Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

হৈচৈ শনিবারের গদ্যে অনিন্দিতা শাসমল

maro news
হৈচৈ শনিবারের গদ্যে অনিন্দিতা শাসমল

সেপ্টেম্বর ,আমার আগমনী !

"শরতে আজ কোন্ অতিথি এল প্রাণের দ্বারে। আনন্দগান গা রে হৃদয়, আনন্দ গান গা রে।।" বর্ষার জলধারা মেখে সবুজে সবুজময় হয়ে আছে প্রকৃতি। সাদা মেঘের ফাঁক দিয়ে সকালের সোনালী রোদ এসে পড়েছে আমাদের উঠোনে । মাটির দাওয়ায় মাদুর পেতে বসে ,দুলে দুলে বই নিয়ে পড়ছি কেউ , কেউ বা হাতে পেন নিয়ে উপুড় হয়ে ঝুঁকে আছে খাতার পাতায় । একটু দূরে বসে বাবা রেডিওতে সাতটা পঁচিশের খবর শুনছিলো । খবর শেষে কানে ভেসে এলো মন কেমন করা সেই গান-- গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ আমার মন ভুলায় রে... তখনই উদাসী মন ছুটে যেতে চাইলো ওই নীল আকাশে, যেখানে পেঁজা তুলোর মতো মেঘগুলো কী অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে, প্রকৃতির সবুজের দিকে তাকিয়ে ! সেপ্টেম্বর মানেই আকাশে বাতাসে পুজো পুজো গন্ধ । তার সঙ্গে একটি ছোট্ট মেয়ের হৃদয়ের গোপন কুঠুরিতে বেজে ওঠে আনন্দগান ! তার অনাড়ম্বর জন্মদিনে মা বাবার স্নেহ- ভালোবাসার সঙ্গে মিশে থাকে, যে কোনো একটি নতুন বইয়ের গন্ধ ! পরের দিন শিক্ষক দিবসে দিদিমণিদের জন্যে... না না , আজকের দিনের মতো কোনো দামি গিফট্ নয় , স্নো স্প্রে , ব্লাস্টার ,কেক , বেলুন অথবা ঝলমলে রঙিন কাগজের বন্যা নয়। আগের দিন রাত জেগে, সাদা আর্ট পেপারে রঙিন কাঠ পেন্সিল দিয়ে নিজের হাতে আঁকা ও লেখা একটি সুন্দর কার্ড , আর বড়জোর এক টাকা করে চাঁদা তুলে, একটি করে পেন আর প্লেটে চারটে মিষ্টি। এই ছিলো টিচার্স ডে'তে আমাদের আন্তরিক আয়োজন। সেপ্টেম্বর মানেই মায়ের বাক্সের ন‍্যাপথলিন দেওয়া শাড়িগুলো কড়া রোদে ভাঁজ খুলে একটু আলগা করে ফেলে রাখা , আর ওই রোদের মধ্যেই ছুটে গিয়ে নাক ডুবিয়ে প্রাণ ভ'রে সেগুলোর গন্ধ নেওয়া ; কখনও পাট ভেঙে দেওয়ার জন্য মায়ের বকুনি । সেপ্টেম্বর মানেই তো মাঠে মাঠে কাশ, আর নীল আকাশে ঘুড়ির মেলা ! সেপ্টেম্বর মানে , একদিন সকালে উঠে দেখা -- বাড়ির সাইকেল দুটো আর সেলাই মেশিনটা পরিষ্কার করছে বাবা। জেঠিমার হাত থেকে ধর্মঠাকুরের পুজোর নকুলদানা, বাতাসা অথবা সন্দেশ খেয়ে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত , দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ ধানক্ষেতের আলে দাঁড়িয়ে , ক্রমশঃ দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যেতে থাকা লাল-নীল-সবুজ ঘুড়িগুলোর সুতোয় টান দিয়ে রাখা। হাতের লাটাইটা যত্ন করে ধরে, সেই দিকে বেশি ধ‍্যান দিতে গিয়ে ,সরু আল থেকে ধানক্ষেতের জল-কাদার মধ‍্যে ধপাস্ , কখনও আবার ভাইবোনদের সঙ্গে ঠেলাঠেলি। বাড়ি ফিরে রেলশহর খড়্গপুরে বিশ্বকর্মা পুজোর আলোকসজ্জা দেখতে জ‍্যাঠামশাইয়ের সঙ্গে দল বেঁধে হাঁটা দেওয়া। বিশ্বকর্মা পুজো চলে যাওয়া মানেই তো শিউলির গন্ধ , আর অপেক্ষা করে থাকা অপরূপ একটি ভোরের ; যে ভোরে বাবার ডাকে ঘুম ভাঙা , আর ঘুমজড়ানো চোখে শোনা-- আকাশবাণী থেকে সম্প্রচারিত চিরচেনা সেই প্রভাতী অনুষ্ঠান... মহিষাসুরমর্দিনী । কানে মনে প্রাণে , আর চরাচরে ধ্বনিত সেই মায়াময় উদাত্ত কন্ঠস্বর..... "আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর ; ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা ; প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ‍্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা। আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি অসীম ছন্দে বেজে উঠে রূপলোক ও রসলোকে আনে নব ভাবমাধুরীর সঞ্জীবন।"
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register