Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পবাজে মুহাম্মদ সেলিম রেজা

maro news
গল্পবাজে মুহাম্মদ সেলিম রেজা

জিও মদনদা

কোম্পানির বিশেষ কাজের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে দায়দ্রাবাদ যেতে হয়েছিল। কাজ সেরে কলকাতার অফিস হয়ে রাতের ট্রেনে বাড়ি ফিরেছি। পরদিন একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজতে মাজতে পুকুর পাড়ে এসে দেখি মদনদা নিমগাছে ঠেস দিয়ে বসে আছেন। চিন্তাবিগ্ন মুখমণ্ডল, উদাস চাউনি। দেখেই বোঝা যায় লোকটার উপর দিয়ে তুমুল ঝড় বয়ে গেছে। তাঁর মতো প্রাণবন্ত হাসিখুশি মানুষকে এই অবস্থায় দেখব ভাবিনি। বুকের ভিতরটা মোচর দিয়ে উঠল। তাড়াতাড়ি তাঁর কাছে ছুটে গেলাম। - দাদা, দাদা! ও মদনদা এখানে কী করছেন? - কে, কে? দাদা চমকে উঠে আমার দিকে তাকালেন। তারপর হাত দু'টো চেপে ধরে বললেন, পেঁচো তুই ফিরেছিস ভাই! - আপনার শরীর ঠিক আছে তো? - কিচ্ছু ঠিক নেই! আমাকে তুই বাঁচা ভাই। - কী হয়েছে? - তোর বৌদি যে আমাকে পথে বসিয়ে ছাড়ল। বৌদি পথে বসিয়ে ছাড়ল মানে! তাঁর মতো একজন সু-গৃহিণী, পতি অন্তপ্রাণ মহিলা কী এমন ভুল করলেন যে দাদা একেবারে ভেঙ্গে পড়েছেন? দাদা একটু ফাজিল টাইপের মানুষ, যে কোন বিষয় নিয়ে মজা করতে ভালোবাসেন। তাই বলে গিন্নির নামে এতবড় অপবাদ দেবেন? এতো কাঁচা বুদ্ধির মানুষ তিনি নন। নিশ্চয় গুরুতর একটা কিছু ঘটেছে। জানতে চাইলে তিনি বললেন, তোর বৌদি কো'থেকে এক আপদ এনে ঘরে তুলেছে। দু'জনে মিলে আমার হাড়মাস জ্বালিয়ে খেল। দাদা-বৌদি নিঃসন্তান। এই নিয়ে দাদাকে কোনদিন আফসোস করতে শুনিনি। তবে বৌদি মাঝে মাঝে দুঃখ করে বলেন, একটা পোকাও যদি পেটে ধরতে পারতাম! শেষ বয়সে কে দেখবে আমাদের? একটা ছেলে কিংবা মেয়ে দত্তক নেবার অভিলাষও ব্যক্ত করতে শুনেছি তাঁকে। কিন্তু দাদা রাজি হননি। বলেন, পেটের সন্তান আজকাল বাপ-মাকে দেখে না। সেখানে পরের ছেলে....? এই বেশ আছি। তবে কি বৌদি দাদাকে উপেক্ষা করে কোন বাচ্চা দত্তক নিয়েছেন? - তাহলে তো কোন সমস্যাই ছিল না। এ যে একেবারে দামড়া বাছুর। - বলেন কী! - দেখে আয় বাড়িতে কেমন মচ্ছব চলছে। এ শুধু অন্যায় নয়, রীতিমতো প্রতারণা। বৌদি এই কাজ করতে পারেন না, যেমন করে হোক তাঁকে ঠেকাতে হবে। তখনই আমি বৌদির মুখোমুখি হবার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। কি ছন্তু দাদা কিছুতেই রাজি হলেন না। নলিনীর বাড়ি যাচ্ছি বলে উঠে গেলেন। অগত্যা মুখহাত ধুয়ে ঘরে ফিরলাম। সামান্য