Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ১৭)

maro news
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ১৭)

সুমনা ও জাদু পালক

চারিদিকে তাকায় সুমনা। কিন্তু কাউকে দেখতে পায়না। সুমনা অবাক হয়ে বলে, কে তুমি? তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না কেন? ------ সময় হলেই দেখতে পাবে আমাকে। - ---------আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো ?কেন নিয়ে যাচ্ছ ? -------ম্যাজিক দেখাতে ! -----ম্যাজিক ? ----হ্যাঁ । -----কি ম্যাজিক? ------ একটু ধৈর্য ধরে বোসো, দেখবে অনেক ম্যাজিক হবে । ---- কিন্তু আমার মা একা আছে। মায়ের জ্বর হয়েছে।আমাকে না দেখতে পেলে তো চিন্তা করবে মা। ----- কিচ্ছু ভেবো না। তুমি না ফেরা পর্যন্ত তোমার মা ঘুমিয়ে থাকবে। আর তোমার মায়ের জ্বর ভালো হয়ে যাবে।

ঘোড়াটা সুমনাকে পিঠে নিয়ে চলছে তো চলছেই ।গ্রামের পর গ্রাম, মাঠের পর মাঠ, বড় বড় জলাশয়, ফসলের ক্ষেত, বাগান-- সব পার হয়ে চললো একে একে। শেষে ঘোড়াটা এসে দাঁড়ালো মস্ত বড় এক বনের ধারে। পেল্লাই লম্বা লম্বা গাছ সেই বনে। আর সেই গাছগুলো অসংখ্য ডালপালা ছড়িয়ে দিয়েছে চারিধারে ।একটা গাছের সঙ্গে আরেকটা গাছে গায়ে গা লাগিয়ে চাঁদের আলো দিয়েছে আটকে। পুরো বনটা মিশমিশে কালো অন্ধকার এ ঢাকা। শুধু হাজার হাজার জোনাকি পোকা থোকায় থোকায় উড়ে বেড়াচ্ছে গাছের ডালের ফাঁকে ফাঁকে,এখানে-সেখানে। টিপটিপ আলো জ্বালিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে জঙ্গলের অন্ধকার দূর করতে। ঝিঝি পোকার একটানা ডাক ভেসে আসছে । সেই পাখির পালক টা আলো ছড়াতে ছড়াতে এগিয়ে চলেছে সামনে ।আর সেই আলোয় পথ দেখে গভীর বনের ভিতর দিয়ে এগিয়ে চলেছে ঘোড়া ।মাঝে মাঝেই মোটা মোটা বুনো লতা গাছের ডাল থেকে নেমে এসে আটকে দিচ্ছে পথ।কিন্তু ঘোড়াটা অবলীলাক্রমে সেই লতা সরিয়ে এগিয়ে চলেছে। একসময় বন শেষ হয়ে গেল। আর কিছুটা যাওয়ার পরেই সামনে পথ আটকালো এক মস্ত নদী। বিশাল চওড়া । এবার? এবার কি হবে ?কেমন করে দুধরাজ পার হবে এই নদী ?হ্যাঁ এই সুন্দর সাদা ঘোড়াটাকে মনে মনে দুধরাজ নাম দিয়েছে সুমনা । হঠাৎ সুমনা শুনতে পায় আবার সেই কণ্ঠ বলছে, ভয় পেয়ো না, দুধরাজ ঠিক পেরিয়ে যাবে নদী। সুমনা ভীষণ অবাক হয়। ঘোড়াটার নাম যে সে মনে মনে দুধরাজ দিয়েছে, তাতো কাউকে বলেনি ।তাহলে ? ও জানলো কিকরে? আবার সেই কন্ঠ ভেসে এলো, অবাক হবার কিছু নেই সুমনা ।আমি সব জানতে পারি । ---কে তুমি?আমার সামনে এসোনা। ---- বললাম না সময় হলেই সামনে আসব আমি। চুপটি করে দেখো, এবার একটা ম্যাজিক হচ্ছে। সত্যিই তো ম্যাজিক! সুমনা দেখে , দুধরাজের পিঠের দুপাশ থেকে একজোড়া ডানা বেরোলো। ধবধবে সাদা ডানা ।ঠিক রাজহাঁসের ডানার মতো। দুধরাজ এবার ডানা মেলে মাটি ছাড়িয়ে উপরে উঠতে শুরু করল ।উড়তে উড়তে নদী পার হচ্ছে দুধরাজ। উপরে নীল আকাশে অসংখ্য তারা ।যেন খুব কাছে চলে এসেছে ওরা। হাত বাড়ালেই ধরা যাবে। আর অনেক নিচে নদীর জল কল কল করে বয়ে চলেছে ।শনশন করে বাতাস দিচ্ছে। নদীর জলে চাঁদের আলো পড়ে ঝিকমিক করছে। ভেঙে গলে ছড়িয়ে যাচ্ছে নদীময়। একসময় নদী পেরিয়ে গেল দুধরাজ। আবার মাটিতে ছোটা। আবার গ্রামের পর গ্রাম, মাঠের পর মাঠ, ফসলের ক্ষেত সব পেরিয়ে চলল দুধরাজ ।আবার এসে দাঁড়ালো মস্ত একটা বনের সামনে ।সেটাও পেরিয়ে গেল। সেটা পেরিয়ে আবার একটা নদী ।আবার পক্ষীরাজ হয়ে উড়ে নদী পার হওয়া । এভাবে একের পর এক সাত সাতটা বন আর বারোটা নদী পেরিয়ে তেরোয় নম্বর নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে গেল দুধরাজ ।আগের নদী গুলোর চেয়ে অনেক অনেক বেশি চওড়া এটা।আর জলের রং টা অদ্ভুত !একদম দুধের মত সাদা !এরকম আবার নদী হয় নাকি? এটা কি তাহলে গল্পে শোনা সেই দুধনদী?তাহলে পরীরা কই? জ্যোৎস্না রাতে পরীরা নাকি দুধ নদীতে স্নান করে , সাঁতার কাটে? কোথায় তারা?

চলবে

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register