Mon 17 November 2025
Cluster Coding Blog

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ২৩)

maro news
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ২৩)

সুমনা ও জাদু পালক

বেশ, আমি তাহলে চুপ করে চোখ বন্ধ করে থাকলাম ,তোমরা যা করার করো। একটু তাড়াতাড়ি কর বন্ধুরা ।
লাল পরীর পালক বলল, কেন ,এত তাড়া কিসের তোমার?
------পরিখা পেরিয়ে ওপারে যে মস্ত প্রাসাদ দেখা যাচ্ছে, ওটা যেন মনে হচ্ছে আকর্ষণ করছে আমাকে। মনে হচ্ছে যেন দু' হাত বাড়িয়ে ওটা আমাকে ডাকছে কাছে যাওয়ার জন্য । আমার কেবলই মনে হচ্ছে যেন বহুদিনের চেনা কেউ রয়েছে ওই প্রাসাদে।
হঠাৎ আবার শোনা গেল অদৃশ্য কণ্ঠস্বর বলছে, বাঃ! তুমি একদম ঠিক বলেছ সুমনা। সত্যি তোমার অনেক আপনার লোক আছে ওই প্রাসাদে।
------- কি বলছো তুমি অদৃশ্য বন্ধু! আমার আপনার লোক এখানে কি করে থাকবে? তারা তো আছে অনেক অনেক দূরে, আমাদের গ্রামে। আমার মা, আমার পুটু পিসি,বাউল দাদু,হাসিখুশি দিদা আর … ‌
------ আর কে সুমনা?
----আরো আছে।
-----কে?
-------- বাবা ভোলানাথের মন্দিরের উপর মস্ত বড় একটা ছাতার মতো যে বটগাছটা দাঁড়িয়ে আছে,তার ডালে ডালে সারাদিন খেলা করে বেড়ায় যে অসংখ্য পাখিরা ,ওরাও আমার আপনার জন। এখানে এই প্রাসাদে ওরা কি করে আসবে?
----- না ,ওরা নয় ,অন্য কেউ।
------ কে তাহলে ,আমার বাবা?
------- ওই প্রাসাদে ঢুকলেই তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে।
------- কিন্তু ঢুকবো কি করে? আমিতো দড়িটা ধরতে পারছিনা!
---- একবার উপরের দিকে তাকিয়ে দেখো।
------ কি দেখব,দড়িতো আমার নাগালের বাইরে।
-------আহা তাকিয়েই দেখো না একবার।

         সুমনা চোখ খুলে উপর দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে দেখে, আলোর জাল সমেত সে একেবারে দড়িটার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। বিস্মিত সুমনা অদৃশ্য কণ্ঠকে জিজ্ঞাসা করে, এটা সম্ভব হলো কি করে? আমিতো  অনেক অনেক নীচে ছিলাম, এত উঁচুতে আমাকে কে নিয়ে এলো?

অদৃশ্য কন্ঠ বললো ,এর জন্য তুমি তোমার সাত রঙের সাত পালক বন্ধুকে ধন্যবাদ দাও সুমনা। ওদের জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে কিভাবে
ওরা নিচ থেকে ভাসতে ভাসতে যত উপরে উঠেছে সঙ্গে সঙ্গে ওদের শরীর থেকে নির্গত আলোকরশ্মি দিয়ে তৈরি জাল তাও তোমাকে নিয়ে ভাসতে ভাসতে উপর উঠে এসেছে। এবারে যাও সুমনা, দড়ি ধরে পরীক্ষার ওপারে পৌঁছে যাও অনেক বিস্ময় তোমার জন্য অপেক্ষা করছে ওপারে তোমার দেখা কখন পাব অদৃশ্য বন্ধু বললাম না ঠিক সময়েই আমার দেখা পাবে কোন ভয় নেই।
সুমনা এবার হাত বাড়িয়ে দড়িটা ধরতেই মুহুর্তের মধ্যে সেই আলোর জাল উধাও হয়ে গেল কমলা রঙের পালক বলল, আমরা এবার আসি সুমনা, দরকার হলে স্মরণ করো আমাকে।
_---- আচ্ছা।
সুমনা এবার সতর্কভাবে দড়ি ধরে ঝুলতে ঝুলতে একসময় পৌঁছে গেল ওপারে অর্জুন গাছের মাথায়। তারপর খুব সহজেই গাছের ডাল ধরে নেমে এলো নিচে।
গাছটার ঠিক উল্টোদিকে বিশাল চওড়া কমলা রঙের গেট ।গেটের দুপাশে দুজন সশস্ত্র প্রহরী ।বাপরে কি বিশাল মোটা গোঁফ দুজনের !মাথায় চওড়া পাগড়ী ।কিন্তু ওরাতো পুতুলের মতো স্থির ।ওদের চোখের পাতা পড়ছে না। এ তো পাথরের মূর্তি। কিন্তু একদম জ্যান্ত মনে হচ্ছে।
কিন্তু গেট তো বন্ধ । সুমনা ভিতরে ঢুকবে কি করে? সুমনা হাত দিয়ে ঠেলে দেখতে যাচ্ছিল গেটটা খোলা যায় কিনা। কিন্তু তার আগেই অদৃশ্য কন্ঠে চিৎকার করে উঠলো, খবরদার সুমনা গেটে হাত দিওনা ।শুধু গেটে কেন, এখানে কোন কিছুতে হাত দিলে তুমি সঙ্গে সঙ্গে ওদের মতই পাথরের মূর্তি হয়ে যাবে সুমনা। শিউরে উঠে হাতটা সরিয়ে নিল সুমনা। আর ঠিক তখনই তার মনে পড়ে গেল, কোন অসুবিধায় পড়লে তাকে তো এবার কমলা পরীর পালকের সাহায্য নিতে হবে। তাই সে মনে মনে কমলাপরীর পালক কে বলল, বন্ধু ,সাহায্য করো আমাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কমলা পরীর পালক এসে উপস্থিত হলো। আর কী আশ্চর্য !কমলা রংয়ের পালক গেটটা ছুঁতেই সেটা আপনা আপনি খুলে গেল। সামনে চওড়া রাস্তা ।দুপাশে খুব সুন্দর ফুলের বাগান। আর কত পাখি বসে সেই ফুল গাছে। কিন্তু সব স্থির, পাথরের মত ।সুমনা এগিয়ে চলল।

চলবে...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register