জলযোগ করে গেঞ্জির ওপর সার্ট চাপিয়ে নিয়ে রওনা দিলাম মদনদার বাড়ির উদ্দেশ্যে। দরজা খোলাই ছিল, সটান ভিতরে ঢুকে পড়লাম। বৈঠকখানার পাশের ঘরে পালঙ্কের উপর বাঁ হাতের ভরে মাথা রেখে আধশোয়া অবস্থায় এক যুবক আরাম করছে। বয়সে বিশ-বাইশ বছরের মধ্যে। পরনে তার হাফপ্যান্ট, টি-শার্ট। মুখে চাপদাড়ি, চোখে চশমা। ঘরে পা দিতে সে খেকিয়ে উঠল, এ্যাই এ্যাই কে তুমি? পারমিশান নিয়ে ঘরে ঢুকতে হয় জানো না? এই বাড়িতে ঢুকতে আমাকে পারমিশান নিতে হবে? বলে কী ছোকরা! নাহ্ ব্যাটাকে আচ্ছা করে রগড়ে দিতে হচ্ছে দেখছি। বেশ কয়েকটি গলি মার্কা টিপ্পনি নির্বাচন করে মুখের অর্গল খুলতে যাব এমনসময় পিছন থেকে বৌদির উচ্ছসিত কন্ঠস্বর ভেসে এল, ঠাকুরপো কখন এলে? না পারলাম খিস্তি দিতে, না বৌদির প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হল। মদনদা কথিত দামড়া খি খি করে হেসে উঠল। - পেঁচো! এ আবার কেমন নাম? হি হি হি। - হাসার কী আছে? ওটা আমার ডাক নাম, ভালোবেসে সবাই আমাকে ওই নামে ডাকে। - হি হি হি! পেঁচো। দাঁত বের করে সমানে হি হি করে চলেছে আহাম্মক। রাগে আমার পিত্তি জ্বলে গেল। বুঝতে পেরে বৌদি যুবককে জোর ধমক লাগালেন, কেলো তুই থামবি! পেঁচো এই পরিবারের সদস্য। তোর পিসেমশাইয়ের ছোটভাই, আমার আদরের ঠাকুরপো। ওর নামে উল্টোপাল্টা কথা বললে কিন্তু এ বাড়িতে তোর জায়গা হবে না। একথায় কেলো কাবু হয়ে দাড়ি চুলকাতে লাগল। এই সূযোগে আমি বৌদিকে পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে চেপে ধরলাম, এসব কী হচ্ছে বৌদি? কে এই ছোকরা? উত্তরে বৌদি যা বললেন তার মর্মর্থ মোটামুটি এই রকম, কেলো হচ্ছে বৌদির আপন দাদার সন্তান। একটু হাবাগোবা টাইপের হলেও যথেষ্ট সমঝদার ছেলে।শিক্ষকদের অসহযোগীতার কারণে নবম শ্রেণিতে নাকানিচোবানি খেয়ে আর স্কুল মুখী হয়নি। বিরক্ত হয়ে বাবা মোড়ের মাথায় মিস্টির দোকানে করে দিয়েছিলেন। বছর ঘুরতে না ঘুরতে সেই দোকানে লালবাতি জলে যায়। নিন্দুকেরা বলে দোকানের মিষ্টির সিংহভাগ নাকি কেলোবাবুর কালকুঠরিতে চলে যেত। ইতিমধ্যে তার বেশকিছু ইয়ারবন্ধু জুটেছে, সকলেই মুম্বাই প্রবাসী। অলংকার তৈরীর কারখানায় কাজ করে। একদিন বাড়িতে কাউকে কিছু না জানিয়ে কেলো সোনার কাজ শেখার অভিলাষ নিয়ে তাদের সাথে মুম্বাই পাড়ি দেয়। কপাল গুণে সেখানেও বেশীদিন তিষ্টাতে পারেনি। হাড় কিপটে শেঠ যে পরিমান পারিশ্রমিক দিচ্ছিল তাতে স্টেটাস মেইন্টেন করা সম্ভব হচ্ছিল না। অতএব ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন। ততদিনে আম্পেয়ার বিগড়ে গিয়েছেন, বেয়াদব ছেলেকে বাড়ির চৌকাঠ মাড়াতে দেননি। বেচারা উপায়ান্ত না দেখে শেষমেশ পিসির আঁচলের তলায় আশ্রয় নিয়েছে। পিসির এখন সাপের ছুঁচো গেলার মতো অবস্থা, না পারছেন তাড়িয়ে দিতে না পারছেন পালন করতে। দিন সাতেক হল সে মদনদার বাড়িত অবস্থান করছে। এই ক'দিনে তার খাতিরযত্ন করতে গিয়ে হাজার তিনেক টাকা খরচ করে ফেলেছেন বৌদি। স্বভাবত মদনদার বুক টনটন করতে শুরু করেছে। শেষপর্যন্ত আজ সকালে, আপদ বিদেয় না হলে বাড়ি ফিরবেন না হুমকি দিয়ে বেরিয়ে গেছেন। - দাদা বুড়ো মানুষ, যাবেন কোথায়? এক-দু'বেলা এখান সেখানে কাটিয়ে ঠিক ফিরে আসবেন। কিন্তু কেলো জোয়ান ছেলে, আবেগের বশে যদি খারাপ কিছু বসে? হয়তো সে একটু আয়েশি, তাই বলে তো আর ঘাড় ধরে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া যায় না? - হ্যাঁ, তা তো বটেই! -তাছাড়া একদিন না একদিন বাপ-বেটায় মিল হবেই। আজ যদি ছেলেটার সাথে খারাপ ব্যবহার দিই, সেদিন দাদার সামনে দাঁড়াব কোন মুখে? তুমিই বলো ঠাকুরপো এখন আমি কী করি? বাড়া জুঞ্জালের কথা! কুল রাখি না মান রাখি? দাদার পক্ষ নিলে বৌদি চটে, আবার বৌদির হয়ে বললে দাদা বেজার হন। এই পরিস্থিতিতে মাঝামাঝি অবস্থান নেওয়া সমীচীন হবে বিবেচনা করে বললাম, আপাতত কেলো থাক, আমি দাদাকে বুঝিয়ে বলব। তবে হ্যাঁ, খরচাপাতির ব্যপারে আপনাকে হাতটান করতে হবে। - কী আর এমন খরচ করেছি ভায়া? কেলো আমার একটু ভালোমন্দ খেতে ভালোবাসে তাই আর কী মাছটা-মাংসটা....। এইরে কতো বেলা হল, কখন রান্না হবে? হঠাৎ করে বৌদি ত্রস্ত হয়ে উঠলেন। নাইলনের একটি ব্যাগ আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, বাজার থেকে এক কেজি মতো চিতল মাছে এনে দাও ঠাকুরপো। একটু দেখেশুনে নেবে যেন পচা না হয়। - চিতল মাছ তো আর সবসময় বাজারে আসে না বৌদি। - কেলো আমার চিতল মাছের পেটি খেতে খুব ভালোবাসে। যে করে হোক তোমাকে জোগাড় করতেই হবে ভাই। - যদি না পায়? - একান্ত না পাওয়া গেলে কচি দেখে একটা দেশী মোরগ নিও, কেজি দেড়েক ওজনের হলেই হবে। মদনদা মন্দ বলেননি বাড়িতে মচ্ছব চলছে। তা চলছে চলুক, কেলো চিতল মাছের পেটি খাক কিংবা মোরগের লেগ পিস, আমার তাতে কিছু আসে যায় না। কষ্ট হচ্ছিল মদনদার জন্য। বেচারা! জমিজমা বেচে লাখ পাঁচেক টাকার এমআইএস করে রেখেছেন। সুদের টাকায় সংসার নির্বাহ করেন। পরিস্থিতি যা দেখছি অল্পদিনের মধ্যে মূলধন ভেঙে পেট ভরানো ছাড়া উপায় থাকবে