Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ধলেশ্বরীর অন্য ধারায় ভ্রমণ কাহিনীতে লোকমান হোসেন পলা

maro news
ধলেশ্বরীর অন্য ধারায় ভ্রমণ কাহিনীতে লোকমান হোসেন পলা

লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর প্রাচীন গ্রামবাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অপরূপ নিদর্শন

প্রাচীন গ্রামবাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অপরূপ নিদর্শন লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর। লোকসংস্কৃতির আদলে তৈরি জাদুঘরটি কিছুটা ভিন্ন। এ জাদুঘর তৈরির পেছনে মূল উদ্দেশ্যই ছিল প্রাচীন গ্রামবাংলার লোকসংস্কৃতির ধারাকে টিকিয়ে রাখা। তাই তো গ্রামীণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত সামগ্রীগুলোকেই সযত্নে স্থান দেওয়া হয়েছে এ জাদুঘরে। এ ছাড়া জাদুঘরে রয়েছে বাংলার সুলতানদের সুবিশাল খাট, তৈজসপত্র, পোশাক, বর্ম, অলংকার ও তরবারিসহ দৈনন্দিন ব্যবহৃত সব ভোগ্যসামগ্রী।
গ্রামবাংলার কারুশিল্পীদের তৈরি কারুশিল্প, হস্তশিল্প ও প্রাচীন বাংলার মুদ্রাসহ প্রাচীন ও মধ্যযুগের লোকশিল্পের হারানো সব নিদর্শন স্থান পেয়েছে। গ্রামীণ নারীদের নকশিকাঁথা বুননের চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে এখানে। এককথায় বলতে গেলে, এখানে খুবই চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আবহমান গ্রামবাংলাকে। গ্রামবাংলার মানুষের দৈনন্দিন কাজ-কর্মের ছবি নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যা দেখে প্রাচীন বাংলার মানুষের গ্রামীণ জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা লাভ করা যায়।
জাদুঘরের ইতিহাস: লোকশিল্প জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন। জাদুঘরটি মূলত শিল্পাচার্যকে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর একটি উপহার। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের খুবই কাছের মানুষ। বঙ্গবন্ধু একদিন শিল্পাচার্যকে বললেন, ‘কতজন আমার কাছে কত কিছু চায়, তুমি তো কিছুই চাইলা না।’ তখন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন বঙ্গবন্ধুকে বললেন, ‘যদি কিছু দিতে হয় তবে আমায় একটা জাদুঘর করে দাও, লোকজ জাদুঘর। যেখানে স্থান পাবে শুধু গ্রামবাংলার ঐতিহ্য।’ সেই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর অনুমতিক্রমে ১৯৭৫ সালে প্রায় ৫৭ একর জমির উপর শিল্পাচার্য গড়ে তোলেন এ লোকজ জাদুঘর।
লোকশিল্প মেলা: লোকশিল্প জাদুঘর ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্প মেলা। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য গভীরভাবে ফুটিয়ে তুলতে গ্রামীণ সংস্কৃতির আদলে তৈরি বাহারি সব তৈজসপত্রের আলোকেই আয়োজন করা হয় এ মেলা। প্রতিবছর বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে বৈশাখ মাসে লোকশিল্প জাদুঘরের পাশেই এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। যদিও এ মেলা শহরের মেলাগুলোর মতো খুব একটা জাঁকজমক হয় না। মেলার আয়োজন সাদামাটা হলেও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় যেন লেগেই থাকে। মেলায় বিক্রি করা হয় বেতের ঝুঁড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, শঙ্খ, মৃৎশিল্প, বাঁশ-বেত, ঝিনুকের মালা, একতারা, দোতারা, বাঁশি, বেতের টুপি, কাঠের পুতুল, মাটির হাঁড়ি, নকশিকাঁথা ও জামদানি শাড়ি প্রভৃতি।
দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য রয়েছে নাগরদোলা, ট্রেন, নৌকা, ট্রয় ট্রেনসহ অনেক কিছু। মেলার বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে বায়োস্কোপ। অনেকের কাছে বাক্সটির গুরুত্ব না থাকলেও বর্তমান প্রজন্মের কাছে বায়োস্কোপ একটি কৌতূহলের বিষয়। ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় বিভিন্ন শিল্প-সামগ্রী ও বিনোদনের পাশাপাশি খাবারের জন্যও রয়েছে বিশাল আয়োজন। গ্রামীণ মেলার মতো এখানেও রয়েছে পুরোনো দিনের দারুণ সব মুখরোচক খাবার। এককথায় গ্রামীণ সংস্কৃতির পুরো অধ্যায়ই যেন ছোট্ট একটি রূপে সাজানো হয়েছে, ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গ্রামবাংলার শত বছরের ঐতিহ্য।
যেভাবে যাবেন: ঢাকার নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলায় অবস্থিত এ জাদুঘর। ঢাকা থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে জাদুঘরের অবস্থান। ঢাকার গুলিস্থান থেকে নির্ধারিত বাসে উঠুন। মনে রাখবেন, আপনাকে নামতে হবে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা। গুলিস্থান থেকে চৌরাস্তা যেতে স্বদেশ, দোয়েল ও বোরাকের এসি বাসে জনপ্রতি ভাড়া যথাক্রমে ৪০, ৪৫ ও ৫০ টাকা। মোগরাপাড়া চৌরাস্তা থেকে যেকোনো ব্যাটারিচালিত অটো কিংবা রিকশাকে বললেই নিয়ে যাবে লোকশিল্প জাদুঘরে। ব্যাটারিচালিত অটোতে গেলে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে মাত্র ১০ টাকা। রিকশায় গেলে গুনতে হবে ৩০ টাকা।

জাদুঘরের সময়সূচি: শীতকালে ১ অক্টোবর থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। গ্রীষ্মকালে ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রধান গেট দিয়ে জাদুঘরে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা।
বিদেশি নাগরিকদের জন্য জনপ্রতি ১০০ টাকা। বড় সর্দার বাড়ির গেট দিয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য নির্ধারিত প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ১০০ টাকা। বিদেশি নাগরিকদের জন্য জনপ্রতি ২০০ টাকা। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হিসেবে বুধবার ও বৃহস্পতিবার জাদুঘরটি বন্ধ থাকে। শিক্ষা সফরে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রধান গেটে ফি বাবদ পরিশোধ করতে হবে ৩০ টাকা। এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত পোশাক অবশ্যই থাকতে হবে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register