Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

মেহেফিল -এ- কিসসা মীনাক্ষী লায়েক

maro news
মেহেফিল -এ- কিসসা মীনাক্ষী লায়েক

অসুস্থ শৈশব

অসুস্থ শৈশব কখনো একটি পূর্নবয়স্ক মানুষকে সুস্থ ও সুনাগরিক করতে পারে না। শারীরিক অসুস্থতায় ডাক্তার বদ্যি রয়েছে, পরিবার এবং আপনজনদের সহযোগিতা ও চেষ্টা রয়েছে সুস্থ করবার - কিন্তু যে শৈশব মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে তাদের কি উপায়? মনোবিদের কাছে যাওয়া? সম্প্রতি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে প্রতি দশ জন শিশুর মধ্যে এখন চারজন শিশুর শৈশব কোন না কোন প্রকারে ক্ষতিগ্রস্ত। এই সংখ্যাটি হু-হু করে বেড়ে চলেছে। এই শিশুদের মানসিক বিকাশ ঠিকমতো হতে পারে না। তারা ভীত এবং স্বার্থপর হতে থাকে, বড় হয়ে অপরাধ জগতে প্রবেশ করে, নারী নির্যাতন, শিশু ধর্ষণ করে থাকে, বিপথগামী হয়। আমাদের দেশে বিবাহিত জীবনে মারধর, আর যৌন অত্যাচারের ঘটনা খুব বেশী। সারাদেশে ৩৮ শতাংশ। সেই দম্পতির সন্তান   শৈশবেই যখন দেখে পারিবারিক হিংসা,  অত্যাচার, মারামারি - বাবা, মা-কে মারছে, সে শিশু বড় হয়ে তার স্ত্রীকে মারবে, কন্যা শিশুটি বড় হয়ে মার খাবে, সেটাই তাদের কাছে যেন স্বাভাবিক। বিনা প্রতিবাদে তারা মেনেও নেবে, সেই ট্রাডিশন সমানে চলবে। দেশে শিক্ষার হার যতই বাড়ুক,  পুরুষতান্ত্রিক সমাজে জোর করে স্ত্রীর সংগে যৌন সংসর্গ করা, পণের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন করা, মদ খেয়ে স্ত্রীকে প্রহার -- এই কুপ্রথাগুলি ধনী-দরিদ্র,  শিক্ষিত-অশিক্ষিত, গ্রাম-শহর সর্বত্র।  নিজেদের  শৈশবে  যে পুরুষ মা-কে অত্যাচারিত হতে দেখেছে, আর যাই হোক তার মানসিক অসুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে না। পিতা-মাতার মতবিরোধ যে শিশুটি জন্মাবধি দেখেছে, দেখেছে মা-বাবার আলাদা আলাদা অধিকারবোধ তার প্রতি, কুঁড়ি অবস্থা থেকে ক্রমাগত দোটানা, উদ্বেগ, চিন্তার শিকার তারা। সে কখনো পিতা-মাতার সম্পর্ককে শ্রদ্ধার চোখে দেখে না। স্ত্রী-পুরুষ কাউকেই শ্রদ্ধা করার উপকরণ মা-বাবা তাকে দিতে পারে নি কোনদিন, অতএব বড় হয়ে সে পার্ভার্সন বা বিকৃত কামের শিকার হয়, তার দায় কি তার বাবা-মা নেবে? এখানে মনোবিজ্ঞানের বিষয়টি আসে। মনোবিজ্ঞানে প্রায় সাড়ে পাঁচশ বিকৃতির উল্লেখ রয়েছে। তাদের মধ্যে 'পেডফিলিয়া' একটি বিকৃতি। এই রোগীরা শিশুনিগ্রহ ও শিশুধর্ষণ করে। আমাদের দেশে বর্তমানে কাগজ খুললেই শিশুনিগ্রহ ও ধর্ষনের খবরগুলি চোখে পড়ে। অর্থাৎ এই রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তার কারণ অনেকগুলি। আমাদের মনে রাগ, হতাশা, ক্ষোভ, আনন্দ বিভিন্ন অনুভূতির যে মিশ্রণ রয়েছে তার বহিঃপ্রকাশ বাধাপ্রাপ্ত হলে জন্ম নেয় মানসিক অসুস্থতা। বর্তমানে বাবা-মা তার শিশুকে তার স্বাভাবিক শৈশব নষ্ট করে নাম যশ প্রতিপত্তির জন্য নানারকম প্রতিযোগিতায় ঠেলে দিচ্ছে, এটিই রোগের মস্ত বড় কারণ। মা-বাবার পরস্পরের প্রতি বিরূপ আচরণও শিশুমনে বপন করে বিকৃতির বীজ। বয়সোচিত যৌনশিক্ষার অভাবও বিকৃতির জন্ম দেয়। শিশুটি 'নেগেটিভ' হতে হতে প্রাপ্তবয়স্ক হয়, শিশুধর্ষণের মতো অপরাধ করে ফেলে। যৌনতা স্বাভাবিক প্রবৃত্তি মানুষের, উপযুক্ত শিক্ষা ও বহিঃপ্রকাশের অভাবে অপরাধে পরিণত হয়। আবার মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি রহস্যমোচন, তা করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে। এক সমীক্ষা থেকে জানা যায় বিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবহারের মোট ৩৫ শতাংশই পর্ণগ্রাফি। আজ যে ব্যক্তি শিশুধর্ষণ করছে, ধর্ষণ করে হত্যাও করছে সমাজ ও আইনের চোখে তারা জঘন্যতম অপরাধী। দন্ডবিধি কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছেও, আইন পরিমার্জিত হয়ে অর্ডিন্যান্স জারি হচ্ছে, তবুও মিডিয়ার দৌলতে মাত্র ২০ শতাংশ অপরাধ জনসম্মুখে উপস্থিত হয়। বাকী ৮০ শতাংশ রয়ে যায় অন্তরালে। যে শিশুটি ধর্ষিত হচ্ছে, বাড়ীর লোকজন তার ভবিষ্যৎ চিন্তা করে এই ঘটনা গোপন রাখে। কিন্তু সেই শিশুর ভবিষ্যৎ কি সুরক্ষিত? তার সংগে অত্যাচার যে করেছে চোখের সামনে তাকে ঘুরে বেড়াতে দেখে তার মনে ভীতি, ক্ষোভ, জিঘাংসা জন্ম নেয় না? এই ঘটনার ভয়াবহতা সারাজীবন শিশুটি বয়ে বেড়াবে। অন্যদিকে অপরাধী শাস্তি পেলে সে বুঝবে অন্যায় করলে শাস্তি আছে। তার জীবন স্বাভাবিক খাতে বইবে। তাই শাস্তি চাই। আবার আইনের চোখে শিশুধর্ষণ দন্ডনীয় অপরাধ হলেও মনোবিজ্ঞানের জগতে ধর্ষণকারী একটি রোগী। তার রোগ বিকৃতমানসিকতাজনিত রোগ। রোগের চিকিৎসাও রয়েছে। আইন তার কাজ করুক, চলুক ব্যক্তিটির চিকিৎসা। আর এই রোগ প্রতিরোধ করতে হলে চাই উপযুক্ত শিক্ষা, আর্থসামাজিক বৈষম্যহীন অবস্থা, পিতা-মাতার স্বাভাবিক সম্পর্ক, সন্তানের  শৈশবকে বাধাপ্রাপ্ত না করা, শিশুকে সদর্থকদিকে চালিত করা এবং আত্মবিশ্বাস,  আত্মবিশ্বাস,  আত্মবিশ্বাস।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register