না। সেদিন দেখেছি গলা পযর্ন্ত খাওয়া কাকে বলে! জামবাটির একবাটি মাংস, পোয়াটাক আলু ভর্তা, খান ছয়েক বেগুন ভাজা দিয়ে এক সানকি সরু চালের ভাত গেলার পর, ছ'জোড়া রসগোল্লা, মাটির ভাঁড়ের একভাঁড় টকদই সাবার করে টমেটোর চাটনি চেটে ঢাস করে ঢেকুর তুলে আঁচাতে গেলেন বৌদির আদরের কেলোবাবু। ততক্ষণে আমার এঁটো থালা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। চুষে চুষে আঙুল সরু করে ফেলেছি। কেলো ফিরলে আমি কলতলায় গেলাম। হাত ধুতে ধুতে শুনতে পেলাম সে বৌদিকে বলছে, পিসি আমার প্যান্ট-সার্টটা একটু কিরিচ করে রেখ। বিকেলে বেড়াতে বেড়ুব। কপাল মন্দ ছেলেটার। কিরিচ করা প্যান্ট-সার্ট গায়ে চড়িয়ে, চোখে রঙিন চশমা এঁটে বেড়াতে যাবে এমনসময় সদর দরজায় করাঘাত। বৌদি আমাকে ঘরে ফিরতে দেননি। বৈঠকখানার তক্তপোষে শরীরটা বিছিয়ে দিয়ে ভাতঘুমে আছন্ন হয়ে পড়েছিলাম। উপর্যুপরি দরজায় আঘাত পড়ার শব্দে বিরক্ত হয়ে উঠে এসে দেখি বৌদি দরজা খুলে ধরেছেন। ওপারে একবুড়ো দাঁড়িয়ে। তাঁর পিছনে এক যুবতী। বুড়োর পরনে আধ ময়লা পাজামা-পাঞ্জাবি। মাথা ভর্তি কাঁচাপাকা চুল, মুখে লম্বা দাড়ি, কপালে চন্দন তিলক, হাতে ছড়ি, কাঁধে একটি শান্তিনিকেতনি ব্যাগ। মেয়েটির বয়স আনুমানিক আঠারো-ঊনিশ, সুশ্রী মুখমণ্ডল। সিথেয় একদলা সিঁদুর ছড়ানো। - আপনি নিশ্চয় কালাচাঁদের পিসিমা? বুড়োলোকটা জিজ্ঞাসা করলেন। - হ্যাঁ! কিন্তু আপনি....? - আমি কে? এক্ষুনি বুঝতে পারবেন আমি কে। ডাকুন আপনার ভাইপোকে? বুড়ো প্রায় জোর করে ভিতরে ঢুকে পড়লেন। তারপর শুরু হল তাঁর হম্বিতম্বি। - কোথায় কেলো? পিসির বাড়িতে গা ঢাকা দিয়ে পার পেয়ে যাবে ভেবেছ? বাটপার প্রতারক! আমার সাথে মামদোবাজি? তোমাকে আমি জেলের ঘানি টানিয়ে ছাড়ব, তবে আমার নাম.... - কে আপনি মশাই? চিৎকার করছেন কেন? এবার আমি বুড়োর মুখোমুখি হলাম। বুড়ো বিরক্ত হয়ে চোখের ভ্রূ নাচিয়ে বললেন, তুমি কেহে ছোকরা? - আজ্ঞে আমি পেঁচো। - পেঁচো তো এখানে কী করছ? যাও কোটরে লুকিয়ে থাকো গে। তারপর বৌদিকে লক্ষ্য করে বলতে থাকলেন, কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন বদমায়েশটাকে? ডাকুন ওকে, আজ আমি ওকে আস্ত রাখব না। ঠেঙিয়ে ওর বাবার.... - কেন? কী করেছে আমার কেলো? বুড়ো হাতের ছড়ি সজোরে ঠুকে বললেন, কী করেনি তাই জিজ্ঞেস করুন। কইরে মা নমিতা এদিকে আয় দেখিনি। মেয়েটি এগিয়ে এলে বুড়ো তেমনি তেজের সাথে বললেন, আমার মা মরা মেয়েটাকে আপনার ভাতিজা বিয়ে