা যেন একটু কেমন কেমন! অন্য কিছু লিখতে হবে। অন্য কিছু। কিন্তু কী! না, কিছুতেই সেটা আর ঠিক করে উঠতে পারেনি সে। শেষে ঠিক করেছিল, আগে তো চিঠিটা গুছিয়ে লিখি, তার পর না-হয় ভেবেচিন্তে সম্বোধনটা লেখা যাবে। সে চিঠি লিখতে গিয়েও পদে পদে হোঁচট খেয়েছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে। এক-আধ লাইন লেখার পরেই সেটা ছিঁড়ে নতুন করে আবার লিখতে শুরু করেছে। এ ভাবে একটার পর একটা পাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে ষোলো নম্বর নতুন বাঁধানো খাতাটার পাতা যখন একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে, তখন চিঠিটা কাউকে দেওয়ার মতো মোটামুটি একটা পদের হল।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register