Mon 17 November 2025
Cluster Coding Blog

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ২১)

maro news
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ২১)

সুমনা ও জাদু পালক


সুমনা খুব ভালো করে তাকিয়ে দেখল দড়িটাকে।
বেশ পোক্ত দড়ি মনে হচ্ছে। কিন্তু একটা মুশকিল হলো যে, শাল গাছ টা এতটাই উঁচু এবং এমন খাড়া ভাবে উঠে গেছে যে অত উঁচুতে সুমনা পৌঁছাবে কি করে বুঝতে পারছিল না। সুমনা শাল গাছের কাছে গিয়ে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করল উপরে উঠতে। কিন্তু গাছটার গা এতটাই পিচ্ছল যে ,সুমনা হাত দুই তিনের বেশি উঠতেই পারল না।
সে বুঝতে পারছিল না কিভাবে ওই দড়িটার কাছে পৌঁছানো যায় ।ঠিক তখনই দুধরাজ এসে দাঁড়ালো তার সামনে। সঙ্গে সঙ্গে সুমনার মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল। দুধরাজের পরিখা পার হয়ে ওপারে যেতে মানা আছে। কিন্তু এপারে তো কোন মানা নেই ।
সুমনা তখন মনে-মনে অদৃশ্য বন্ধুকে স্মরণ করে বলল, বন্ধু ,আমাকে সাহায্য করো ।আমাকে দুধরাজের পিঠে বসিয়ে দাও আর দুধরাজকে বলো ও যেন আমাকে দড়ির কাছে পৌঁছে দেয়। অদৃশ্য কণ্ঠ সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, বেশ তাই হবে।
সুমনাকে নিয়ে কেউ যেন এবার
দুধরাজের পিঠে আবার বসিয়ে দিল। আবার ডানা মেললো দুধরাজ। উড়তে উড়তে ঠিক শাল গাছটার মাথার কাছাকাছি পৌঁছাতে সুমনা হাত বাড়িয়ে ধরে ফেলল দড়িটা। অদৃশ্য কন্ঠ বলল, এবার এগিয়ে যাও সুমনা। তবে আবারো একটা কথা বলছি ,মনে রেখো। পরিখার নিচে আছে গভীর জল আর সেই জলে ঘুরে বেড়াচ্ছে হিংস্র কুমিরের দল। তুমি আস্তে আস্তে এগিয়ে যাও।নিচের দিকে একেবারেই তাকাবে না।
সুমনা বলল, কোন চিন্তা করোনা অদৃশ্য বন্ধু, আমি ঠিক পৌঁছে যাব ওপারে ।কিন্তু ওপারে গিয়ে আমি কি করবো ,তাতো বললে না।
অদৃশ্য কন্ঠ বলল,আমার ওপারে যেতে কোনো বাধা নেই ।তুমি ওপরে পৌঁছেই আমার দেখা পাবে।আর তখুনি তোমার পরবর্তী কাজ কি হবে তা বলে দেবো ।এখন বিদায় বন্ধু।
সুমনা বলল, বিদায় !
সুমনা দড়িতে ঝুলে আছে। দড়িটা সত্যি খুব শক্ত। কিন্তু দড়িটা এতই সরু যে বেশিক্ষণ ঝুলে থাকা যায় না।
সুমনা মনে মনে রাধামাধব মন্দিরের বিগ্রহের
উদ্দেশ্য প্রণাম জানায়। তারপর মায়ের মুখ স্মরণ করে মনে মনে আশীর্বাদ প্রার্থনা করে। দড়িতে ঝুলতে ঝুলতে আস্তে আস্তে এগিয়ে চলে সুমনা ।অর্ধেকের বেশি পথ পার হওয়ার পরে হঠাৎ তার হাত দুটো ব্যাথায় টনটন করতে লাগলো। বাধ্য হয়ে সে হাত পাল্টে পাল্টে একহাতে এগুতে শুরু করলো।
এটা মোটেই সহজ ছিল না তার পক্ষে ।কারণ একহাতে ঝুলে ঝুলে এগুনো খুব কষ্টকরোৈঐ তবু দাঁতে দাঁত চেপে মন একাগ্র করে এগিয়ে চললো সুমনা। ঐতো ওপারটা একদম দেখা যাচ্ছে পরিষ্কার ।আর হাত তিনেক এগিয়ে গেলেই পৌঁছানো যাবে ওপারের অর্জুন গাছের মাথায় ।ঠিক এই সময়ে ঘটল একটা অঘটন ।দীর্ঘ সময় ধরে একহাতে ঘষটে ঘষটে এগুলোর জন্য সুমনার হাতের তালুতে ঘাম জমে গেছিল। আর তাই পিছলে গিয়ে সুমনের হাত থেকে দড়িটা গেল ফসকে। প্রবল বেগে সুমনা নিচের পরিখার দিকে এগিয়ে চলল। তবুও ভয় পেলোনা সুমনা ।সে মনে মনে আবার প্রণাম জানাল রাধামাধবের উদ্দেশ্যে। ঠিক সেই সময় ঘটলো এক চমৎকার। নিচের দিকে প্রবল বেগে পড়তে পড়তে সুমনার হঠাৎ মনে হল যে সে যেন কোন একটা সূক্ষ্ম জালে আটকে গেছে। ভালো করে চারিদিকে তাকাতেই সুমনা দেখতে পেল যে সাত পরীর দেওয়া সাত রং এর সাতটি পালক তার চারিদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে আর তাদের শরীর থেকে সূক্ষ্ম আলোকরশ্মি বেরিয়ে জালের মত একটা জিনিস তৈরি করেছে।সুমনা। রক্ষা পেয়েছে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে।

চলবে

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register