Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

মার্গে অনন্য সম্মান সুমিতা চৌধুরী (সেরার সেরা)

maro news
মার্গে অনন্য সম্মান সুমিতা চৌধুরী (সেরার সেরা)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

পাক্ষিক প্রতিযোগিতা পর্ব - ৩২ বিষয় - সোশ্যাল অ্যাপ বা সাইট

গোধূলি লগন

সদ্য মেয়ের খুলে দেওয়া নতুন fbতে একটি ফ্রেণ্ড রিকোয়েস্ট এলো মাঝবয়সী মৌবনীর একাউন্টে, নাম "মিষ্টি স্বপ্ন"। ছবিটা একটা গোধূলি বিকেলের । মেয়ের শেখানো নিয়মমাফিক মৌ(ডাকনাম), বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে কিনা যাচাই করতে একাউন্টে ঢুকতেই স্ট্যাটাসে লেখা দেখে চমকে গেল," মৌবনে আজও মৌ জমে আছে, স্বপ্নও কথা বলে আজো সকাল সাঁঝে।" সবটা দেখে বহুবছর আগের মতোই মৌয়ের মনে ফের শিহরণ জেগে উঠলো, সাথে খটকাও লাগল । তড়িঘড়ি একাউন্ট্ থেকে বের হয়ে আসার মুহূর্তেই ঐ একাউন্ট্ থেকেই ম্যসেঞ্জারে একটা ডায়রেক্ট ম্যাসাজ ঢুকলো," কি মিষ্টি বিকেল"। মৌ ততোক্ষণে বুঝে গেছে আবারও সে স্বপ্নের ঘোরে মোহাবিষ্ট হতে চলেছে । তাড়াতাড়ি ফোন রেখে নিজেকে শান্ত করতে ছাদে উঠে এলো খোলা হাওয়ায় । আর ঠিক তখনই ফের গোধূলিবেলার কনে দেখা আলোতে হঠাৎই মনটা কেমন উদাস হয়ে ছুটে চলল সেই কিশোরীবেলার কোনো এক এমনই মিষ্টি বিকেলের আবেশের পরশ মাখতে। বয়সটা তখন সবে ষোলো। এক বসন্ত বিকেলের গোধূলি আলোয় টিউশন থেকে ফেরার পথে একসাথে পথ হাঁটতে হাঁটতে স্বপ্ননীল আনমনে বলে উঠেছিল "কি মিষ্টি বিকেল।" কথাটা সামান্য হলেও তার ঘোর লাগা দুটো চোখের অপলক দৃষ্টি আর আবেশমাখা গলায় শিহরণ জাগিয়েছিল মৌবনির মনে। মৌবনির আরক্তিম মুখের দিকে চেয়ে হঠাৎই স্বপ্ননীল তার চিরচেনা অভ্যেসে সুন্দর উদাত্ত গলায় গেয়ে উঠেছিল, "মৌবনে আজ মৌ জমেছে, বৌ কথা কও ডাকে। মৌমাছিরা আর কি দূরে থাকে...."হ্যাঁ, স্বপ্ননীল তার নিজস্ব ডাকনামে "মৌবন" বলেই ডাকত তাকে। টিউশন থেকে মৌবনির বাড়ির পথ খুব অল্পই ছিল । স্বপ্ননীলের অবশ্য আরো খানিক দূর। যেদিন মৌবনি বান্ধবীদের ভিড়ে না ফিরে একলা ফিরতো,সেদিনই হঠাৎ ঐ একটু পথের সঙ্গী হতো স্বপ্ননীল । মৌবনির শান্ত স্বভাব আরো শান্ত হয়ে যেত এক আনমনা স্বপ্নের ঘোরে। হ্যাঁ, স্বপ্ননীলকে সবাই নীল বলে ডাকলেও,মৌ তার মনের ঘরে স্বপ্ন নামেই ডাকতো তাকে। সত্যি স্বপ্নই তো। যখনই স্বপ্ননীল আসতো,এক বেখায়ালি, আনমনা স্বপ্নে ভাসিয়ে নিয়ে যেত তাকে। মৌবনি চুপই থাকতো, স্বপ্নই এক নাগাড়ে কতো কথা বলে যেত। কখনো গান, কখনো কথায় যেন এক স্বপ্নজগতে নিয়ে যেত সে মৌবনিকে। যেন এক মিষ্টি বাতাস ফিসফিসিয়ে কানে কানে তার অনেক গল্প শুনিয়ে যেত। ক্লাস টুয়েল্ভের পর আর দেখা হয়নি একবারও স্বপ্নের সাথে । স্বপ্ন তাকে হাবেভাবে বারবার মনের কথা বললেও,স্পষ্ট করে কখনো কিছু বলে উঠতে পারেনি,স্বল্প সময়ে, স্বল্প পরিধিতে । আর মৌবনির রক্ষণশীল পরিবারের হাজারো বিধিনিষেধ তাকে তার মনের গণ্ডি পেরোতে দেয়নি । শুনেছিল, হঠাৎই অভিভাবকহীন সংসারের হাল ধরতে স্বপ্নকেই অভিভাবক হয়ে উঠতে হয়েছিল খুব দ্রুত । তাই হয়তো স্বপ্নের ঘোর কেটে গিয়েছিল । চলেও যেতে হয়েছিল নাকি অনত্র,দূরে। প্রথম প্রথম মৌবনির ডাগর দুটি চোখ ক্ষণে ক্ষণে ভরে উঠতো অশ্রুজলে। নিঃশব্দে বালিশ ভিজতো রাতের পর রাত। তারপর সময়ের সাথে সাথে মেনে নিতে, মানিয়ে নিতে নিতে এবং পড়াশুনায় ও কাজেকর্মে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে রাখতে একদিন স্বপ্নটা আর ঘন ঘন দেখা দিয়ে মন ভেজাত না। আর স্বপ্ন এলেও ঘোর লাগতো না,ছেঁড়া ছেঁড়া বিবর্ণ, ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল কালের নিয়মে । এরপর বহুবছর কেটে গেছে, আজ ফের যেন সেই স্বপ্নই ঘিরে ধরেছিল তাকে। কিন্তু এখন তো আরো কঠিন গণ্ডিতে আবদ্ধ সে, সেখানে যে স্বপ্ন দেখা বারণ। সম্বিত ফিরে পেয়ে একথাই ভাবছিল আনমনে মৌ। হঠাৎই দূরে কোথাও থেকে ভেসে আসা দুকলি গান " স্বপন যদি মধুর এমন, হোক সে মিছে কল্পনা । জাগিও না আমায় জাগিও না..." মনকে ভিজিয়ে দিয়ে গেল আর গাল বেয়ে অজান্তেই ঝরে পড়লো কয়েকফোঁটা অশ্রুকণা....

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register