করে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এত সহজে আমি তাকে ছাড়ব না। দেশ থেকে এখনও আইন-আদালত উঠে যায়নি। পুলিশ প্রশাসন অকেজো হয়ে যায়নি। - কী সব যা তা কথা বলছেন? চোখ কপালে তুলে বললেন বৌদি। - প্রমাণ দেখান যে কেলো আপনার মেয়েকে বিয়ে করেছে। - তোমাকে দেখাব কেন হে ছোকরা? যা দেখাবার কোর্টে দেখাব। একথা শুনে বৌদি কপাল চাপড়ে আর্তনাদ করে উঠলেন, ঠাকুরপো তোমার দাদাকে ডাক। মাছ কিনতে বাজার যাবার সময় নলিনী দাদুর বাড়ি ঢুকেছিলাম, মদনদা সেখানে যাননি। সে কথা জানাতে বৌদি ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেলেন। ধপ করে মেঝেয় বসে পরে বললেন, এখন কী হবে? ততক্ষণে কেলো ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। যুবতী উচ্ছ্বাসিত হয়ে উঠে ছুটে গেল তার কাছে। - তুমি কীগো! কেন আমাকে ফেলে পালিয়ে এসেছ? - কে তুমি! - ওমা! নিজের বউকে চিনতে পারছো না? বাবা আমার কী হবে গো! বুড়ো স্প্রিংয়ের মতো তড়বড় করে লাফাতে লাফাতে কেলোর সামনে গিয়ে বললেন, কী ভেবেছ তুমি? সাপের পাঁচ পা দেখেছ? হারামজাদা আমার মেয়ের সর্বনাশ করে এখন চিনতে পারছ না। মেরে তোমার.... বুড়ো লাঠি উঁচিয়ে কেলোকে আঘাত করতে গেলে ছুটে গিয়ে তাঁকে প্রতিহত করে বললাম, আপনি বড্ড বাড়াবাড়ি করছেন মশাই। একদম গায়ে হাত দেবেন না। - গায়ে হাত দিলে কী করবে ? মারবে আমাকে? মার, দেখি তোর সাহস? আমার নাকের ডগায় লাঠি ঘোরাতে শুরু করলেন বুড়ো। কোনরকমে তাকে শান্ত করে কেলোকে চেপে ধরলাম, এই মেয়ে তোমার বউ? - না না, আমি ওকে চিনিই না। - কী! আমাকে চেনো না তুমি? - না! পাঁঠার মতো মাথা দুলিয়ে বলল কেলো। অতঃপর ক্যাঙ্গারুর মতো একলাফে বৌদির কাছে এসে পা ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দিল। - বিশ্বাস করো পিসি আমি বিয়ে করিনি। মিছে কথা বলছে ওরা, ফাঁসাতে চাইছে আমাকে। - বাবাগো! শুনছো ও কী বলছে? মেয়েটি আর্তনাদ করে উঠলে বুড়ো কাঁধের ঝোলা থেকে মোবাইল বার করে নম্বর মিলিয়ে কানে ধরে বলতে থাকলেন, ভেবেছিলাম থানা-পুলিশ করব না। কিন্তু এ ব্যাটা ভালো কথায় সোজা হবার বস্তু নয়। পুলিশ ডাকতেই হচ্ছে। অতঃপর হঠাৎ করে বিনয়ের অবতার হয়ে মোলায়েম স্বরে বলতে থাকলেন, আজ্ঞে হ্যাঁ স্যার কালপ্রিটটাকে খুঁজে পেয়েছি। আপনি তাড়াতাড়ি চলে আসুন। ততক্ষণ আমি ওকে আটকে রাখছি। বুড়ো পুলিশের সাথে কথা শেষ করে মোবাইলটা পুনরায় ঝোলায় রেখে দিলেন। তারপর একটা চেয়ার টেনে নিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসে