Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

ধারাবাহিক গদ্যানুশীলনে গোপা ব্যানার্জি - ২

maro news
ধারাবাহিক গদ্যানুশীলনে গোপা ব্যানার্জি - ২

যৌনতা - ২

শুদ্ধ যখন নবম শ্রেণীর ছাত্র তখন হঠাৎ অফিসে হার্ট অ্যাটাকে মারা যায় শুদ্ধর বাবা। বাবার চাকরিটা মা পেয়ে গিয়েছিলেন ।কারণ শুদ্ধর বয়স তখন কম, চাকরি করার মতন বয়স ছিল না তার। মা চাকরি করছেন একদিকে আরেকদিকে শুদ্ধকে মানুষ করে তোলার চেষ্টায় ব্রতী হয়েছেন।
ছেলে হিসাবে শুদ্ধ নামকরণটা ভীষণ সার্থক । ধীরে ধীরে সে বড় হতে থাকল এবং সবকিছু ভুলে পড়াশোনায় নিজেকে ডুবিয়ে দিলো। তাকে যে মানুষ হতে হবে, ভালো চাকরি করে মায়ের কষ্টটা লাঘব করতেই হবে। এটাই ছিল তাঁর একমাত্র বড় হয়ে ওঠার রসদ। তাই, শুদ্ধ বয়সের সাথে সাথে সুপুরুষ হয়ে উঠলেও তার মেয়েদের দিকে সেরকম কোন নজর ছিল না, বা কোন মেয়েকেই প্রশ্রয় দেয়নি তার জীবনে। সে বুঝতে পারতো স্কুল লাইফ থেকে অনেক মেয়েই তাকে চাইতো বা তাকে ভালোবাসত, কিন্তু সে, সবকিছু উপেখ্যা করে একদিন ইউনিভার্সিটি থেকে ভালো রেজাল্ট করে মাথা উঁচু করে বেরিয়ে মার সামনে দাঁড়ালো হাতে তার ভালো সেলারির এপারমেন্ট লেটার । সেদিন গৌরিদেবী আনন্দের শেষ নেই ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। বললেন শুদ্ধ, আজ আমার মা হওয়া সার্থক হল, কিন্তু এবার আমি তোর বিয়ে দিতে চাই। শুদ্ধ এক গাল হেসে বলল, আমি নিশ্চয়ই বিয়ে করব কিন্তু তার আগে তুমি এবার অফিসে ইস্তফা দিয়ে এসো। আর তোমাকে এই বয়সে অফিস করতে হবে না। এবার তুমি বাড়িতে বসে বিশ্রাম নাও আর তোমার বউমা আনার প্রস্তুতি শুরু করো।
গৌরী দেবী শুধু চোখের জলে নয় আনন্দের জোয়ারেও ভাসতে থাকলেন, আর শুরু হয়ে গেলো সেদিন থেকেই তার মনের মতন বৌমা আনার প্রস্তুতি।
দেখতে দেখতে দেড় বছর কেটে গেল। সেদিনের সেই ফুলশয্যা রাতের নিদারুণ কষ্ট অপমান লজ্জা এখনো ভুলতে পারেনি শুদ্ধ আর তার মা গৌরী দেবী।
ছেলের বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মনে পড়ে যাচ্ছিল গৌরীর, সেই দেড় বছর আগেকার ঘটনা... ভোরের থেকে সানাই বাজছিল । গোটা ঘর ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা। নাই নাই করে সমস্ত আত্মীয়-স্বজন'ই এসেছেন। গৌরিদেবী এ ঘর থেকে ও ঘর ঘুরে বেড়াচ্ছেন বা দৌড়ে বেড়াচ্ছেন বলাটাই ভালো হবে, কারণ আজ যে তার কাঁধে অনেক দায়িত্ব । নিঃশ্বাস নেওয়ার মতন'ও সময় নেই তার হাতে। আজ তার জীবনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। একটু পরে তার শুদ্ধ, বরবেশে বিয়ে করতে রওনা দেবে তারই প্রস্তুতি চলছে।
স্বামীর ছবির দিকে তাকিয়ে গৌরী দেবী আনমনা হয়ে গেলেন, এইতো সেদিন উনি যখন মারা যান তখন শুদ্ধর কত আর বয়স হবে সাত-আট বছর। ওকে বুকে চেপেই লড়াইটা শুরু করেছিলেন গৌরী। সারা জীবন কত ঝড় ঝাপটা মাথায় নিয়ে পার হয়ে এলেন এতোটা রাস্তা। আজকে সেই দিন, সারা জীবনের যুদ্ধের ফলাফলে তিনি জয়ী। চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়লো তার দু'গাল বেয়ে। কথায় বলে মানুষ যা ভাবে ভাগ্য তার বেশিরভাগ সময় বিপরীতেই যায় ।তাই গৌরিদেবী জানতেন না এই মুহূর্তে যাকে জীবন যুদ্ধে জয় মনে হচ্ছে, সেটাই তার ভাগ্যকে কি এক নিদারুণ আঘাত দেবার জন্য তৈরি হচ্ছে। এক একজন মানুষের জন্মই হয় শুধু দেবার জন্য তার ভাগ্যে পাওয়ার কিছু থাকেনা। গৌরী দেবীও সেই ভাগ্য নিয়েই জন্মেছেন। সারা জীবন শুধু লড়াই আর লড়াই।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register