Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || ভ্যালেন্টাইনস ডে ও সরস্বতী পুজো || স্পেশাল এ বিজয়া দেব

maro news
T3 || ভ্যালেন্টাইনস ডে ও সরস্বতী পুজো || স্পেশাল এ বিজয়া দেব

পুরস্কার

মাধ্যমিক সবে শেষ হয়েছে, আগামীকাল সরস্বতী পুজো। একটা হলুদ শাড়ির জন্যে বিনি মায়ের কাছে বায়না করল। দুর্গা খাটের নীচে রাখা অতি পুরোনো জং ধরা টিনের ফুলতোলা সুটকেসটা টেনে বের করছে দেখে বিনি কপাল কুঁচকে তাকাল। আগামীকাল তাদের ইশকুলের সবাই হলুদ শাড়ি পরে আসবে। ক,দিন থেকে পাশের কলেজের বি,এ প্রথম বর্ষের ছাত্র অনিকেত বিনির পেছনে ঘুরঘুর করছে। একটা চমৎকার হলুদ শাড়ির স্বপ্ন সে দেখেছে গতকাল। অনিকেত সেদিন তার কাছে এসে বাইক থামিয়ে গলা নামিয়ে বলেছিল - পরীক্ষা কেমন হল? তারপর বলেছিল - সরস্বতী পুজোর দিন ইশকুলে আসছ? ব্যস ওইটুকুই। কিন্তু বিনির মন বলছে - আগামীকাল একটা বিশেষ দিন। তাছাড়া, আজ সরস্বতী ইশকুলে এসে গেছেন। একবার গিয়ে দেখে এসেছে সে।কী চমৎকার মুখশ্রী। টানা টানা দুটি আয়ত চোখ। শ্বেতশুভ্র বেশবাশ। হাতে বীণা। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আছে - "বিমল মানস সরস বাসিনী /শুক্লবসনা শুভ্রহাসিনী/ বীণানন্দিত মঞ্জুভাষিণী কমলকুঞ্জাসনা।" কবিতাটির নাম "পুরস্কার "। কেন কে জানে এই কবিতাটিকে দারুণ ভালবাসে বিনি। পুরো কবিতাটি সে ঝরঝর করে বলতে পারে। আজ তো রিমি দিদিমণি বলেছেন -এই বিনি, "পুরস্কার " কবিতাটি আগামীকাল দেবীর সামনে তোমাকে বলতে হবে। তৈরি হয়ে এসো। আর সবাই হলুদ শাড়ি পরে আসতে হবে। এবার মাধ্যমিক দিয়েছে বিনি। পরীক্ষা নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিল সে যে হলুদ শাড়ির কথা মনেই ছিল না। দুর্গা তিন বাড়িতে রান্নার কাজ করে। বিনিকে নিয়ে সে স্বপ্ন দেখে, আকাশচুম্বী স্বপ্ন। মেয়েটা পড়াশুনোয় ভালো। সে যে তার কতবড় ভাগ্য। বিনির বাবা নেই। সেই ছোট্টবেলা থেকে সে একহাতে মেয়েটাকে এই এতটা বড় করেছে, মানে করতে পেরেছে। বাকি পথটুকু যদি এভাবেই চলতে পারে... ৷ একটা হলুদ শাড়ি বেরোল, কিন্তু সেটি এত পুরনো। রঙ এর জলুস নেই। ফ্যাসে যেতেও পারে। ৷ এই রঙ চটে যাওয়া পুরনো শাড়িটা পরেই সে চলল ইশকুলে। মনটা তার ছোট হয়ে আছে। আজ সে কারো দিকে তাকাবে না। অনিকেতর কথাও ভাববে না। গরীবের স্বপ্ন দেখা বারণ। তার এই বিবর্ণ শাড়ি দেখে ম্যাম কি তাকে ডেকে নেবেন কবিতাপাঠে? ৷ এখন "পুরস্কার " কবিতা পাঠ করছে বিনি। দীর্ঘ কবিতাটির শেষ পর্যায়ে এসে সে যখন পড়ছে, রাজা বিভিন্ন মান্যগণ্যকে দাতাকর্ণের মত অগাধ ধনরত্ন দান করে কবির সুমধুর কাব্যপাঠ শুনলেন, তারপর কবিকে বললেন - "ভাবিয়া না পাই কী দিব তোমারে/ করি পরিতোষ কোন উপহারে / যাহা কিছু আছে রাজভান্ডারে সব দিতে পারি আনি/ প্রেমাশ্রুপূর্ণ নয়নের জলে / ভরি দুনয়ন কবি তারে বলে - কন্ঠ হইতে দেহ মোর গলে ওই ফুলমালা খানি".. আর কিছু নয়, ধন নয় রত্ন নয়, কবি চাইলেন শুধু রাজকন্ঠের মালা। অথচ কবির দরকার দুটো কড়ির, মানে অর্থের। কবিপত্নী তো তাই বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন কবিকে। কেন কে জানে বিনির কণ্ঠে যেন আলাদা মাত্রা যোগ হয়েছে আজ। কবিতাপাঠ শেষে বড়দিদিমণি এসে জড়িয়ে ধরে বললেন - মনটা একেবারে ভরিয়ে দিলি আজ। এত ভালো এত ভালো.. সে দেখল চমৎকার সব বাহারি হলুদ শাড়ি পরা বন্ধুরা তার দিকে তাকিয়ে আছে অবাকচোখে। রিমি দিদিমণি বললেন -বিনি আজ তার সবটুকু দিয়ে কবিতাপাঠ করেছে। আচমকা লক্ষ করল সে অনিকেত তাদের ইশকুলে। তার দিকে তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register