পা নাচাতে নাচাতে বললেন, নমিতা ঘাবড়াস না মা। অফিসার আসছেন দলবল নিয়ে। বাছা কালাচাঁদ ঘুঘু দেখেছো ঘুঘুর ফাঁদ দেখোনি, এবার বুঝবে কতো ধানে কতো চাল। কেলো তখনও পিসির পায়ে ধরে অনুনয় বিনয় করে চলেছে, বিশ্বাস করো পিসি মেয়েটিকে আমি চিনি না। আমি তাকে বিয়ে করিনি। একথা শুনে মেয়েটি সুড়ুৎ করে কাছে গিয়ে কেলোকে উদ্দেশ্য করে বলল, ওগো তুমি এতো নিষ্ঠুর হলে কী করে? এইতো সেদিন কানের দুল কিনে দিলে, একজোড়া শাড়ি এনে দিলে। এর মধ্যে সব ভুলে গেলে? তারপর হঠাৎ করে বৌদিকে আক্রমণ করে বলল, নিশ্চয় পিসি তাবিজ-কবজ করেছে, তাই তুমি আমাকে ভুলে গেছ। - ঠিক বলেছিস মা, সব ওই বুড়ির যত কারসাজি। ওকে ও আমি জেলের ঘানি টানিয়ে ছাড়ব। মেয়েকে সমর্থন করে বুড়ো জোরে জোরে পা দোলাতে লাগলেন। রাগে আমার মাথার পোকাগুলো কিলবিল করে উঠল। চিৎকার করে উঠে বললাম, খরদার আমার বৌদিকে একটাও বাজে কথা বললে না। তা নাহলে.... কথা শেষ করতে পারলাম না। রিং রিং করে বুড়োর মোবাইল ফোন বেজে উঠল। বুড়ো ঝোলা থেকে সেটটা বার করে কল রিসিভ করলেন, হ্যাঁ স্যার বলুন। ওকে স্যার। - মা নমিতা পুলিশ অফিসার এসে গেছেন। তুই গিয়ে দরজা আগলে দাঁড়া। আমি এদিকটা দেখছি, যেন কেলোটা পালাতে না পারে। মোবাইল সেট ঝোলায় রাখতে রাখতে বললেন বুড়ো। বাবার নির্দেশ পেয়ে নমিতা ছুটে গিয়ে দরজার মুখে দাঁড়াল। এই অবসরে কেলো হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে এক ধাক্কায় বুড়োকে চেয়ার সুদ্ধ ফেলে দিয়ে দু'লাফে গিয়ে বাউণ্ডারি পাঁচিল টপকে ওপারে চলে গেল। এদিকে হয়েছে আর এককাণ্ড। বুড়ো চেয়ার সুদ্ধ উল্টে পড়বি তো পড় একেবারে বৌদির ঘাড়ে। রাগ-দুঃখ-ঘেন্নায় বৌদি বুড়োর চুল ধরে হ্যাঁচকা টান মারতে কাঁচাপাকা পরচুলা চলে এসেছ বৌদির হাতের মুঠোয়। বৌদি ভুত দেখার মতো চমকে উঠে বললেন, তুমি। বুড়ো খ্যাক করে হেসে উঠে বললেন, ভেবেছিলে পিসি-ভাইপো মিলে মদনাকে টাইট দেবে। পাল্টা কেমন দিলাম বলো? ব্যাটা কেলো আর এ জন্মে পিসির বাড়ি ঢোকার সাহস করবে না। - জিও মদনদা। মদনদা জিন্দবাদ। অপরিসীম আনন্দে চিৎকার করে নেচে উঠলাম আমি। অতঃপর ক'দিন জোর চুলোচুলি, অরন্ধন ব্রত পালনের মধ্য দিয়ে বৌদি প্রতিবাদ করে গেলেন। সময়ের নিয়মে তা একসময় স্তিমিত হয়ে এলে জানা গেল সেদিন পুলিশ অফিসারের ভূমিকা পালন করেছিলেন নলিনী দাদু। আর সেই মেয়েটা হল গিয়ে দাদুর শালীর মেয়ে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register